ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফের প্রত্যাবর্তন সনি-আফুসির

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ জুন ২০১৫

ফের প্রত্যাবর্তন সনি-আফুসির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলায় একটা গান আছে, ‘আবার দেখা হবে, এ দেখাই শেষ দেখা নয়।’ প্রবাদে আছে, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।’ তেমনি ফুটবলেও শেষ যাওয়া বলে কিছু নেই। মাঝেমধ্যে ফিরেও আসতে হয়। এই যেমন বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার এই মুহূর্তের সেরা ফুটবল ক্লাব শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডে আবারও ফিরে আসার পথে সনি নর্দে এবং জোসেফ আফুসি। হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড সনি এবং নাইজিরিয়ান কোচ আফুসি জামালে যোগ দিতে আসছেন সোমবার। ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলের প্রথম পর্বে বর্তমান শিরোপাধারী শেখ জামাল পয়েন্ট টেবিলে সবার চেয়ে উপরে থেকেই শেষ করে। নিকটবর্তী দলগুলোর চেয়ে তারা এগিয়ে ৩ পয়েন্টে। কিন্তু তারপরও ধানম-ি ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ ফলে মোটেও খুশি হতে পারেনি। ফলে কোচসহ পুরো কোচিং স্টাফই পাল্টে ফেলে তারা। বরখাস্ত করে কোচ মারুফুল হককে। গত মৌসুমের শেষদিকে আফুসি নানা কারণে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে কোচ করা হয়েছিল মারুফুলকে। মারুফুল নিজেও সে সময় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছিলেন। জামালের কোচের দায়িত্ব নিয়ে মারফুল দলকে লীগে চ্যাম্পিয়ন করান। এরপর ভুটানে গিয়ে ‘কিংস কাপ’ এবং দেশে অনুষ্ঠিত মৌসুমসূচক টুর্নামেন্ট ‘ফেডারেশন কাপ’-এর শিরোপা জেতান জামালকে। তারপর চলতি লীগে প্রথম লেগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকলেও ঢাকা আবাহনীর কাছে হার, কয়েকটি ম্যাচে পয়েন্ট খোয়ানো, খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী নন... প্রভৃতি অজুহাতে মারুফুলকে ছাঁটাই করে জামাল কর্তৃপক্ষ। তবে বেশিদিন অবসর সময় কাটাতে হয়নি মারুফুলকে। তার নতুন ঠিকানা হয় তারই সাবেক ক্লাব শেখ রাসেলে। কারণ ততদিনে বরখাস্ত করা হয়েছে ক্লাবটির মন্টিনিগ্রোর কোচ দ্রাগান দুকানোভিচকে। শেখ জামালের কোচের শূন্যস্থানে অনেকের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত ক্লাবটিরই সাবেক কোচ জোসেফ আফুসিকেই পছন্দ করা হয়। সেই সঙ্গে আক্রমণভাগে যুক্ত হচ্ছেন সনি নর্দেও। সনি নর্দে বর্তমানে হাইতিতে অবস্থান করছেন আর আফুসি কলকাতায়। সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার এই দু’জন দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। সনি চলতি মৌসুমে খেলেন কলকাতা মোহনবাগানের হয়ে। আর আফুসি এবার ‘আই লীগ’-এ চার্চিল ব্রাদার্সের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ক্লাবসূত্রে জানা গেছে, সনি নর্দে দলে যুক্ত হলে স্কোয়াড থেকে বাদ যাবেন আরেক হাইতিয়ান লিওনেল। আগামী ২০ জুন থেকে শুরু হবে প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় পর্বের খেলা। গত বছরের নবেম্বরে মোহনবাগান ক্লাবটির চতুর্থ বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন গত দুই মৌসুম বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লীগে যথাক্রমে শেখ রাসেল ও শেখ জামালে খেলা এ হাইতিয়ান কৃতী ফরোয়ার্ড। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকধারী ফুটবলার ছিলেন সনি নর্দে। শেখ জামালের হয়ে খেলে সর্বশেষ মৌসুমে পান ৫৮ লাখ টাকা! অনেকেই মনে করেন, সনি ছিলেন বাংলাদেশী ফুটবল লীগে খেলা অন্যতম সেরা বিদেশী ফুটবলার। ২০১২-১৩ মৌসুমে শেখ রাসেলের হয়ে জেতেন লীগ, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপের শিরোপা। ২০১৩-১৪ মৌসুমে জামালের হয়ে জেতেন লীগ ও ফেডারেশন কাপের শিরোপা। সর্বশেষ লীগে তিনি করেন ১৩ গোল। আর আইএফএ শিল্ডে হন রানার্সআপ। আর্জেন্টিনার বিশ্বখ্যাত বোকা জুনিয়র্স একাডেমিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে সনির। ২০১৩-১৪ মৌসুমে শেখ জামাল পেশাদার লীগের শিরোপা জেতে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই। নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডের চেয়ে ১২ পয়েন্টে এগিয়েছিল তারা। বাংলাদেশের ঘরোয়া লীগের ইতিহাসে এত পয়েন্ট এগিয়ে থেকে এবং এত ম্যাচ হাতে রেখেই লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির সম্ভবত এটাই প্রথম। আর দলের এমন কৃতিত্ব গড়ার পেছনে যিনি ছিলেন নেপথ্য কারিগর, সেই জোসেফ আফুসির বিদায়টা হয় অপ্রীতিকরভাবে! তখন ক্লাবসূত্রে জানা গিয়েছিল, বেশ কিছুদিন ধরেই আফুসি ক্লাবের স্বার্থপরিপন্থী কাজ করছিলেন। যেমন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, বাজে আচরণ, অন্যায়কে প্রশ্রয়... এ জাতীয় কিছু। এজন্য ক্লাব তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট ছিল। তাই চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াতে চায়নি। গত বছরের জুলাই পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ ছিল। আফুসিও বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। ফলে ক্লাবের শেষ ৭-৮ লীগ ম্যাচে তিনি ছিলেন না। তারপর ভারতের গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন আফুসি। ২০১১-১২ মৌসুমে খেলোয়াড় থেকে জামালের প্রধান কোচ হয়েছিলেন আফুসি। তাঁর অধীনেই জামাল ২০১২-১৩ মৌসুমে ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও পেশাদার লীগে রানার্সআপ হয়। এছাড়া তাঁর কোচিংয়েই গত বছর ভারতের আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ হয় ধানম-ির দলটি। এর আগে শোনা গিয়েছিল ভিয়েতনামের বিকেমেক্স বিন দুয়োং এফসি ক্লাবে চলে যাবেন দুই বছরের চুক্তিতে। উল্লেখ্য, জামালের আগের কোচদের বিদায়ও সুখকর হয়নি। সার্বিয়ান জোরান ক্রালিয়েভিচ দলের প্রথম কোচ ছিলেন। এরপর শ্রীলঙ্কার পাকির আলীর পর স্থানীয় কোচ সাইফুল বারী টিটু ও মোহাম্মদ ইউসুফ দায়িত্ব পালন করেন। খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল ছিলেন খ-কালীন কোচ। শেষের জন ছাড়া কারোরই বিদায় সুখকর হয়নি।
×