ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাল মিয়ানমারের সঙ্গে পতাকা বৈঠক

৯৩৫ জন অভিবাসীর নাগরিকত্ব নিয়ে মতবিরোধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ জুন ২০১৫

৯৩৫ জন অভিবাসীর নাগরিকত্ব নিয়ে মতবিরোধ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে দু’দফায় উদ্ধারকৃত ৯৩৫ অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে কাল সোমবার দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। উখিয়া সংলগ্ন সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়ায় এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে শনিবার নিশ্চিত করা হয়েছে। পতাকা বৈঠকের পর পর নিশ্চিত হওয়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু হবে। উল্লেখ্য, সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে যারা আটকা পড়ে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে সে দেশের নৌবাহিনী প্রথম দফায় ২০৮ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৭২৭ জন অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে। প্রথম দফায় উদ্ধারকৃতদের উখিয়া সীমান্তের ওপারে ঘুনধুম বালুখালি পয়েন্টের অদূরে সেনাক্যাম্পে রাখা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় উদ্ধারকৃতদের প্রথমে মংডু শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে গত শুক্রবার এদের ঢেকিবনিয়া পয়েন্ট সংলগ্ন সেনাক্যাম্পে আনা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ দাবি করা হচ্ছে, প্রথম দফায় উদ্ধারকৃত ২০৮ জনের মধ্যে ২শ’ জনই বাংলাদেশী। দ্বিতীয় দফায় উদ্ধারকৃত ৭২৭ জনের মধ্যে ৫শ’ জনই বাংলাদেশী বলে সে দেশের দাবি। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় উদ্ধারকৃত ২০৮ জনের মধ্যে ১৫০ জন বাংলাদেশী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তারা ক্যাম্পে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দ্বিতীয় দফায় উদ্ধারকৃত ৭২৭ জনের মধ্যে কতজন বাংলাদেশী রয়েছে তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফায় উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫শ’ জন বাংলাদেশী বলে ফেরত পাঠাতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন অবস্থাতেই মিয়ানমারের এ দাবি মানা হচ্ছে না। সঙ্গত কারণে, আগামীকাল যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তাতে প্রথম দফায় উদ্ধারকৃতদের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া দেড় শ’ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিজিবি কক্সবাজার ১৭ ব্যাটেলিয়ন সূত্রে শনিবার জানানো হয়, আগামীকাল উখিয়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানারের ঢেকিবনিয়ার বিজিপি ক্যাম্প চত্বরে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিতব্য পতাকা বৈঠকে নেতৃত্বে দেবেন ১৭ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল আলম। এরপর বাংলাদেশীদের হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবেন বিজিবির কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোঃ খালেকুজ্জামান। এ সময় স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, গোয়েন্দা সংস্থা, কক্সবাজারের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। বিজিবি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত যাদের বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করা গেছে তাদের ছাড়া আর কাউকে দেশে ফেরত আনা হবে না। কেননা, মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢালাওভাবে উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের বাংলাদেশী বলে চালিয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টায় রয়েছেন তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সব সময় বাংলাদেশী হিসেবে অভিহিত করে এদের একদিকে নাগরিকত্ব না দিয়ে অপরদিকে দেশান্তরি হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে সুদূর আন্দামান সাগর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের ঢল নামে। এসব অভিবাসী প্রত্যাশীদের ৯০ শতাংশই মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় জনগোষ্ঠীর। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার বলেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অভিবাসী সঙ্কট সে দেশের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নয়। সে দেশের রাখাইন প্রদেশে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে তা সে দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জনগোষ্ঠীর উপর ঘটেছে। ইয়াঙ্গুন অঞ্চলের রাখাইন বিষয়কমন্ত্রী উ.জ আয়ে নং আর্থ-সামাজিক দূরবস্থার কারণে বাংলাদেশের মানুষ দেশান্তরি হতে বাধ্য হয়েছেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ইতোমধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। মংডু থেকে ৭২৭ জনকে ঢেকিবনিয়ায় স্থানান্তরিত ॥ মিয়ানমারে দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার হওয়া ৭২৭ অভিবাসীকে দেশটির মংডু থেকে স্থানান্তর করে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢেকিবনিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। দেশটির সীমান্তরক্ষীদের প্রহরায় মিয়ানমার অভ্যন্তরে সড়ক পথে তাদের মংডু থেকে ঢেকিবনিয়া এলাকায় নিয়ে আসা হয়। তবে উদ্ধার হওয়া অভিবাসী সবাইকে এক স্থানে রাখা হয়নি। ঢেকিবনিয়া ক্যাম্প থেকে প্রায় তিন কি.মি. অদূরে জমায়েত করে রাখা হয়েছে ৪ শতাধিককে। মহিলাদের ঢেকিবনিয়া ক্যাম্পের পাশে তাঁবুর নিচে রেখে পুরুষ অভিবাসীদের মধ্যে চার শতাধিককে সেদেশের কক্যদইঙ্গা ক্যাম্পের পাশে (নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বরাবর) জমায়েত করে রাখা হয়েছে। প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে ওইসব অভিবাসীদের এক জায়গায় জমায়েত করে রাখা হয়েছে বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও সেদেশের নাগরিক জেনেও কৌশলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশীদের সঙ্গে একত্রে জড়ো করে রাখা হয়েছে। আশ্রয় ক্যাম্পেও নির্যাতন ॥ মিয়ানমার নৌবাহিনীর অভিযানে দুই দফায় উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের সেদেশের সীমান্ত রক্ষীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওইসব অভিবাসী নারী-পুরুষদের খাওয়া-দাওয়াসহ নানাভাবে কষ্ট দেয়া ছাড়াও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে ওপারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্যরা তাদের নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশী বলে দাবি করতে চাপ প্রয়োগ করে চলছে। ওইসব অভিবাসীদের মধ্যে যাদের স্থায়ী ঠিকানা মিয়ানমারে, তাদেরও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস শেষে বাংলাদেশ থেকেই ট্রলারে উঠে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল বলে এমন তথ্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে সূত্রটি দাবি করছে। দালাল গ্রেফতার ॥ টেকনাফে এক মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে টেকনাফ পৌরসভার অলিআবাদ এলাকা থেকে মোঃ ফারুক নামের মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে টেকনাফ কচুবনিয়ার মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র বলে জানায় পুলিশ। মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া এমওইউ স্বাক্ষর হচ্ছে ॥ ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। ওই সূত্র জানায়, তারা এমওইউর খসড়া প্রস্তুত করছে। যাতে অভিবাসী প্রত্যাশী আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে রাখার জন্য ব্যবস্থা থাকবে।
×