ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির ঢাকা সফর এবং বিএনপি-জামায়াতের প্রতিক্রিয়া- ভূতের মুখে রাম নাম

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৫ জুন ২০১৫

মোদির ঢাকা সফর এবং বিএনপি-জামায়াতের প্রতিক্রিয়া- ভূতের মুখে রাম নাম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৬ জুন দুই দিনের সরকারী সফরে বাংলাদেশে আসছেন। সরকারী কর্মকর্তা ছাড়াও তাঁর সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একটি বড় প্রতিনিধি দল থাকবে। বাংলাদেশের সরকারী মহল এবং সরকারবিরোধী মহল যুগপৎভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় গত কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে বিস্তর আশাবাদের কথা বলা হচ্ছে। চল্লিশ বছর ধরে ঝুলে থাকা মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি মোদি সরকারের বিশেষ আগ্রহ ও উদ্যোগে ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে বাংলাদেশের আমজনতার আগ্রহ যেমন আকাশ ছুঁয়েছে- অন্ধ ভারত-বিদ্বেষীরাও তাকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত-বিদ্বেষ একটি মৌলিক উপাদান, যার সূচনা হয়েছে এই দেশটির জন্মকালে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ কখনও মাত্র নয় মাসে দখলদার পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর মতো দক্ষ, সুসজ্জিত ও নৃশংস প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে পারত না, যদি না ভারতের সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ বাংলাদেশের প্রতি নজিরবিহীন সমর্থনের হাত প্রসারিত করত। আমেরিকা ও চীনের মতো পরাশক্তি, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং তথাকথিত ইসলামী উম্মাহর প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের বিপন্ন ও মুক্তিকামী মানুষকে সমর্থন করতে গিয়ে প্রচ- ঝুঁকি নিয়েছিলেন। যে সঙ্কট তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল সেটি তিনি অতুলনীয় মেধা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শিতার দ্বারা মোকাবেলা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার, মুক্তিবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ সব সময় গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তা স্মরণ করবে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, স্বাধীনতা লাভের পর গত ৪৪ বছরে এই দেশটি অধিকাংশ সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানপন্থীদের দ্বারা। ’৭১ সালে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন ছিল পাকিস্তানের সামরিক জান্তা এবং মূলধারার রাজনীতিবিদদের বিবেচনায় ভারতের পাকিস্তান ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রের অংশ। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা নৃশংস গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকালে বাংলাদেশে সহযোগী হিসেবে পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনৈতিক দলকে, যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও ইসলাম রক্ষার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর স্বাধীন বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে জামায়াত এবং তাদের সহযোগীদের ভাষায় তা ছিল ‘ভারতের তাঁবেদার’ বা ‘পুতুল সরকার।’ ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ২৫ বছর মেয়াদী মৈত্রীচুক্তি থেকে আরম্ভ করে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তিÑ সবই ছিল তাদের ভাষায় ‘গোলামির চুক্তি।’ ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সংক্ষুব্ধ পাহাড়ীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে কয়েক যুগ বিস্তৃত ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছিলেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন এই চুক্তির ফলে নাকি বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হয়ে গেছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত যে কুৎসিত সাম্প্রদায়িক প্রচারে আশ্রয় গ্রহণ করে তার অন্যতম হচ্ছে- ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারতের অংশ হয়ে যাবে।’ পাকিস্তান আমলে উত্তর-পূর্ব ভারতের বৈরী নাগা-মিজোদের বাংলাদেশের মাটিতে সামরিক প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান ছিল সরকারের মৌলিক নীতির অন্তর্গত। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সব সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে তাদের নেতাদের গ্রেফতার করেছে, বাকিদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। যে কারণে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে শেখ হাসিনা তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী মনে করেন, পক্ষান্তরে খালেদা জিয়া মনে করেন তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাংলাদেশের মাটিতে বসে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীদের ভারত ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করতে না দেয়াটা শেখ হাসিনার সরকারের শুধু পররাষ্ট্রনীতির বিষয় নয়, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্ত। অথচ বিএনপি-জামায়াত সব সময় বলেছে ভারতকে তোয়াজ করবার জন্য নাকি শেখ হাসিনা অনুপ চেটিয়াদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশে তাদের যাবতীয় তৎপরতা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের ভাষায় তা নাকি শেখ হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতির অন্তর্গত। এহেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভারত-বিদ্বেষ যাদের শরীরের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত, তারা নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে গিয়ে আকাশে ওড়া ঘুড়ির মতো একশ’ আশি ডিগ্রী গোত্তা খেয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষণিকের সাক্ষাতলাভের জন্য দিল্লীতে পর্যন্ত দেনদরবার করছেন। তার দলের নেতারা বার বার বিবৃতি দিয়ে বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকায় স্বাগত জানাবার জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন। মোদি ও ভারত বন্দনায় বিএনপিকেও ছাড়িয়ে গেছে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকে জামায়াতে ইসলামী যে কদর্য ভাষায় ভারতের প্রতি বিষোদগার করছে সেগুলো একত্র করলে কালীসিঙ্গির মহাভারতের আয়তন ছাড়িয়ে যাবে। অথচ জামায়াতের দলীয় মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’-এ ২ জুন (২০১৫) প্রকাশিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে অভিনন্দন জানিয়ে জামায়াতের দীর্ঘ বিবৃতি। দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এই বিবৃতিতে বলেছেন- ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ কয়েকটি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীগণ আগামী ৬ ও ৭ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তিনি তাদের এ সফরকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে বিরাজমান সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে বাংলাদেশের জনগণ আশা করে।... ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের ফলে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। এ সফর দু’দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে এবং প্রতিবেশী দুটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ নিজ নিজ স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।’ বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ভারত-বিদ্বেষী রাজনীতির অসহায় শিকার এ দেশে নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়। জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও যখনই ভারতে কোন সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তখনই জামায়াত-বিএনপির ক্যাডাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে হিন্দুদের ওপর। এই হামলার জন্য অজুহাত সব সময় তৈরিই থাকে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ’৭১-এর গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ঢাকার ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষে ২৮ সাক্ষীর ভেতর মাত্র ২ জন ছিলেন ধর্মীয় পরিচয়ে হিন্দু। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের হিন্দুরা কী ভয়ঙ্কর হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তা ইতিহাসের অন্তর্গত। সাঈদীর মামলায় কেন ২ জন হিন্দু সাক্ষ্য দিয়েছেন এর জন্য বাংলাদেশের সব হিন্দুকে দায়ী করে সেদিনই জামায়াতের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল- ‘তোদের সাক্ষীর কারণে সাঈদী হুজুরের ফাঁসি হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা কোন হিন্দু রাখব না। সব হিন্দুকে ভারতে পাঠিয়ে দেব।’ ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে ও পরে প্রায় ৩ লাখ হিন্দুকে দেশছাড়া করেছিল জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। তাদের ‘অপরাধ’ ছিল তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলেন। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে সেবার জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রায় ৭০ ভাগ হিন্দু ভোট প্রদানে বিরত ছিলেন। এতদিন পর বিএনপি-জামায়াত মনে করছে ভারতকে অসন্তুষ্ট করে বাংলাদেশে আগামীতে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। খালেদা জিয়া ২০১২ সালে দিল্লী গিয়ে বলেও এসেছেন অতীতে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় দিয়ে যে ভুল করেছেন ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি হবে না। অথচ পরের বছরই ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে নির্ধারিত সাক্ষাতে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করেননি জামায়াতের ডাকা হরতালের অজুহাতে। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সাক্ষাতের জন্য দলের নেতারা মুক্তকচ্ছ হয়ে দৌড়ঝাঁপ করলেও দিল্লী থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ২ জুন ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর ঢাকা সফরের সময় তার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সাক্ষাত না করায় এখনও ক্ষোভ কাটেনি নয়াদিল্লীর পররাষ্ট্রনীতির নিয়ন্ত্রক সাউথ ব্লকের। সে ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও দিল্লীর সঙ্গে এখনও বরফ গলেনি বিএনপির। উন্নতি হয়নি সম্পর্কের। ‘নয়াদিল্লীর পররাষ্ট্র দফতর সাউথ ব্লকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন নয়াদিল্লী সফরে গিয়েছিলেন তখন তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। কোন বিরোধীদলীয় নেতা এ ধরনের সংবর্ধনা পান না। তারপরও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে শুধু লালগালিচা সংবর্ধনা নয়, তাকে রাখা হয়েছিল হায়দরাবাদ হাউসে, নিরাপত্তায় দেয়া হয় ব্ল্যাকক্যাট; চার্টার্ড প্লেনে পাঠানো হয় জয়পুর হয়ে আগ্রায়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সব শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। এর বিপরীতে মাত্র কয়েক মাস পর ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী যখন ঢাকায় আসেন তখন জামায়াতে ইসলামীর হরতালের অজুহাত দেখিয়ে সাক্ষাত থেকে বিরত থাকেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। সাউথ ব্লকের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রণব মুখার্জী কোন ব্যক্তি বা দল নন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি। তাকে অপমান করা মানে ভারতের পুরো প্রশাসনকে অপমান করা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভারতে নেই। তাই ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে ঘটনাকে ভালভাবে নেননি। একে নেতিবাচক হিসেবে নিয়েই বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন মোদি। যে কারণে বিএনপি বার বার চেষ্টা করেও কার্যকর সাড়া পাচ্ছে না দিল্লীর পক্ষ থেকে।’ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকার সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সৌহার্দ্যরে সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবিস্মরণীয় অবদানকে। জামায়াত-বিএনপির অবস্থান হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। ১৯৭১ সাল থেকে জামায়াত ভারতকে দায়ী করছে পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে দেখা না করে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলের নেতা এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভারতকে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের চেয়ে বড় হচ্ছে জামায়াতের সঙ্গে তার হার্দিক সম্পর্ক। জামায়াতপ্রেম ও ভারত-বিদ্বেষের যে বিষ তার ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে, যা তার দল এবং রাজনীতিকেও শেষ করে দিচ্ছে তার হাত থেকে পরিত্রাণের পথ তার বা দলের হাতে নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অনুগামিতার সহস্র সূত্রে বাঁধা বিএনপি কখনও ভারতকে বন্ধু ভাবতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থনের ক্ষেত্রে ভারত কতদূর যেতে পারে ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দিল্লী সফরের সময় আমরা দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরের প্রাক্কালে দিল্লী নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার আরেক যোগ্যতার পরিচয় পেয়েছে। অন্তরে যাই থাক, প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াত যে ভারত-মোদি বন্দনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে এর সিংহভাগ কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ’৭১-এর পরাজিত পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এখন রামনামের সঙ্গে মোদিনাম জপ করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। এতকাল বিএনপি-জামায়াত শেখ হাসিনাকে উপহাস করে ‘রামপন্থী’ বলেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একদিন আগে ঢাকা সফরে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রেল চলাচল বা ছিটমহল বিনিময় নিয়ে তিনি যাই বলুন না কেন তিস্তা চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক কিছু না বললে ঢাকার গণমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যোগ্য স্থান পাবেন বলে মনে হয় না। তিস্তা চুক্তি ছাড়াও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন, ট্রানজিট, বিদ্যুত, অভিন্ন নদীর জলবণ্টন এবং সর্বোপরি জঙ্গীসন্ত্রাস মোকাবেলার বিষয় নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবার সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবেন, যেখানে মমতার কোন ভূমিকা নেই। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়েই বলেছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে তিনি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। আমরা গভীর আগ্রহের সঙ্গে তা প্রত্যক্ষ করবার জন্য অপেক্ষা করছি। ৪ জুন ২০১৫
×