ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪২টির মধ্যে ৩টিতেই নিয়মিত বিচারক নেই

ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালেও দুই লাখের বেশি মামলা জট

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ জুন ২০১৫

ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালেও দুই লাখের বেশি মামলা জট

আরাফাত মুন্না ॥ দুই লাখেরও বেশি মামলার বোঝা নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোর কার্যক্রম চলছে মন্থর গতিতে। সারাদেশে স্থাপিত ৪২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ৩০টিতেই নিয়মিত বিচারক নেই। এসব ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় লোকবলেরও তীব্র সঙ্কট রয়েছে। পর্যাপ্ত বিচারক এবং লোকবল না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। ভূমির মালিকানা বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা রেকর্ডে থাকা ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য ২০১২ সালে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে সারাদেশে স্থাপিত ৪২টি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে মাত্র ১২টি ট্রাইব্যুনালে নিয়মিত বিচারক রয়েছেন। অন্য ট্রাইব্যুনালগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিয়ে। এর ফলে দিন দিন এসব ট্রাইব্যুনালেও মামলার জট বেড়েই চলছে। অন্যদিকে, কেউ যদি ট্রাইব্যুনালে কোন মামলায় হেরে যান, তাহলে তার দুর্ভোগের অন্ত নেই। বিদ্যমান প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ (সংশোধিত ২০০৪) এ ল্যান্ড সার্ভে আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হলেও তা গঠন হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আইনের বিধি তৈরি, আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচারক নিয়োগের জন্য সরকারের জরুরীভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, বিআরএস জরিপ শুরু হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। সারাদেশে এই জরিপ এখনও শেষ হয়নি। যে সব এলাকায় শেষ হয়েছে, সে সব এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি। মাঠ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও চরম অবহেলায় ভুলে ভরা ভূমি জরিপের এখন খেসারত গুণতে হচ্ছে জমির মালিকদের। জরিপের পর্চা আর ম্যাপে হাজার হাজার ভুল। কারও জমি পর্চায় আছে তো ম্যাপে নেই। ম্যাপে আছে তো পর্চায় নেই। আবার ম্যাপে থাকলেও শত বছর ধরে যে চৌহদ্দিতে মালিক সম্পত্তি ভোগ-দখল করে আসছেন সেভাবে নেই। এভাবে দেখা দিয়েছে নানা ত্রুটি। এ সব বিষয় লক্ষ্য করে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশের জন্য মাত্র ১২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। কিন্তু চার-পাঁচটি জেলার সমন্বয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করায় দেখা দেয় মহাবিড়ম্বনা। একশ’ Ñ দেড়শ’ মাইল দূর থেকে ওইসব ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের বিচারপ্রার্থীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেয়। এ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার একই বছরের ২৯ নবেম্বর আরেকটি গেজেটের মাধ্যমে সারাদেশের জন্য ৪১টি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেন। এছাড়া ঢাকার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ পরিচালনা করবেন যুগ্ম-জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক। কিন্তু এসব ট্রাইব্যুনালের জন্য মাত্র ১৩টি বিচারকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে ১২ জন যুগ্ম-জেলা জজকে পদায়ন করা হয়েছে ১২টি ট্রাইব্যুনালে। বাকিগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিয়ে। যার কারণে মামলার জট বেড়েই চলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ৮ হাজার ২৭৩টি, ময়মনসিংহের ট্রাইব্যুনালে ৩১ হাজার ৩৭২টি, কিশোরগঞ্জের ট্রাইব্যুনালে ১৭ হাজার ৫৩৯টি, পাবনার ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ৬৫৮টি, নোয়াখালীর ট্রাইব্যুনালে ৩ হাজার ৮১৮টি, টাঙ্গাইলের ট্রাইব্যুনালে ৭ হাজার ৪৮১টি, খুলনার ট্রাইব্যুনালে ৩ হাজার ৮০০টি, বরিশালের ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ৭৫২টি, বগুড়ার ট্রাইব্যুনালে ৩ হাজার ৪৩৪টি, কুমিল্লার ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ৯৭৫টি, যশোর ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ২৪২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অন্য ট্রাইব্যুনালগুলোতেও একইভাবে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন। জানা গেছে, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে একটি মামলার তারিখ পরে ছয় মাস থেকে এক বছর অন্তর অন্তর। অনেক সময় আবার নির্ধারিত দিনেও শুনানি হয় না। এর ফলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবার এ ট্রাইব্যুনালে মামলায় হেরে গেলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য কোন নির্ধারিত আদালত নেই। স্টেট এ্যাকুইজিশন এ্যান্ড টেনান্সি এ্যাক্ট ১৯৫০ (সংশোধিত-২০০৪)-এ ল্যান্ড সার্ভে আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হলেও আজও তা গঠন করা হয়নি।
×