ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ ৩৬ ভাগ দরিদ্র মানুষ সামাজিক সুরক্ষার সুফল পায়

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৭ জুন ২০১৫

সর্বোচ্চ ৩৬ ভাগ দরিদ্র মানুষ সামাজিক সুরক্ষার সুফল পায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষের কাছে সামাজিক সুরক্ষার সুফল পৌঁছেছে। সরকারী তথ্যমতে ৩৯ শতাংশ দাবি করা হলেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ম এলাকায় তা ৩৬ শতাংশের ওপরে নয়। তবে বেশিরভাগ উপকারভোগীই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা ও কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা পায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও এনজিডব্লিউএফ পরিচালিত এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে আসে। সমীক্ষায় আরও বলা হয়, দরিদ্র, অতিদরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা উপকার ভোগী এবং উপকারভোগী নয় তাদের পেশা, সম্পদ মালিকানা, আয়, সঞ্চয়, ঋণ অবস্থার তেমন কোন পার্থক্য লক্ষণীয় নয়। শনিবার রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল অডিটরিয়ামে ‘সামাজিক সুরক্ষা-বাস্তবতা এবং চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনারে ড. সৈয়দ তারিকুজ্জামান সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক এক সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান। যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও এনজিডব্লিউএফ। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি বলেন, আমরা সামাজিক সুরক্ষার নানা ক্ষেত্রে ক্রমাগত এগিয়ে চলছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও নানা সূচকে এগিয়ে আমরা। শিশুদের পুষ্টির ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সামাজিক সুরক্ষার সুফল পেতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিটি মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করলে দেশ জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। জনগণের প্রতি নজর দিতে হবে, হত দরিদ্রদের তুলে নিয়ে আসতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে বহুমুখী সমস্যা রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে প্রস্তাবিত বাজেটে ১৪৫টি খাতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, সব মিলিয়ে দারিদ্র্যের ঐতিহ্য রয়েছে এদেশের। দেশে সামাজিক নিরাপত্তার কারণে সামাজিক বৈষম্যও কমে আসে। তবে সুরক্ষার নানা ক্ষেত্রে অনিয়মের ঘটনাও ঘটে, ৬০ বছরের নিচের লোকও বয়স্ক ভাতা পায়। এসব সসম্যা দূর করতে পারলে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার পথটি সহজ। পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সামাজিক সুরক্ষা অর্থনৈতিক কৌশলের অন্যতম স্তম্ভ। এর বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সুরক্ষা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। বাংলাদশে ক্ষুধা নিবারণ এক সময় মূল সমস্যা ছিল আর বর্তমানে সমস্যার বিষয়টি দারিদ্র ঝুঁকি। তবে টিআর, কাবিখা বাস্তবায়নে সুশাসনের অভাব রয়েছে। আশা করি আগামী বছরের বাজেটগুলোতে স্বাস্থ্য বীমা, পুষ্টি ও নগর দরিদ্রতার বিষয়গুলো মুখ্য হয়ে উঠবে। দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য বীমা চালু করার দাবিও জানান তিনি। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহিন আহমেদ চৌধুরি বলেন, সরকারী ও বেসরকারী এনজিও সংস্থাগুলো আমরা একসঙ্গেই কাজ করছি। এনজিও সংস্থাগুলো নানা কাজ করলেও সুনির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিবর্গের উন্নয়ন দেখাতে সক্ষম হয় না। আবার একই ব্যক্তি দু’বারও সুবিধা পায়। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে বয়স্ক ভাতা কিংবা সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা প্রদানের সময় ব্যাংকের সামনে বয়স্ক মহিলাদের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় ব্যাংকে তালাও ঝুলিয়ে রেখে বলা হয় স্যার দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। এ সমস্যা দূর করতে হবে। মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক আব্দুস সালাম। মোবাইল ব্যাংকিং ও প্রযুক্তির সেবা ব্যবহারের ফলে এ সমস্যার নিরসন ঘটবে বলে সেমিনারে মত দেন বক্তারা। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, বিলসের সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন।
×