ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোদির সফরে ৫ রুটে দুই দেশের নতুন রেল যোগাযোগ প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ জুন ২০১৫

মোদির সফরে ৫ রুটে দুই দেশের নতুন রেল যোগাযোগ প্রাধান্য পাবে

মশিউর রহমান খান ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে বলে জানা গেছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই শেষ মুহূর্তে এখন ওই সব চুক্তি ও এমওইউ চূড়ান্ত করার কাজ করছে। যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে পররাষ্ট্র ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার রেললাইনের নির্মাণকাজ নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে রেলসূত্র নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। তবে ঢাকা বা খুলনা কোথায় ও কিভাবে উদ্বোধন করা হবে তা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ লাইনটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে। নরেন্দ্র মোদির এ সফরকে রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক মহাসাফল্য হিসেবে দেখছে। তাছাড়া সফরে গুরুত্ব পাচ্ছে ভারত বাংলাদেশ রেলওয়ের নানা উন্নয়ন। উভয় দেশের মাঝে রেল যোগাযোগ বাড়াতে দুই দেশই আন্তরিক। সম্পর্কোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে তার মধ্যে রেলের উন্নয়নে ১২টি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে বলে রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সম্ভাব্য গুরুত্ব পাওয়া ১২ বিষয়ের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে পাঁচটি স্থান দিয়ে নতুন করে রেল যোগাযোগ স্থাপন করার বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মোদির সফরে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন তার একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে নতুন পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১১০০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য চেয়ে একটি চিঠি ভারতের কাছে পাঠিয়েছে। ভারত সরকার তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই শেষে কোন কোন প্রকল্পে কি পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হবে তা পরীক্ষা করছে। যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে রেল খাতের উন্নয়নে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাওয়ার আশা করছে বলে জানা গেছে। মূলত ভারত রেল যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে চায় অপরদিকে বাংলাদেশও নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে এ সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশের স্বার্থে রেলের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে এ নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত যাচাই বাছাই করছে। এর আগে ভারত সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যার কাজ চলমান রয়েছে। রেলসূত্র জানায়, পূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে ভারতের সাহায্যপ্রাপ্ত ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৬৫৮ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার শুধু রেল খাতেই বিনিয়োগ করা হয়। ইতোমধ্যে রেলের অর্থায়নের এসব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি কয়েকটি প্রকল্পের কাজও অতি দ্রুত শেষ হবে বলে রেলসূত্র নিশ্চিত করেছে। ঘোষিত প্রায় সব অর্থ ভারত সরকার ইতোমধ্যে ছাড় করেছে। প্রতিশ্রুত বাকি অর্থ খুব দ্রুত ছাড় করা হবে বলে রেলসূত্র নিশ্চিত করেছে। ভারতের অর্থায়নে রেলের প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ রেলওয়েও বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশ আলোচনায় রেলের যে ১২টি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে আলোচনা চলছে তার মধ্যে রয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের সংস্কার কাজে ভারতের সহায়তা, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কনটেনার সার্ভিস চালু, দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ ও শাহজাদপুর-মহিশ্মশান রেল সংযোগ, চিলাহাটি-চেংড়াবান্ধা রেল সংযোগ, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, ফেনী-বিলোনিয়া রেল যোগাযোগ স্থাপন, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু, বিরল-রাধিকাপুর রেল সংযোগ স্থাপন এবং খুলনা-মংলা রেললাইন সংস্কার কাজে সহায়তার প্রস্তাব। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্পে নতুন ১১শ’ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব নিয়েও অতি গুরুত্বের সঙ্গে দুই দেশের রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ব্রডগেজ ও মিটার গেজ উভয় ধরনের কোচ ও ওয়াগন মেরামতে রেলের প্রধান ভরসা সৈয়দপুর রেল ওয়ার্কশপ। নানা সমস্যায় জর্জরিত এর কার্যক্ষমতা দিনদিন কমে আসছে। রেলের কোচ, ওয়াগন মেরামতে তথা সংস্কারে ওয়ার্কশপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলোর সংস্কার করা হচ্ছে না। ফলে সৈয়দপুর ওয়ার্কশপের যন্ত্রাদির কার্যক্ষমতা দিনদিন কমে আসছে। উপমহাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার রেল খাতের উন্নয়নে ও ত্রিদেশীয় যোগাযোগ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের সৈয়দপুরে রেলপথ ওয়ার্কশপটি প্রতিষ্ঠা করে। যা উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত রেল ওয়ার্কশপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই ওয়ার্কশপটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ভারতের কাছে ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া যাতায়াতের সময় বাঁচাতে ভারতকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর প্রস্তাব দেয়া হবে। এক্ষেত্রে মৈত্রী ট্রেনের যাত্রীদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা এবং কলকাতাতেই ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হবে। বর্তমানে দর্শনা-গেদে সীমান্তে ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে যাত্রীদের অনেক সময় নষ্ট হয়। ভারতকে এ বিষয়ে রাজি করানো গেলে এতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াতের সময়সীমা বর্তমানের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। যাতে উভয় দেশের যাত্রীদেরই সময় ও কর্মঘণ্টা বাঁচবে। দুই দেশের অতিরিক্ত যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার প্রস্তাবও দেয়া হবে। খুলনা থেকে কলকাতায় যেতে বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত দিয়ে সরাসরি দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেন চালু এবং ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। বর্তমানে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল থেকে ট্রেনে কলকাতায় যেতে হলে ঢাকায় আসতে হয়। বরিশাল ও খুলনা থেকে ঢাকায় এসে ট্রেনে উঠতে হলে যাত্রীদের অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি সময়েরও অপচয় হয়।
×