ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় বাজেট

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৭ জুন ২০১৫

জাতীয় বাজেট

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। একটানা ৭ বছর বাজেট দেয়ার মাধ্যমে রেকর্ডও গড়লেন অর্থমন্ত্রী। অনেক আশাবাদ আছে এই বাজেটে, আছে উচ্চাভিলাষও। সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে তিনি দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ এমনটাই মনে হয়েছে। বাজেটে বিপুল ব্যয়ের কথা যেমন আছে, তেমনি আছে উপার্জনেরও পথনির্দেশ। তার ঘোষিত প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। বাজেটে আয়-ব্যয়ের তারতম্যও বিশাল, আশি হাজার কোটি টাকার ওপরে। এই বিপুল ঘাটতি মেটাতে বিদেশী ঋণ, দেশের ব্যাংক ও ব্যাংকের বাইরে থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাজেটে ইতিবাচক দিক অনেক, তার কয়েকটি হলো করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো, প্রথমবারের মতো শিশু বাজেট রাখা, দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে শুল্ক করে নানা ছাড় ইত্যাদি। অন্যবারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত ছয়টি বাজেটের ধারাবাহিকতারই অংশ। ইতোপূর্বে প্রতিটি বাজেটেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আকার বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। তাই প্রতিবছরই বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বাজেট হচ্ছে কোন সরকারের উন্নয়ন কৌশলের বাস্তবায়নের ভিত্তি। অতীতে দেখা গেছে, বাজেট প্রণয়ন করা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বাজেট ঘোষণা মানেই একদিকে স্বপ্ন অন্যদিকে শঙ্কা। আশা আর স্বপ্ন হাত ধরাধরি করে চলে। বাজেটে আশার জায়গা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে, আর তাতে ভর করেই মানুষ স্বপ্ন দেখে উন্নতি ও সমৃদ্ধির। অন্যদিকে নতুন করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিংবা মূল্যস্ফীতির সঙ্কেত মিলবে কিনা এমন শঙ্কাও মানুষের মনে উঁকি দিয়ে যায়। একজন সফল অর্থমন্ত্রী উভয় দিক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তার প্রচেষ্টা থাকে নিঃসন্দেহে জনকল্যাণকর কিছু করার। টাকা আসবে কোথা থেকে আর খরচ হবে কোন্ খাতে কতÑ এটা বাজেটের সারকথা হলেও এই হিসাব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি সরকারের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। সরকারের রূপকল্প এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জনকে যৌক্তিক মনে করছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। সেজন্য কর সংস্কার ও কর আদায়ের সাহসী পথে হাঁটতেই হবে। অর্থমন্ত্রী সেটাই করেছেন। ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই বাজেটকে বিনিয়োগ ও শিল্পবান্ধব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চিটাগাং চেম্বারও বলেছে বাজেট ব্যবসাবান্ধব ও গণমুখী। অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি। সার্বিক বিচারে এবারের বাজেটকে জনবান্ধব বাজেটই বলা যায়। সবার ওপরে দেশের স্বার্থ। দেশের সার্বিক স্বার্থেই বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ বটে, বৃত্ত ভাঙ্গারই চ্যালেঞ্জ এটি। যদিও এই চ্যালেঞ্জ যুগেরই দাবি। অর্থনীতি জখম করা হরতাল-অবরোধ জ্বালাও-পোড়াও মার্কা কর্মসূচী সবকালেই বড় বাধা হয়ে থাকে এ জাতীয় ইতিবাচক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়। সরকার তা মোকাবেলা করে লক্ষ্যে পৌঁছবে এটাই প্রত্যাশা।
×