ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, বিওএ, বাফুফেসহ বিভিন্ন সংগঠনের শোক

চলে গেলেন সবার প্রিয় বাচ্চু ভাই

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১ জুন ২০১৫

চলে গেলেন সবার  প্রিয় বাচ্চু ভাই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) ও ওয়ারী ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাবেক জনপ্রিয় কলামিস্ট, সদালাপী, আড্ডাপ্রিয়, প্রাণোচ্ছ্বল, বিনয়ী ও সবার প্রিয় সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু আর নেই। রবিবার বিকেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। বাচ্চুর মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিভিন্ন সংগঠন তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। শোক জানিয়েছে দৈনিক জনকণ্ঠ ক্রীড়া পরিবারও। কিডনিসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। গত দুই মাস ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সবার প্রিয় বাচ্চু ভাই। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই নশ্বর মায়ময় পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুর মরদেহ রবিবার সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয় ওয়ারী ক্লাবে। এরপর বাদ এশা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতেই তার মরদেহ নেয়া হয়েছে নিজ জেলা যশোরে। সেখানে আজ সোমবার নিজ এলাকার গোরস্তানে দাফন করা হবে। ১৯৪৫ সালের ২১ অক্টোবর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। তার বাবার নাম মৃত শেখ আব্দুল মোতালিব ও মাতার নাম মৃত নুরজাহান বেগম। সারাজীবন ফুটবলই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। ফুটবল নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে সারাটা জীবন। যে কারণে তিনি থেকেছেন চিরকুমার। জনপ্রিয় এই ক্রীড়া সংগঠক বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ। বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির আজীবন সদস্য সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বতর্মান কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) ও বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সকলের প্রিয় বাচ্চু ভাই আপাদমস্তক খেলাধুলার মানুষ ছিলেন। সদালাপী, প্রাণবন্ত, ব্যতিক্রমী চরিত্রের অনন্য মানুষ ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই ১৯৪৫ সালে তার জন্ম। খেলাধুলা ও সংস্কৃতির উর্বর জনপদ হিসেবে পরিচিত যশোরে জন্ম হয় তার। পড়া শুরু যশোরের সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে মাইকেল মধুসূধন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। খেলাধুলার সঙ্গে বাচ্চুর সম্পৃক্ততা স্কুল জীবন থেকেই। প্রচলিত সব ধরনের খেলাতেই ছিল তার অংশগ্রহণ। পাশাপাশি মঞ্চনাটকে ছিলেন নিয়মিত শিল্পী। পরবর্তীতে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পীও হন। নাটকের চর্চা অব্যাহত রাখেন দীর্ঘদিন। নির্দেশক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। কলেজের ম্যাগাজিনে লেখার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেন লেখালেখির জগতে। সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুর ক্রীড়া বিষয়ক প্রথম লেখা ছাপা হয় তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের খেলার পাতায়। এরপর নিয়মিত লিখেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। এক সময় জনকণ্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ইত্তেফাক, সংবাদ, মিল্লাত, যুগান্তর, সমকাল, মানবজমিন, ইনকিলাব, দৈনিক বাংলা ও আজাদ পত্রিকায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাক্ষিক ক্রীড়াজগতেরও নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। যা ‘বলারাম যা বলে’ শিরোনামে প্রকাশিত হতো। বাংলাদেশের সূচনালগ্নে ক্রীড়াঙ্গনে যেসব স্যুভেনির প্রকাশিত হতো তার সব নেপথ্যে যে ক’জন থাকতেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু তাদের অন্যতম। গুণী এই ক্রীড়াব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দীর্ঘদিনের অনেক সহকর্মী বাচ্চুর মৃত্যুর সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুর মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ শাহেদ রেজা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সব সদস্য ও কর্মকর্তা। বাচ্চুর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোঃ সালাহউদ্দীন, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা, বাফুফের সব কর্মকর্তা আন্তরিক শোক ও তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। আরও শোক জানিয়েছে আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাব, বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভানেত্রী রাফিয়া আখতার ডলী ও সাধারণ সম্পাদিকা কামরুন নাহার ডানা। সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুর মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সভাপতি হাসানউল্লাহ খান রানা, সাধারণ সম্পাদক সনৎ বাবলাসহ নির্বাহী কমিটি ও সমিতির সব সদস্য। শোক জানানো সবাই তার বিদায়ী আত্মার শান্তি কামনা ও মরহুমের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
×