ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোল মিসের মাসুল দিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৪ জুন ২০১৫

গোল মিসের মাসুল দিল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুর্দান্ত শুরু এবং শুরুতেই গোল করে এগিয়ে যাওয়া, তারপর ধীরে ধীরে আত্মতুষ্টি নামের ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, কোচের নির্দেশ ভুলে গিয়ে ডিফেন্সিভ খেলা এবং খেলা শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গোল হজম করা ... এই হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের বর্তমান সময়ের চালচিত্র। মঙ্গলবার ঠিক এমনভাবেই খেলেছে তারা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান দলের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে হতাশায় পুড়লো তারা। এ ম্যাচে জিততে পারলে আফগানদের বিপক্ষে ৩৬ বছর পর আবারও জয়ের দেখা পেতে পারত স্বাগতিক বাংলাদেশ। কিন্তু ৯০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও ইনজুরি টাইমে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের অমনোযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে (৯০+৪) বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে জালে বল পাঠান আফগান মিডফিল্ডার ইসমত সানওয়ারি (১-১)। খেলা শেষ বাঁশি বাজালে একরাশ আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় মামুনুলবাহিনীকে। অথচ ম্যাচ শুরুর মাত্র ৪ মিনিটেই কাক্সিক্ষত গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত থেকে মামুনুলের ফ্রি কিকে দুর্দান্ত হেডে আফগানদের জালে বল পাঠান ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি। তবে ড্র করলেও আরেকটা বিষয় কিছুটা চিত্তসুখ পেতেই পারে লোডিভিক ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। কেননা, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দল, এমনকি অনুর্ধ-২৩ দলের বিপক্ষেও একটিও জয়ের মুখ দেখেনি ‘দ্য লায়ন্স অব খোরাসান’ খ্যাত আফগানিস্তান। শেষ সময় এসে গোল খেয়ে হারা বা ড্র করাটা যেন বাংলাদেশ দলের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেন দলের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, ‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্য নয়, এটি আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালের মতো এ ম্যাচেও আমরা শেষ সময় গোল খেয়েছি।’ যার গোলে আফগানরা ম্যাচে সমতায় ফেরে, ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ ক্রুইফ বলেন, ‘ইসমত আমার সাবেক ছাত্র। তার গোল আমার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে!’ ক্রুইফ আরও বলেন, ‘আমি আমার খেলোয়াড়দের খেলায় সন্তুষ্ট নই। ম্যাচটি আমরা জিততে পারতাম। তবে ম্যাচটি খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। যদিও মাঠ ছিল খেলার অযোগ্য। তাই খেলোয়াড়দের বলেছিলাম লম্বা পাসে খেলতে। আমরা প্রথমার্ধের ২৬-২৭ মিনিট পর্যন্ত ভাল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে তার উল্টোটি খেলেছি। তাই লিড ধরে রাখতে পারিনি। তারপরও ইতিবাচক দিক হলো দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলাম। এ ম্যাচের ভুল শুধরে ৮-৯ দিন পর এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ভাল খেলতে চাই। কিরগিজস্তানের সঙ্গে ওই ম্যাচের আগে জয় পেলে আমাদের জন্য পজেটিভ হতে পারত। তবে এটাই ফুটবল!’ তবে আফগান দলের জার্মান কোচ (যুগোসøাভিয়ান বংশোদ্ভূত) সø্যাভেন স্কেলেজিচ বলেন, ‘ম্যাচটি ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ভাল খেলেছে, দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভাল খেলেছি। বাংলাদেশের রক্ষণভাগ বেশ ভাল খেলেছে, শুধু ওই গোলটা ছাড়া। ম্যাচে ড্র করে আমরা বেশ খুশি। তবে এ ধরনের প্রীতি ম্যাচে স্বাগতিক দেশের রেফারি দেয়া ঠিক না।’ আগামী ১১ জুন কিরগিজিস্তান এবং ১৬ জুন তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে ঢাকায় ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব ও ২০১৯ সংযুক্ত আরব আমিরাত এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সেই ম্যাচ দুটি খেলার আগে সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তান জাতীয় দলের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তারই অগ্রধাপ হিসেবে গত ৩০ মে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে প্রথম প্রস্ততি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সে ম্যাচে ১-২ গোলে হারে স্বাগতিক দল। পরবর্তী প্রতিপক্ষ কিরগিজস্তান সম্পর্কে মামুনুলের মূল্যায়ন, ‘ওরা হয় আফগানিস্তান-সিঙ্গাপুরের সমমানের দল, নয় তো ওদের চেয়ে পিছিয়ে।’ এখন দেখার বিষয়, আগামী ১১ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে অন্তিম মুহূর্তে গোল খেয়ে সর্বনাশে পতিত হয়ে আবারও পুরনো রোগের পুনরাবৃত্তি করে কি না ক্রুইফের শিষ্যরা।
×