ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফিফার পরবর্তী সভাপতি দৌড়ে এগিয়ে প্লাতিনি!

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৪ জুন ২০১৫

ফিফার পরবর্তী সভাপতি দৌড়ে এগিয়ে প্লাতিনি!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা) থেকে সেপ ব্লাটার যুগের অবসান হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ফিফার সভাপতি পদে থাকা এই সুইস মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে ফিফায় প্রায় দেড় যুগের (১৭ বছর) রাজত্ব শেষ হয়েছে ব্লাটারের। তার এই সিদ্ধান্তের পর এখন আলোচনা পরবর্তী সভাপতি কে হচ্ছেন এটা নিয়ে। নতুন সভাপতি নির্বাচনে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে বিশেষ ফিফা কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই নির্বাচিত হবেন নতুন কর্তা। ওই লড়াইয়ে কারা অবতীর্ণ হবেন সেটাই এ মুহূর্তে আলোচনার এক নম্বরে। এক্ষেত্রে শীর্ষ নাম মিশেল প্লাতিনি। ফরাসী গ্রেট ছাড়াও নাম শোনা যাচ্ছে জর্দানের প্রিন্স আলী বিন আল-হুসেইন, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার জিকো, এমনকি আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনার। দুর্নীতির দায়ে ফিফা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রেড-এ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। আর এ কারণে পরবর্তী দুই বিশ্বকাপের (২০১৮ ও ২০২২) স্বাগতিকের মর্যাদা হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে রাশিয়া ও কাতারের। নিদারুণ এই দুঃসময়ে ব্লাটারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ব্রাজিলের কালো মানিক পেলে। ফিফার ১১১ বছরের ইতিহাসে ব্লাটার হচ্ছেন সংস্থাটির অষ্টম সভাপতি। তার আগে আরও সাতজন এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, এই আটজনের মধ্যে মাত্র তিনজন গত ৫৪ বছরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্লাটারের ১৭ বছরের রাজত্বকালের চেয়েও দীর্ঘ ছিল ব্রাজিলীয় সভাপতি জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জের দায়িত্বকাল। হ্যাভেলাঞ্জ ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ফিফা প্রধান ছিলেন। হ্যাভেলাঞ্জের পর ১৯৯৮ সালে ফিফার অষ্টম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব হাতে নেন ব্লাটার। কিন্তু তার বিদায়টা হলো বিতর্কের মধ্য দিয়ে। এই মুহূর্তে ব্লাটারের উত্তরসূরি হিসেবে প্লাতিনির নামই বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। ফরাসী এই কিংবদন্তি ফুটবলার উয়েফার সভাপতি পদে অনেক দিন ধরেই সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। প্লাতিনির সঙ্গে আলোচনায় আছেন ব্রাজিলীয় ফুটবল গ্রেট জিকোর নাম। ব্লাটার পদত্যাগ করার পরপরই তিনি সভাপতি পদে লড়াই করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তিনটি বিশ্বকাপ খেলা এই কিংবদন্তি ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন নিজ দেশ ব্রাজিলেও। জাপান, তুরস্ক, রাশিয়া, গ্রিস ও ইরাকে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নিজের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়। প্লাতিনি ও জিকোর পাশাপাশি কয়েকটি নাম শোনা যাচ্ছে। এই মিছিলে আছেন এবারের ফিফা সভাপতি নির্বাচনে ব্লাটারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জর্দানের প্রিন্স আলী। আছে দুই ফরাসী জেরোমে শ্যাম্পেইন ও জেরোমে ভালকের নামও। এছাড়া জার্মানির উলফগ্যাং নিয়েরশব্যাচ ও ইতালির ডোমেনিকো স্কালাও লড়াই করতে পারেন ফিফার নতুন সভাপতি পদে। তবে সবচেয়ে আলোচিত নাম দিয়াগো ম্যারাডোনা। ব্লাটারর ঘোর বিরোধী আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিও ফিফা সভাপতি পদে নির্বাচন করতে পারেন বলে চাউর হয়েছে। আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতানো এই তারকাকে ফিফা সভাপতি পদে দেখতে চেয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি দিয়াগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা বা তার মতো কারও হওয়া উচিত। এসব বিতর্কের মধ্যেও ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে বলেছেন, ফুটবলের জন্য ব্ল্যাটারের মতো একজন ‘দক্ষ’ ব্যক্তির প্রয়োজন। সাংবাদিকদের পেলে বলেন, ফিফা নির্বাচনে আমি ব্লাটারের পক্ষে ছিলাম। আমাদের এমনই একজন দক্ষ মানুষ দরকার। তার পদত্যাগ দুঃখজনক। ফিফা থেকে পদত্যাগ করলেও ঝামেলা শেষ হচ্ছে না ব্লাটার এ্যান্ড গংদের। তাদের এবার ইন্টারপোলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফিফা কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে ‘রেড-এ্যালার্ট’ জারি করেছে ইন্টারপোল। বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি আর দুর্নীতির কারিগর ব্লাটারকে এখনই আটক না করলেও ইন্টারপোল রেড-এ্যালার্ট জারি করেছে ফিফার ছয় শীর্ষকর্তাদের বিরুদ্ধে। এই তালিকায় আছেন ফিফার সাবেক সহ-সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নার, ফিফার নির্বাহী কমিটির সদস্য প্যারাগুয়ের নিকোলাজ লিওজ, আর্জেন্টিনার আলেজান্দ্রো বুরজাকো, হুগো জিনকিস, মারিনাও জিনকিস ও ব্রাজিলের জোশে মারগুলিয়েস। ইন্টারপোল থেকে জানানো হয়, চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে ‘আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা’ পাঠানো হয়েছে। ব্লাটারের পদত্যাগের কারণে ২০১৮ সালে রাশিয়া ও ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ বিশ্বকাপ চেয়েছিল ইংল্যান্ড, ২০২২ বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের দুই রাজনৈতিক পরাশক্তির দেশ। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে তারা হেরে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে বিতর্ক সৃষ্টি হয় ব্লাটারের নেতৃত্ব ফিফার ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা ভোট কেনাবেচা করে রাশিয়া ও কাতারকে আয়োজকের মর্যাদা দিয়েছে।
×