ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একাত্তরের উচ্চতায় ফিরে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ জুন ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একাত্তরের উচ্চতায় ফিরে যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন উচ্চতায় ফিরে যাবে বলে মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে তিস্তাসহ দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যা দ্রুত সমাধানের পথও বেরিয়ে আসবে বলে তাঁদের আশা। এজন্য অন্ধ ভারত বিরোধিতার ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে দ্রুত সমাধান করাই মঙ্গল। কারণ দুই দেশেই কিছু না কিছু বিরুদ্ধবাদী আছে, যারা সম্পর্কের তিক্ততায় লাভবান হতে চায়। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা জানেন, কোন ধরনের বিরুদ্ধতাই বাংলাদেশের অগ্রগতিকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক একাত্তরের রক্ত দিয়ে গড়া। নানা চড়াই-উতড়াই-সীমাবদ্ধতার পরও দুই দেশের সম্পর্ক মূল্যায়নে আবেগ জড়িত। পাকিস্তান আমলে ‘ভারত বিরোধিতা’ ছিল রাষ্ট্রীয় পুঁজি। আর স্বাধীন বাংলাদেশে কারও কারও কাছে ‘ভারত বিরোধিতা’ হলো রাজনৈতিক পুঁজি। তাই দুই রাষ্ট্রের পারস্পরিক অগ্রগতির জন্য আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে হবে। পুরনো অবিশ্বাস দূর করতে হবে। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় বক্তারা বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে চেতনার দিক থেকে বাংলাদেশ উল্টোপথে থাকায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৈরী হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য সেই বৈরীভাব কেটে গিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক বাস্তবতায় মোদির সফর এই সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আলোচনায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমেদ বলেন, সর্বশেষ দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি কেবল ভূমির বিনিময় নয়, বিনিময় পারস্পরিক আস্থারও। তবে ছিটের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব বদল হলেই পূর্বতন রাষ্ট্রের কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না। তাদের পুনর্বাসন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি যৌথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। মোদির সফরে অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা এবং যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুতের সুযোগ তৈরি হয়েছে। মোদির সফরের পর নেপাল-ভুটানে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। এটা ইতিবাচক হবে। বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ভারতের ভূমিকা ‘দাই মায়ের’ মতো উল্লেখ করে সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) এম হারুন-অর-রশীদ বলেন, রাজনীতির বাইরেও দুই দেশের মধ্যে একটি মানবিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয়ের উন্নয়নে এই সুসম্পর্ককে কাজে লাগাতে হবে। তবে সুসম্পর্ককে যারা নেতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে, তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর তথাকথিত ‘দালালি’ এক জিনিস নয়। নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থেই অন্ধ ভারত বিরোধিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম কামাল উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় সফরে বন্ধুত্বের ভিত তৈরি হয়। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেও দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যা আমলাতন্ত্রের কারণে অনেক সময় জট পাকিয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ভারতের মৌলবাদ আর বাংলাদেশের মৌলবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। উন্নয়ন ও দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের মৌলবাদীরাও আপোসহীন। কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টো। মোদির সফর তাই তথাকথিত ভারতবিরোধীদের জন্য বিশাল একটি শিক্ষা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আনোয়ারুল আলম শহীদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রধান এএসএম সামসুল আরেফিন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, কলামিস্ট মোহাম্মদ আবদুল হাই প্রমুখ।
×