ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোশাক শিল্পের তিন সংগঠনের দাবি

‘বিদ্যমান উৎসে কর বহাল রাখা’

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৬ জুন ২০১৫

‘বিদ্যমান উৎসে কর বহাল রাখা’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতের পণ্য রফতানির ওপর বিদ্যমান দশমিক ৩ শতাংশ উৎসে কর বহাল রাখার দাবি করেছেন পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে বাজেটকে পোশাক শিল্পবান্ধব করার কথাও বলেন তারা। শুক্রবার বিজিএমইএ কার্যালয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ করেন পোশাক মালিকরা। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ), নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন (বিকেএমইএ) ও টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন (বিটিএমএ) যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম। এ সময় বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী, বিজিএপিএমইএ সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী প্রমুখ। আতিকুল ইসলাম বলেন, রফতানিমুখী পোশাক শিল্প ও বস্ত্র খাতের পণ্য রফতানির ওপর উৎসে কর দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতে ২৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করবে। সরকার নতুন বাজেটে ৭ শতাংশের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাক শিল্পে ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রথম ১০ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এর বিপরীতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ভারতে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও ভিয়েতনামে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিগত এক বছরে ডলারের বিপরীতে ইউরোর অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, কানাডিয়ান ডলারে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং রাশিয়ান রুবলে ৫৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। ফলে এসব দেশের খুচরা বাজারে মূল্য সমন্বয়ের জন্য ক্রেতারা পণ্যের দর কমাচ্ছেন। যার সরাসরি শিকার হচ্ছেন পোশাক মালিকরা। রফতানি মূল্যের ওপর ১ শতাংশ উৎসে কর প্রদান করলে মালিকদের লাভ থাকে না। অনেক সময় ১ শতাংশের কম লাভ হয় কোন কোন কারখানায়। এই সিদ্ধান্ত পাস হলে ওই শিল্প মালিকরা বেকায়দায় পড়বেন দাবি করেন তিনি। তাই এই উৎসে কর না বাড়িয়ে বিদ্যমান হার বহাল রাখার অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি। বিদ্যমান হার বহাল রাখলে আগের মতো নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। একেএম সেলিম ওসমান বলেন, আমাদের মূল দাবি দুটি। একটি সোর্স ট্যাক্স কমানো এবং অন্যটি মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ট্যাক্স কমানো। তিনি বলেন, সোর্স ট্যাক্স না কমালে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়ে যাবে। আর মূলধনী যন্ত্রপাতি সব সময় আমদানি করতে হয়। তাই এ দুই ট্যাক্স না কমালে বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকার ও জাতি এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের দাবি চিরস্থায়ী কোন দাবি নয়। একটি ভাল ফল পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, সামগ্রিক বস্ত্র খাতের জন্য সরকার যে সহযোগিতা দিয়েছে সেটা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। আর এ খাতের উদ্যোক্তারা কর দিতে রাজি নয় বলে যে অভিযোগ করা হয়, তা ঠিক নয়। বাংলাদেশে স্পিনিং থেকে শুরু করে ফিনিশড প্রোডাক্ট পর্যন্ত সব উৎপাদিত হওয়ায় এ খাতের জন্য সম্ভাবনার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে না পারলে আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশগুলো সেক্ষেত্রে সুবিধা লুফে নেবে। ইতোমধ্যে এদেশে থেকে কিছু অর্ডার অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণে আমাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। আর সে সুযোগে আইএলও, এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্স আমাদেরকে বিভিন্ন শর্ত মানতে বাধ্য করছে। সে শর্ত মানতে যেয়ে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজেটে সোর্স ট্যাক্স বাড়ালে তা শিল্পের জন্য ভাল হবে না। রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের লিংকেজ শিল্পগুলোর জন্যও একই ধরনের সোর্স ট্যাক্স ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন পর্যায়ে ডবল ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বাজেটে যে পরিমাণ সোর্স ট্যাক্সের প্রস্তাব করা হয়েছে তা বহাল থাকলে এ শিল্পের টিকিয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে সরকার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে উৎসে কর দশমিক ৮ শতাংশ থেকে নামিয়ে দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে; যা চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বলবৎ ছিল। এই উৎসে করা কমিয়ে আনার ফলে সরকারের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় এই হার বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে হিমায়িত খাদ্য, পাট, চামড়া, সবজি ও প্যাকেটজাত রফতানি পণ্যের ওপরও ১ শতাংশ উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়েছে; যা আগে ছিল দশমিক ৬ শতাংশ।
×