ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির...

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ জুন ২০১৫

শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির...

মোরসালিন মিজান ॥ নজরুলের যাঁরা অনুরক্ত, এসেছিলেন। প্রবীণ গবেষক খ্যাতিমান শিল্পীরা ছিলেন মঞ্চে। বাদ যাননি কবি পরিবারের সদস্যরাও। কলকাতা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন কবির পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীসহ আরও অনেকে। তাঁদের কত কত বলা! বললেন। নজরুলকে নিয়ে কখনও সুখস্মৃতি, কখনও দুঃখগাথা হলো। গানে গানে নজরুলকে অঞ্জলি জানালেন তারকা শিল্পীরা। এখানেই শেষ নয়, ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিলেন জেলা শহরের স্বনামধন্য শিল্পীরা। সব মিলিয়ে প্রথম দিনেই জমে ওঠেছিল নজরুল সম্মেলন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। আয়োজক- নজরুল ইন্সটিটিউট। একুশ শতকের নজরুলকে সামনে রেখেই বিশেষ এ আয়োজন। জাতীয় কবির দর্শন ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগানোর যে দাবি বহুকাল ধরে উপেক্ষিত, আলো ফেলা হচ্ছে এ জায়গাটিতেও। আর সব দিনের মতো প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় আলোচনা দিয়ে। উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, বেগম খিলখিল কাজী প্রমুখ। কলকাতা থেকে কবির পুত্রবধূ ছাড়াও এসেছিলেন রণতিদেব মৈত্র ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ইন্সটিটিউটের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ। বক্তাদের মধ্যে বেশ নজর কাড়েন কল্যাণী কাজী। তিনি বলেন, আমি ১৮ বছর বয়সে কবি পরিবারের পুত্রবধূ হয়ে এসেছিলাম। আর এখন বয়স ৬২। মাঝখানে কত যে অভিজ্ঞতা! কত কত ঘটনা দুর্ঘটনা পেছনে ফেলে আসতে হয়েছে! সে সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, শেষ দিকে কবি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন। মস্তিষ্ক সচল ছিল না। তবে অনুভূতি ছিল। প্রিয়তম স্ত্রী প্রমিলা দেবী শিয়রে বসে হাতে তুলে তাঁকে খাওয়াতেন। আমরাও সব সময় পাশে ছিলাম। বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসতেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরম যতেœ কবিকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। সে সময় এর খুব দরকার ছিল। শেষ জীবনে এখানে এসে কবি যে শান্তি পেয়েছেন তা বলে বোঝানো যাবে না। তবে স্পষ্ট না বললেও, তাঁর কথায় বোঝা যায় কলকাতায় নজরুল যথেষ্ট উপেক্ষিত। এদিন দুই বাংলায় একইভাবে নজরুলকে নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। কলকাতার আরেক বক্তা রণতিদেব মৈত্র নজরুলকে কথা ও কর্মে ধারণ করার ওপর জোর দেন। নাতিদীর্ঘ আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমেই মঞ্চে আসে একদল ক্ষুদে শিল্পী। সমবেত কণ্ঠে তারা গেয়ে যায়Ñ মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মতো চঞ্চল।/মোরা বিধাতার মতো নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মতো সচ্ছল...। গান শেষ হতেই নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। বল বীরÑ/বল উন্নত মম শির!/শির নেহারি’ আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির...। সব্যসাচীর অনন্য সাধারণ আবৃত্তির সঙ্গে নেচে যান কবিরুল ইসলাম রতনসহ একদল শিল্পী। অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। লীনা তাপসী খান গানÑ ছাড়িতে পরাণ নাহি চায় তবু যেতে হবে হায়/মলয়া মিনতি করে তবু কুসুম শুকায়...। ডালিয়া নওশিন বেছে নেন নজরুলের বার বার শোনা জনপ্রিয় গানÑ তোমার বুকের ফুলদানিতে ফুল হব বঁধু আমি/শুকাতে হয় শুকাইব ঐ বুকে ক্ষণিক থামি’...। সালাউদ্দিনের কণ্ঠে ছিলÑ পরাণ-প্রিয়! কেন এলে অবেলায়/শীতল হিমেল বায়ে ফুল ঝ’রে যায়...। খিলখিল কাজীর কণ্ঠে ছিলÑ করুণ কেন অরুণ আঁখি দাও গো সাকি দাও শরাব/হায় সাকি এ আঙ্গুরী খুন নয় ও হিয়ার খুন-খাবার...। এভাবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অর্ধশতাধিক শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছিল নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি। সম্মেলনের প্রতিদিনই থাকবে এমন আয়োজন। বিশেষ এই সম্মেলন আগামী সোমবার শেষ হবে।
×