ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিটি কর্পোরেশনে কোন মস্তানি চলবে না ॥ টেন্ডারবাজদের উদ্দেশে মেয়র আনিস

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ জুন ২০১৫

সিটি কর্পোরেশনে কোন মস্তানি চলবে না ॥ টেন্ডারবাজদের উদ্দেশে মেয়র আনিস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্মাণ কাজে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ কর্পোরেশনের যে কোন প্রকার দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে চাকরিচ্যুত করা হবে। এমনকি উক্ত প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে বরখাস্তে দুদক পর্যন্ত যেতে হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। পাশাপাশি টেন্ডারবাজদের মস্তানি ছেড়ে দিয়ে সিটি কর্পোরেশনে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। নইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। রবিবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য, নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাগণ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮ জন সংসদ সদস্য রয়েছে। যাদের প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে মেয়র আলোচনাসাপেক্ষে উক্ত এলাকার সমস্যা নির্ণয় ও সমাধানে কাজ করছেন। এরই অংশ হিসেবে রবিবার এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। টেন্ডারবাজদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনে কোন মস্তানি চলবে না। আমি তাদের ঠেকাব। সিটি কর্পোরেশনকে সত্যিকার অর্থে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ও কর্পোরেশনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী আনিসুল হক বলেন, আমাকে কেউ কোন প্রকার রাজনৈতিক প্রভাবের ভয় দেখাবেন না। আমাকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ইচ্ছাই মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই দুর্নীতি বা কাজে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে চাকরি গেলে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ তা ফেরানোর ক্ষমতা রাখেন না। উপস্থিত সকল শ্রেণীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে তিনি সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে বড় বড় সকল সমস্যা বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ফুটপাথ উচ্ছেদ করারও ঘোষণা দেন। তিনি দীর্ঘদিনের জমে থাকা সমস্যা ও কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম গ্রহণ সম্পর্কে নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের কাছে জানতে চান। সভায় উত্তর সিটির ৬ জন কমিশনার ও সংরক্ষিত আসনের ৩ জন নারী কমিশনারদের কাছ থেকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি মনে করেছিলাম যে, দীর্ঘদিন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল না তাই এত সমস্যা সৃষ্টি হতেই পারে কিন্তু এখন কমিশনারদের কথা শুনে বুঝতে পেরেছি এসব সমস্যার জন্য সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাই দায়ী। তারা আগে থেকে তৎপর হলে সমস্যা এত দীর্ঘ হতো না। এ সময় তিনি কয়েকটি সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঝাড়ুদার যাওয়ার কথা শুনে আনন্দ প্রকাশ করেন ও সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের ধন্যবাদ জানান। ১১নং ওয়ার্ড কমিশনার দেওয়ান আব্দুল মান্নানের অভিযোগে কল্যাণপুর পোড়াবস্তি এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ১৫ জুনের মধ্যে তা করে জানানোর নির্দেশ দেন। আনিসুল হক কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেন, নিয়মের মাঝে কাজ করুন। আমি সৎভাবে কাজ করব। আমি চাই আপনারা আমাকে সহায়তা করবেন। কাউন্সিলররা আমাকে সব সময় কাছে পাবেন। তা দিনে কিংবা রাতে। আমাকে ডাকলেই আমি ছুটে আসব। আমরা দলমত বুঝি না কাজ বুঝি। তাই জোর হাতে অনুরোধ করছি সঠিকভাবে কাজ করুন। প্রত্যেকে এলাকার উন্নয়ন করুন। কাউন্সিলরদের বক্তব্য অনুযায়ী কর্পোরেশনের উন্নয়নে বাধা হিসেবে ঠিকাদারদের কথা আসলে তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের উদ্দেশে বলেন, কোন ব্যবসায়ী লাভই যদি না করতে পারেন তাহলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া দরকার। ঠিকাদারগণ স্বাভাবিক দরে চেয়ে অনেক লেস দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেন অথচ কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। ৪ ইঞ্চির জায়গায় ৩ ইঞ্চি দিয়ে কোন কাজ করলে আমি প্রমাণ করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। টেন্ডারবাজদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখবেন মস্তানি করে কোন উন্নয়ন কাজ পাবেন না। সিটি কর্পোরেশনে কোন প্রকার মস্তানি চলবে না। আর কমিশনাররা চেষ্টার পরও মস্তানদের ঠেকাতে না পারলে আমাকে বলবেন। আমি তাদের সামলাব। প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোন প্রকৌশলী এমনকি চীফ ইঞ্জিনিয়ারও কোন দুর্নীতি করলে ৩ বছর পর হলেও দেশের যে কোন স্থানেই তিনি চাকরিরত থাকুন তার চাকরি থাকবে না। কমিশনারদের কাছে বিভিন্ন প্রকার অভিযোগের কথা শুনে সরকারী সকল সংস্থার সমন্বয় করা অতি প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, নাগরিকদের সুবিধার্থে সিটি কর্পোরেশনকে সকল সেবামূলক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এজন্য আগামী ২ মাসের মধ্যে সকল সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করব। ঢাকাকে ক্লিন ও গ্রীন সিটি করতে উন্নত বিশ্বের ন্যায় মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। এ জন্য তিনি সকলের কাছে আড়াই থেকে ৩ বছর সময় চান। সমস্যা সমাধানে পরবর্তীতে তিনি প্রত্যেক কমিশনারদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলার আশ্বাস দেন। আনিসুল হক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে অব্যবহারিত সরকারী যে কোন সংস্থার জমি খালি থাকলে ৩ কাঠা জমি আছে এমন কমপক্ষে ২টি স্থানের নাম মৌজাসহ তালিকা চান। এছাড়া ক্লিনারদের সঙ্গে ১৫ জুন আলোচনা করার আশ্বাস দেন। সভায় কমিশনাররা কাজ করতে গিয়ে মেয়রের সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে স্বাধীনতা চান। উন্নয়ন কাজে যেন কোন প্রকার বাধা না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে মেয়রের কাছে আবেদন করেন। এছাড়া মিরপুর এলাকার ফুটপাথ দখলের বিরুদ্ধে স্থায়ী উচ্ছেদ, জলাবদ্ধতা দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, রাস্তার বাতি ঠিক করা, কমিশনারদের বসার অফিস তৈরি, কমিউনিটি সেন্টার, পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির আবেদন জানান এবং বিভিন্ন বিষয়ে দাবি তুলে ধরেন। আলোচনা সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন মেয়রের কাছে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামূল হক, সচিব সাঈদ শেখ, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী ফিরোজ রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বিপন কুমার সাহা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ কে এম মাসুদ আহসান প্রমুখ।
×