ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জনও অযৌক্তিক নয় ॥ ড. খলীকুজ্জমান

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ জুন ২০১৫

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জনও অযৌক্তিক নয় ॥ ড. খলীকুজ্জমান

জসিম উদ্দিন ॥ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এই বাজেটে আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জনকে তিনি যৌক্তিক বলে মনে করেন। তবে তা আরও বাড়তে পারে। এজন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবার আগে প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তাহলে ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়বে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এবারের বাজেট অত্যন্ত স্বস্তিকর অবস্থা থেকে দেয়া হচ্ছে। যেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি এখনই আছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থা না থাকলে তা ৭ শতাংশও হতে পারত বলে মনে করেন তিনি। অতীতে অন্যান্য বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। গ্রামীণ অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা রয়েছে। যেখানে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য আছে। এখন খানিকটা রফতানি করার সুযোগ পেয়েছি আমরা। এছাড়া সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এই মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের পরিমাণ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মূল্যস্ফীতি। বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়লে তা আরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বৈদেশিক লেনদেন ও এই মুহূর্তে ভারসাম্যপূর্ণ। দেশে দারিদ্র্যের হার ও অতি দারিদ্র্যের হার কমেছে। বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমেছে। সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় হলো ৪৩ বছর পর ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী। এতে করে আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। পাশাপাশি উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। এতসব ইতিবাচক অবস্থানে থাকার পরও তিনি দুর্নীতির ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীতা তুলে ধরে তিনি বলেন, কোন প্রকল্প শুরু করার আগে এদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতা দূর করা দরকার। কারণ অতীতের বাজেটগুলোতে দেখা গেছে প্রথম দুই-তিন মাসে ১০ বা ১২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয় না। যদিও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে অর্থবছরের প্রথমদিন থেকে কাজ শুরু করলে সংশোধিত বাজেটের শতভাগ বা মূল বাজেটের ৯৫ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গ্রাম-গঞ্জে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ব্যাপক হারে তৈরি করতে হবে বলে মত দেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বিশেষ করে ১ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে যারা শুরু করতে চান এমন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এদের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে এসব উদ্যোক্তারা নিজের মুনাফার পাশাপাশি ৫-৭ জনের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। এর সুফল হিসেবে তিনটি বিষয় অর্জন হবে বলে মনে করেন তিনি। তা হলো- মাথাপিছু আয় বাড়বে; ধনী দরিদ্র বৈষম্য কমবে ও প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়তে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরী। রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক না হলে ব্যক্তি বিনিয়োগ আসবে না। এছাড়া এজন্য অবকাঠামো সুবিধাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের প্রকল্প পাস হয় ২০০৬ সালে, কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে আর ২০১৫ সালে এসেও শেষ হয় না। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর অতিদরিদ্র ২৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে কমে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিদরিদ্র নিরসনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানূষের সমস্যার ধরন ভিন্ন ভিন্ন। এদের প্রত্যেকের দিকে আলাদা করে নজর দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের দলিত সম্প্রদায় আর হাওড় অঞ্চলের অতিদরিদ্রের সমস্যার ধরন একেবারে আলাদা। যদি এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় হয় তবে কয়েক বছরের মধ্যে অতিদরিদ্র নির্মূল সম্ভব বলে মনে করেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের এই চেয়ারম্যান। তবে এরই সঙ্গে বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে। এর প্রভাব ও অভিঘাতে দরিদ্র থেকে কেউ অতি দরিদ্র হচ্ছে। কেউ নিঃস্ব হচ্ছে। যে কখনও দরিদ্র ছিল না সেই ব্যক্তিও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অতি দরিদ্র হচ্ছে। আমাদের একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। বৈশ্বিকভাবে এর সমাধান হওয়া উচিত। দাতার যে অর্থ দিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করতে আন্তর্জাতিকভাবে সবার একযোগে কাজ করতে হবে। দরিদ্রতা দূর করতে সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকার একটা বড় কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যাদের শিক্ষা নাই তাদেরও এই প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত। এতে করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে। এসব তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করছে। এটা শুধু দেশের কর্মস্থানের জন্য নয়। বিদেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এছাড়া সমাজের একটা বড় অংশ নারী। তাদের মূলধারায় আসার সুযোগ দিতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নারীর অংশ গ্রহণের অনুপাত বাড়লেও উচ্চ শিক্ষায় তাদের অংশ গ্রহণ তেমন বাড়েনি। এখানে পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টা জড়িত। এটা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেটের নারীদের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে নারী বাজেট দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এবারের বাজেটে শিশুদের জন্য পৃথক বাজেট দেয়া হচ্ছে এটা ইতিবাচক দিক। এই শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত। এদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত।
×