স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে নিখোঁজ এবং পাচার হওয়া শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮৮০ বলে প্রকাশ করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি গবেষণা প্রতিবেদন। দেশের ৬টি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়। সংবাদপত্রগুলো হচ্ছে দি ডেইলি স্টার, নিউ এজ, প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যায়যায়দিন এবং জনকণ্ঠ। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সাউথ এশিয়া ইনিশিয়েটিভ টু এ্যান্ড ভায়লেন্স এগেইন্সট চিলড্রেন (সাইভাক)-এর যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকালে বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল শেয়ারিং মিটিং অন স্টাডি ফাইন্ডিংস-এর ‘মিসিং ফাউন্ড এ্যান্ড ট্রাফিক্ড চীলড্রেন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন সেন্টার ফর উইমেন এ্যান্ড চীলড্রেন’র (সিডাব্লিউসিএস) সভাপতি প্রফেসর ইশরাত শামীম।
গবেষণায় জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত নিখোঁজ ও পাচার হয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা ৮৮০। এর মধ্যে ৪৫৩ জন ছেলে শিশু এবং ৪২৭ জন মেয়ে শিশু। ১১-১৮ বছর বয়সসীমার মধ্যে ছেলে এবং মেয়ে শিশু উভয়ের নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২৫৮ জন ছেলে শিশু ও ২৭৯ জন মেয়ে শিশুর বেশিরভাগের বয়স ১১ থেকে ১৮। ১০ বছরের কম বয়সী নিখোঁজ শিশুদের মধ্যে ছেলে ১৫৪ জন, মেয়ে ১০৯ জন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শিশুর সংখ্যা ৮৮০ বলা হলেও বাস্তবে সংখ্যাটি আসলে এর থেকে অনেক বড়। সঠিক সংখ্যা নিরূপণের কোন প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি না থাকায় এবং কঠোর গোপনীয়তায় শিশু পাচার কাজ পরিচালিত হওয়ায় মূল সংখ্যাটি থেকে যায় অপ্রকাশিত, বলেন ইসরাত।
ছেলে-মেয়ে শিশু নির্বিশেষে, শহর এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশুর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি, যদিও এই শিশুদের অধিকাংশই আসে গ্রামাঞ্চল থেকে। শহর থেকে হারানো ছেলে শিশুর সংখ্যা ২৬৯ এবং মেয়ে শিশুর ৩৪৫ যেখানে গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়েছে ১৪৭ জন ছেলে শিশু এবং ৪৪ জন মেয়ে শিশু। এই সকল শিশুর মধ্যে অধিকাংশ ছেলে শিশু শহরের বাসিন্দা (৪৫৩ জনের মধ্যে ২০৫ জন শহরের, ১৯৩ জন গ্রামের) আর মেয়ে শিশুরা অধিকাংশই গ্রামের বাসিন্দা। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ‘মিসিং চাইল্ড এলার্ট (এমসিএ)’-এর অধীনে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এমসিএ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের একটি আঞ্চলিক প্রকল্প যার মূল উদ্দেশ্য শিশুদের নিখোঁজ ও পাচার হওয়া থেকে সুরক্ষা প্রদান।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারত এবং নেপালেও প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। ৬টি সংবাদপত্রের পাশাপাশি প্রকাশিত পলিসি পেপার, গবেষণা প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন বই থেকে সংগৃহীত সংখ্যাগত ও গুণগত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এছাড়া সংগৃহীত তথ্য যাচাইয়ের জন্য ঢাকার মিরপুর থানা এবং সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
নিখোঁজ, সন্ধানপ্রাপ্ত এবং পাচার হওয়া শিশুদের ভৌগোলিক, আর্থ-সামাজিক অবস্থানের প্রেক্ষাপট এবং লৈঙ্গিক পার্থক্যের ভিত্তিতে পৃথকীকৃত তথ্য গবেষণাটিতে প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, সর্বাধিক সংখ্যক শিশু (২৪৮ জন) নিখোঁজ হয় ২০১০ সালে আর সর্বাধিক পাচার (১১৩ জন) হয় ২০১১ সালে। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২৬৯ জন ছেলে শিশু ও ৩৪৫ জন মেয়ে শিশু গ্রাম থেকে স্বেচ্ছায় শহরে আসে। এরপর শহরে এসে তারা নিখোঁজ হয়ে গেছে। আবার ১৪৭ জন ছেলে শিশু ও ৪৪ জন মেয়ে শিশু সরাসরি গ্রাম থেকেই হারিয়ে গেছে।
৪৫৩ জন হারিয়ে যাওয়া ছেলে শিশুর মধ্যে ২০৫ জন শহর থেকে এবং ১৯৩ জন গ্রাম থেকে হারিয়ে গিয়েছে। শিশু পাচারের কার্যকর প্রতিরোধ করতে চাইলে বাংলাদেশকে নিখোঁজ শিশুর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিত করতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: