ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভাসমান রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অবসানের লক্ষণ দৃশ্যমান নয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ জুন ২০১৫

ভাসমান রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অবসানের লক্ষণ দৃশ্যমান নয়

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাগরের মানবপাচার রুটে মৃত্যু ফাঁদ, বন্দীশিবির গণকবরের রোমহর্ষক ঘটনাবলী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক হৈ চৈ সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত ফলাফল শূন্যই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার দেশান্তরী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ থেকে দরিদ্র শ্রেণীর কিছু লোকজন অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশী হতে গিয়ে তাদের ভাগ্যে জুটেছে করুণ পরিণতি। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দিনের পর দিন রোহিঙ্গা মুসলমানদের অত্যাচারে, নিপীড়নে এবং এর পাশাপাশি গণহত্যা চালিয়ে যে বর্বরতার জন্ম দিয়েছে তা জাতিসংঘকে পর্যন্ত নাড়া দিলেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রীতিমত এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর হয়ে আন্দামান সাগরে পৌঁছে যাওয়া কয়েক হাজার অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীর ভাগ্যে এখন কি ঘটেছে তা অজানাই থেকে গেছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানে এদের অধিকাংশকে এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান হয়েছে অধিকাংশ রোহিঙ্গা সঙ্গে কিছু বাংলাদেশী নাগরিকদের। এছাড়া থাইল্যান্ডে দু’দফায় উদ্ধার হয়েছে ৯৩৫ অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশী। প্রথম দফায় উদ্ধারকৃত ২০৮ জনকে উখিয়া সংলগ্ন থাই সীমান্তের ওপারে এনে একটি সামরিক ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় উদ্ধারকৃত ৭২৭ জনকে রাখা হয়েছে অন্যত্র। যেখানে সাংবাদিকসহ আগ্রহী কাউকে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। সাহস করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের যেসব কর্মীরা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের সে দেশের নৌবাহিনী ফিরিয়ে দিয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম। এর আগে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যে ১৭ দেশীয় আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিত্বকারীরা তাদের যে মনোভাব ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে তাতে আন্দামান সাগরে ভাসমান মানবতার প্রতি সামান্যতম করুণা প্রদর্শন করা হয়নি। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে আবিষ্কৃত বন্দীশিবির ও গণকবর যা রীতিমত বধ্যভূমিতে রূপ নিয়েছে তা নিয়ে কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত মিলেনি। তবে বলা হয়েছে মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার যে অঞ্চলে এ গণকবর ও বন্দীশিবির আবিষ্কৃত হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয়, কমপক্ষে গেল ৫ বছর ধরে এ অবৈধ মানববাণিজ্য চলে আসছে। মালয়েশিয়ায় গিয়ে অর্থ উপার্জনের লোভে ফেলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও কিছু বাংলাদেশীকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বন্দীশিবিরে আটকে রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তা সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে উদ্বিগ্ন করেছে সত্য, কিন্তু যারা ইতোমধ্যে সাগরে ডুবে মরেছে, বন্দীশিবিরে নির্যাতনে প্রাণ হারিয়ে গণকবরের বাসিন্দা হয়েছে তাদের স্বজনদের বাকি জীবন অশ্রুজলেই কাটাতে হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা দেশান্তরী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে সে দেশের সরকারের পক্ষে নিপীড়ন, নির্যাতনকে মদদ দেয়ার কারণে। আর বাংলাদেশীদের ক্ষুদ্র একটি অংশ অধিক আর্থিক উপার্জনের লোভে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সহযোগী হয়েছে। ভয়ঙ্কর সমুদ্র পথে নিজেরা পাচারকারীদের কাছে নিজেদের সঁপে দিয়েছে অনিশ্চিত যাত্রায়। এতে কেউ সফল হয়েছে। কেউ মাঝপথে সাগরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে। কেউ মালয়েশিয়া পৌঁছার আগেই থাই বন্দীশিবিরে আটকা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে গণকবরের বাসিন্দা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে যেসব বাংলাদেশী এখনও নিখোঁজ রয়েছে তাদের সঠিক সংখ্যা কারও জানা নেই। এমন নিখোঁজ বাংলাদেশীদের সন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে এশিয়া অভিবাসী বিষয়ক বেসরকারী সংস্থাগুলোর জোট কারাম এশিয়া। তাদের সহযোগিতা করবে দেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্র্যাক, অকূপসহ বিভিন্ন সংগঠন। কারাম এশিয়ার পক্ষ থেকে সোমবার প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে যেসব নাগরিক মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড বা অন্য যে কোন দেশের উদ্দেশে যাত্রা করে নিখোঁজ রয়েছে আশ্রয় শিবিরে স্থান হয়েছে, কারাগারে আটকা পড়েছে বা ইতোমধ্যে মারা গেছে এমন হতভাগ্যদের পরিবার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতিজনদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
×