ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সঙ্গে বাস চলাচল চুক্তি ও প্রটোকলের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২ জুন ২০১৫

ভারতের সঙ্গে বাস চলাচল চুক্তি ও প্রটোকলের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-গুয়াহাটি রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচলে ভারতের সঙ্গে চুক্তি ও প্রটোকল স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা প্রতিবন্ধীদেও প্রতি বিশেষ মনোযোগ ও ঝুঁকিতে থাকা যে কোন বয়সের মানুষকে আমৃত্যু সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা সংক্রান্ত একটি কৌশলের অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ চুক্তি ও প্রটোকলের খসড়া এবং এই কৌশলের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে এ চুক্তি হবে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন এ্যান্ড ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস অন কো-অপারেশন ইন দি ফিল্ড অব স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন এ্যান্ড কনফরমিটি এ্যাসেসমেন্ট’ এর খসড়ায়ও অনুমোদন দেয়া হয় মন্ত্রিসভায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসছেন আগামী ৬ জুন। তার দুই দিনের এ সফরে উভয় দেশের বাণিজ্য সহযোগিতাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি ও আলোচনা হতে পারে বলে দুই দেশের সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। চুক্তি ও প্রটোকল না হলেও এরই মধ্যে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-গুয়াহাটি রুটে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল শুরু হয়েছে। গত ২২ মে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের একটি ২৬ আসনের বাসে ২২ সরকারী কর্মকর্তা গুয়াহাটির পথে রওনা হন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরীক্ষামূলক এ সেবার উদ্বোধন করেন। গতকাল রবিবার সকালে কলকাতার সল্টলেক আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল থেকে ১০ ভারতীয় কর্মকর্তাকে নিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রায় ঢাকার পথে ছেড়ে আসে একটি বাস, যেটি ঢাকা হয়ে আজ মঙ্গলবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পৌঁছাবে। ভারতের সঙ্গে বাস চলাচল বিষয়ক একটি চুক্তি ও দুটি প্রটোকলের খসড়া যে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা, এর আওতায় কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-সিলেট-শিলং-গুয়াহাটি রুটে বাস চলাচল করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ও ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটের জন্য আগেই চুক্তি হয়েছে’। আগে যে কাঠামো অনুসরণ করা হয়েছিল কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-সিলেট-শিলং-গুয়াহাটি রুটের ক্ষেত্রে একই কাঠামো অনুসরণ করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে এ চুক্তি ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ এ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া ফর দ্য রেগুলেশন অব মোটর ভেহিকেল প্যাসেঞ্জার ট্রাফিক বিটুইন টু দ্য কান্ট্রিজ’র আওতায় প্রটোকল দুটি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাস চালাচলের ক্ষেত্রে দু’দেশকে কোন ফি দিতে হবে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রটোকলের মধ্যে এ বিষয়ে কিছু বলা নেই। তিনি বলেন, বাস চলাচলের ফলে দু’দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়বে। এই চুক্তিতে দুই দেশ সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। সবই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে প্রণীত ও গৃহীত হয়েছে। চুক্তির আওতায় দু’দেশে যাতায়াতকারী যানবাহনের রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সনদ, ইন্স্যুরেন্স পলিসির দরকার হবে। বাস পরিচালনাকারী ও বাসের যাত্রীদের পাসপোর্ট ও মাল্টিপল এ্যান্ট্রি ভিসাও থাকতে হবে। বিএসটিআই ও বিআইএস-এর মধ্যে চুক্তি ॥ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও ভারতের ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস)-এর মধ্যে একটি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। চুক্তির আওতায় এ দুইটি মান সংস্থা একে অপরের পণ্যের মান সংক্রান্ত সনদের স্বীকৃতি দেবে। দুইপক্ষ আমদানি-রফতানি পণ্যের মান পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে। মান সংস্থাগুলো পণ্যের মান ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে সমঞ্জস্যতা আনবে। এছাড়া পরস্পর প্রতিবেদনও করবে সংস্থা দুটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তির জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত মে মাসে দুই দেশ চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে এবং চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ॥ প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ ও ঝুঁকিতে থাকা যে কোন বয়সের মানুষকে আমৃত্যু সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা সংক্রান্ত একটি কৌশলের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মাদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের যেসব খাতে ব্যাপক সাফল্য আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ খরচ হয়। সামাজিক নিরাপত্তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, গত এপ্রিল মাসে খসড়াটি মন্ত্রিসভায় এলে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণের আলোকে ‘গাইডলাইন্স অব সেন্ট্রাল মনিটরিং কমিটি অন সোশ্যাল সেফটিনেস প্রোগ্রাম’র আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিক বিভাগ সংশোধন করেছে। মন্ত্রিসভা এবারও দুই-একটা নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করার শর্তে অনুমোদন দেয়া হয়। ২৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ বর্তমানে ১৪৫টি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এজন্য সমন্বয়ের জন্য কেন্দ্রীয় পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কারণে একটা স্ট্র্যাটেজি থাকা দরকার। কৌশলপত্রের আলোকে ভবিষৎ পরিকল্পনা করবে। তিনি বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে। কিন্তু সবাইকে আনা তো সম্ভব নয়। ঝুঁকিপূর্ণ কোন বয়সের মানুষ, দারিদ্র্য, অতি দারিদ্র্য ব্যক্তি যেন যে কোন কর্মসূচীর মধ্যে আসে সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। যে বয়সেরই হোক না কেন তার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলে, প্রতিবন্ধীরা সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের থেকে বেশি বরাদ্দ পাবেন। বৈঠকে বিগত বছরের তথ্যগুলো হালনাগাদ করারও নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, আলোচনার সময় একজন মন্ত্রী অধিক জনসখ্যার বিষয়ে আলোচনা তুললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা কোন সমস্যা নয়। এ কথা বলবেন না। জনসংখ্যা সম্পদ।
×