ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইলে খরচ বাড়ছে আরও পাঁচ ভাগ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৫ জুন ২০১৫

মোবাইলে খরচ বাড়ছে আরও পাঁচ ভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মোবাইল ব্যবহারকারীদের ঘাড়ে আরও ৫ ভাগ খরচের বোঝা চাপছে। এবারের বাজেটে শতকরা ৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এভাবেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। তবে নতুন সিমকার্ডের শুল্কহার ৩০০ টাকা থেকে কমিয়ে এক শ’ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সিমকার্ড প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে এক শ’ টাকাই রাখা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১২ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছেন। এর আগে শতকরা ১৫ ভাগ শুল্ক দিয়ে গ্রাহকদের কথা বলতে হয়েছে। এবার আরও ৫ ভাগ শুল্ক বেশি দিয়ে কথা বলতে হবে। এতে দেশে মোবাইল বিপ্লবের ওপর অনেকটা প্রভাব পড়বে বলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন। এখন শতকরা ২০ ভাগ শুল্ক দিয়ে একজন গ্রাহককে মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। এটা গ্রাহকের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমন প্রস্তাব করেছেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিটি নাগরিকের অধিকার বলেও উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা। এই সেবা মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার জন্য দেশের এক হাজার ৬টি ইউনিয়নে ১১ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হচ্ছে। ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন, ৩২১টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ৪০৭ ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এই সেক্টরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৭ সালের মধ্যে ৮ শতাংশে উন্নীত করা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে ২৮ শতাংশে। দেশে বর্তমানে টেলিডেনসিটি ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে টেলিডেনসিটি এক শ’ ভাগে উন্নীত হবে। ইন্টারনেট ডেনসিটি শতকরা ২৭ দশমিক ৮০। ২০১৮ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ডেনসিটি শতকরা ৫৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ইন্টারনেট ডেনসিটি ৫৫ শতাংশে উন্নীত হলে দেশের জিডিপি শতকরা ২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর এই লক্ষ্য অর্জন হবে ২০২০ সালের মধ্যেই। ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন ২০১৮ সালের মধ্যে ৪০ ভাগে উন্নীত করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের ভিশন ২০২১ রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি পৌঁছে দিতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। দেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তি রাষ্ট্রের চেহারা পেয়েছে। বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ইন্ট্রোডাকশন অব এডুকেশন এ্যাট সেকেন্ডারি এ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল থ্রু আইসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ ও একটি করে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। এ্যাকসেস টু ইনফর্মেশন প্রোগ্রামের আওতায় ১৫ হাজার ৫শ’ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫ হাজার মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে আইটি বা আইটিএস শিল্পের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ থেকে এক শ’ শতাংশে উন্নীত করা হবে। আন্তর্জাতিকমানের ১০ আইটি প্রতিষ্ঠান দেশে আইসিটি পণ্য উৎপাদন শুরু করবে। তখন এই সেক্টরের আরও বেশি উন্নতি ঘটবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় আইসিটির আওতায় আনা হবে। আইসিটি খাতে ১৩টি নীতিমালা প্রণয়নের কথাও উল্লেখ করা হয়। দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যার এবং আইসিটি সার্ভিসেস যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ৩০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনকিউবেটর এবং কম্পিউটার ভিলেজসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির কার্যক্রমসমূহ দ্রুত করা হবে। বর্তমানে আট হাজার ডাকঘরের অধিকাংশ উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টার রূপান্তরের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। অল্প সময়ের মধ্যে এই কেবলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ ছাড়াও প্রশাসন, ব্যাংকিং, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে অবস্থান করছে। বাজেটে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় সরকারের অঙ্গীকার। সরকারের ঘোষিত সময় ২০২১ সালের মধ্যে দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রযুক্তি পণ্যে শুল্ক ও করের রেয়াতি সুবিধা আগামী অর্থবছরেও রাখা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যে শুল্ক ও করের রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যবহার্য ক্যামেরার শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। দেশের সৃজনশীল প্রোগ্রামারদের সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তাদের উৎপাদিত সফটওয়্যারের প্রতিরক্ষণকল্পে ডেটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম ও ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যতীত অন্যান্য কাস্টমাইজড সফটওয়্যারের আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
×