ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৬০০ মে.ও বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করবে রিলায়েন্স ও আদানী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ জুন ২০১৫

৪৬০০ মে.ও বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করবে রিলায়েন্স ও আদানী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের খ্যাতনামা শিল্পগ্রুপ রিলায়েন্স এবং আদানী পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশে চার হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে দেশে অন্তত পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হবে। চারটি বিষয়ে এমওইউ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুটি এমওইউর বিষয়ে ভারত সরকারের সম্মতি না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সমঝোতা হওয়া দুটি কেন্দ্রই বাংলাদেশে স্থাপন করা হবে। যদিও এখন পর্যন্ত স্থান চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুত বিভাগ মহেশখালীতে কেন্দ্র দুটি হতে পারে বলে দুই ভারতীয় কোম্পানিকে জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ভারতের অভ্যন্তরে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশে বিদ্যুত রফতানি করতে গেলে ভারত সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। কোম্পানি দুটি এখনও সেই অনুমোদন সংগ্রহ করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত এমওইউ দুটি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি। রিলায়েন্স পাওয়ার কোম্পানি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থাপিত এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কালাই-২ জলবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ৯৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে রফতানির প্রস্তাব দিয়েছিল। এছাড়া আদানী ভারতের যে কোন রাজ্যে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত রফতানির প্রস্তাব দিয়েছিল। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আওতায় ভারতের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আদানী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড সুবিধাজনক স্থানে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৮০০ মেগাওয়াট করে। আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালানো হবে। অন্যটি হচ্ছে ভারতের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালসহ তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এর প্রথম ইউনিট চুক্তির ৩০ মাসের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। এলএনজি আমদানি করবে তারা। দুটি এমওইউ মিলে অন্তত পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। এমওইউতে রিলায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সমির কুমার গুপ্ত এবং আদানী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ভিনিত এস জেনাইন স্ব স্ব পক্ষে স্বাক্ষর করেন। পিডিবির পক্ষে দুটি এমওইউতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানের সচিব জহিরুল ইসলাম। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের সরকারী খাত অনেক আগে থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে। এখন ভারতের জাতীয় কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এর সঙ্গে যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র আহ্বান করেছে ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানি। এছাড়া বাংলাদেশ এখন ভারত থেকে দৈনিক ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট সরকারী খাত থেকে আর ২৫০ মেগাওয়াট বেসরকারী খাত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। দেশটির বেসরকারী খাত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির আলোচনা চলছে। সরকারের গত মেয়াদে ভারত সরকারের সঙ্গে সমঝোতার আলোকে দুই দেশ বিদ্যুত জ্বালানির সম্প্রসারণে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়। এর ভিত্তিতে গঠিত দুই দেশের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি সময়ে সময়ে আলোচনার ভিত্তিতে সহযোগিতার ক্ষেত্র নির্ধারণ করে। দুই দেশের সরকারের অনুমোদনের ভিত্তিতে কাজগুলো বাস্তবায়ন হয়। তবে এবারই প্রথম ভারতীয় বড় কোন শিল্প উদ্যোক্তা দেশে সরাসরি বিনিয়োগ করছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এছাড়া বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক ছাড়াও বিদ্যুত বিভাগ, আদানী এবং রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। নসরুল হামিদ এ সময় বলেন, আমরা বিদ্যুত খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এখন থেকে শিল্প কারখনার বিদ্যুত সংযোগে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ঘোষিত বাজেটকে উচ্চাবিলাসী নয় উল্লেখ করে বলেন, এখানে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×