ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর কোন সীমানা নেই, এরা মানবতার শত্রু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৮ জুন ২০১৫

জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর কোন সীমানা নেই, এরা মানবতার শত্রু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে আগামীতে পথচলার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা (ভারত) বাংলাদেশের সঙ্গে আছি, দু’দেশ একসঙ্গেই সামনের দিকে চলব, বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়েই চলব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার চিন্তা-ভাবনা এক ও অভিন্ন- তা হলো উন্নতি, উন্নতি আর উন্নতি। তাই আমরা দু’দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনের দিকে, উন্নতির দিকে এগিয়ে যাব। দু’দেশের সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, যদি একটি বাক্যে আমাকে বলতে হয় তাহলে বলব, লোকেরা মনে করত আমরা খুব আশপাশে রয়েছি, এখন বিশ্ববাসীকে বিশ্বাস করতে হবে আমরা আশপাশে রয়েছি, একসঙ্গেও রয়েছি। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রযাত্রা কখনও থমকে দাঁড়াবে না। আমরা দুটি দেশ সারাবিশ্বের সামনে এখন সম্পর্কের সেতু হিসেবে দাঁড়িয়েছি। দু’দিনের সফর শেষে বাংলাদেশ ত্যাগের প্রাক্কালে রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত প্রায় সোয়া ঘণ্টাব্যাপী বাংলা ও হিন্দীতে রাখা প্রাণোচ্ছল বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভূয়সী প্রশংসা করে আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদের কোন সীমা বা অঞ্চল থাকে না। শেখ হাসিনা একজন মহিলা হয়েও দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোন আপোস নয়। এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বিশ্ববাসীর সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ গোটা বিশ্বকে কি দিয়েছে, সন্ত্রাসবাদীরাই বা কী পেয়েছে? এদের কোন আদর্শ, সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য নেই, এদের একটাই লক্ষ্য- তা হলো মানুষ হত্যা! আসলে এরা মানবতার শত্রু। ভারত গত ৪০ বছর ধরেই এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমাদের কত শত মানুষকে সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে, কত রক্ত ঝরেছে। তাই যারা মানবতায় বিশ্বাস করে তাদের এসব মানবতার শত্রু সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে, এদের নির্মূল করতে হবে। সাহসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে তাঁরা যে ‘জিরো টলারেন্স’ শক্ত অবস্থানের কথা সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন, এজন্য তাঁকে আমরা অভিনন্দন জানাই। রীতিমতো উৎসবমুখর ও আড়ম্বরপূর্ণ ‘জনবক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হযরত শাহজালাল বিমানন্দরে গিয়ে বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের আতিথেয়তায় মুগ্ধ নরেন্দ্র মোদি আবারও বাংলাদেশ সফরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার একটি চয়ন উল্লেখ করে বলেন- ‘আমি আবারও আসিব ফিরে, এই ধানসিঁড়ির নদীর তীরে। আমরা (ভারত) তোমার (বাংলাদেশ) সঙ্গে আছি. আমরা তোমাকে নিয়েই চলব।’ বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদি পদ্মায় নৌকায় চড়ে বাংলাদেশের যুবকদের সঙ্গে আড্ডা, নোয়াখালীতে গিয়ে গান্ধীজির আশ্রম এবং ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনেরও ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বক্তব্য শেষে তুমুল করতালি এবং ‘মোদি, মোদি’ সেøাগানে পুরো মিলনায়তনকে প্রকম্পিত করে আমন্ত্রিতরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক বিদায় জানান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাঁকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানস্থলে আসা মাত্রই অভ্যাগত অতিথিরা তুমুল করতালি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনায় সুরের ধারার শিল্পীদের পরিবেশনায় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দর্শকসারিতে বসে তা উপভোগ করেন। নরেন্দ্র মোদির দু’পাশে ছিলেন ইমেরিটস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও ঝর্ণাধারা চৌধুরী। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক। এরপর উপচার্য ও উপ-উপাচার্য দু’জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্রেস্ট নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেন। রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দু’দিনের সফরে তাঁকে অভূতপূর্ব সম্মান প্রদর্শনে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ছাড়াও এ দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেভাবে আমাকে স্বাগত, অভ্যর্থনা ও সম্মান দেখিয়েছেন তা শুধু ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদিকে নয়, এ সম্মান পুরো ভারতের সোয়া শ’ কোটি জনগণের। তিনি বলেন, এ সফরের পর সমগ্র বিশ্ব হয়ত সূক্ষ্মভাবে পোস্টমোর্টেম করবে, বলবে এ সফরে কী পেলাম আর কী হারালাম। কিন্তু যদি এক বাক্য বলতে হয়- বিশ্ববাসী এ সফরের পর অবশ্যই বিশ্বাস করবে- আমরা আশপাশে রয়েছি, একসঙ্গেও রয়েছি। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়েও বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে মোদি বলেন, আমি বাংলাদেশকে নিয়ে চলতে এসেছি, কিন্তু ভারতেও আমাকে সব রাজ্যেকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। যখন বাংলাদেশে এসেছি তখন তিস্তা নদীর চুক্তি নিয়ে চলতেই হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, পাখি-বাতাস-জলের কোন ভিসা চাইতে হয় না। আর পানি কোন রাজনৈতিক ইস্যুও হতে পারে না। এটা মানবিক মূল্যবোধ থেকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস হারালে চলবে না, সবাই একজোট হয়েই বিষয়টির সমাধান করব। সীমান্তে হত্যাকা-ের বিষয়েও আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, কে গুলি চালালো সেটি বড় কথা নয়, যে জীবনটি গেল সেটিই বড় কথা। এটা কারোরই কাম্য হতে পারে না। কেউ যাতে সীমান্তে কোন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে না পারে, সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধ হয় সে ব্যাপারেও আমরা একজোট হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানবপাচার রোধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক সঙ্কটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সবকিছু মোকাবেলা করে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক দারুণ সব কাজ করেছে। এ দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে, তাঁর একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে কী করে বাংলাদেশের বিকাশ (উন্নয়ন) করা যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ৬ ভাগের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কম কথা নয়। এটা কম সাফল্য নয়, বরং এটা বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই শক্তিশালী হয়েছে তারই প্রমাণ। আগামীতেও বাংলাদেশ সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করবে এটা বলতেও কোন দ্বিধা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম সূর্য উঠে, সেই সূর্যের কিরণ ভারতে যায়। তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে সেই উন্নয়নের ছোঁয়া ভারতেও পৌঁছবে এটা আমি বিশ্বাস করি। গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশের প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনে সফরের সময় ওই দেশের একজন উদ্যোক্তা আমাকে বলে যে, তোমরা সোয়া শ’ কোটি জনগণের দেশ। তোমরা কী করছ? ১৭ কোটির দেশ বাংলাদেশ গার্মেন্ট শিল্পে এখন সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। সত্যি কথা বলতে কী, আমি এটা শুনে খুবই আনন্দিত হয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী বিকাশমান দেশ বাংলাদেশ এত দুর্দান্ত কাজ করছে, এটা শুনে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও জন্মহার রোধের অগ্রগতির বিষয়ে আমাদের (ভারত) রাজ্যগুলোরও শিক্ষা নেয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে ক্রিকেটেও বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটও মাত্র স্বল্প সময়ের মধ্যে এত উন্নয়ন করেছে যে, শুধু ভারত কেন বিশ্বের শক্তিশালী কোন ক্রিকেট দলই বাংলাদেশকে এখন ছোট করে দেখতে পারে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দেরি করে এসেছে, কিন্তু কম সময়ের মধ্যেই বিশ্বের বুকে তার শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ক্রিকেটের সার্বিক এবং বাংলাদেশের দুই নারী নিশাত ও ওয়াসপিয়া নাজনীন এভারেস্ট বিজয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পীকারÑ সব বড় বড় পদে সবাই নারী। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি বলেন, সময় বদলেছে, বিশ্বও বদলেছে। একটা সময় ছিল যখন ছিল কেবলই বিস্তারবাদ। কার কত শক্তি, কে কার কাছে মাথা নত করবে- এটাই ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে বিস্তারবাদকে কোন স্থান দেয়া হয় না। বিস্তারবাদ নয়, বিকাশবাদই হচ্ছে এখন বিশ্বের নীতি। এ প্রসঙ্গে সম্পাদিত ভারত-বাংলাদেশ স্থল চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি শুধু দু’চার কিলোমিটার জমির আদান-প্রদান নয়, এই চুক্তির মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের মনকে যুক্ত করেছে। বিশ্বে অন্য কোথাও এটি হলে নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্য পথেঘাটে সবাই ছুটে বেড়াত। কিন্তু আমরা গরিব দেশ বলে কেউ এসব দেখে না। তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বে যুদ্ধ হয় জমির জন্য। কিন্তু যেখানে বন্ধুত্ব রয়েছে সেখানে কখনও যুদ্ধ হতে পারে না। জমির জন্য বিশ্বের দেশগুলো লড়তে পারে, মরতে পারে- কিন্তু আমরা দুটি দেশ জমিকে সম্পর্কের সেতু হিসেবে দাঁড় করিয়েছি। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদানের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার আবেগপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমার রাজনৈতিক জীবনের পথ প্রদর্শক, যার হাত ধরে পথ চলেছি- সেই অটল বিহারী বাজপেয়ীকে সম্মান জানিয়েছেন। সেই সম্মাননা একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিয়েছি। আর আমার এ সম্মাননা গ্রহণ করার সৌভাগ্য হলো, যার যৌবন বয়সে রাজনীতির সঙ্গে কোন যোগাযোগই ছিল না। সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যুবা বয়সে একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, সেই সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা পত্র-পত্রিকায় পড়তাম। এখানের মানুষের ওপর অত্যাচারের কথা শুনে আমাদের রক্তও গরম হয়ে যেত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ দিল্লীতে ‘সত্যাগ্রহ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। গ্রাম ছেড়ে দিল্লীতে এসে সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ভারতের জওয়ানরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে, এর থেকে বড় সৌহার্দ্য আর কী রয়েছে। ভগবানের ইচ্ছা ছিল, সেই মুক্তিযুদ্ধের সূত্র ধরেই আজ আমাকে আপনাদের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আজও ভারতকে স্থায়ী সদস্য না করার সমালোচনা করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পালন করবে। বিশ্ব ইন্টারনেটের যুগে গেলেও পরিবর্তন হয়নি জাতিসংঘ। বাংলাদেশের মতো আমরা গরিব দেশ, প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করলেও সেদিকে তাদের নজর পড়ে না। সোয়া শ’ কোটির দেশ হলেও ভারত আজও জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য পদ পায়নি। ভারত হলো সেই দেশ, যারা কখনও জমির জন্য কোন দেশে হামলা বা লড়াই করেনি। বরং অন্যের জন্য লড়াই করে হাজার হাজার ভারতবাসী জীবন দিয়েছে। ভারত শান্তির জন্য উপযুক্ত কি না, সেই ব্যাপারে এখনও প্রমাণ দিতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের কাছে পাকিস্তানের ৯০ হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশ স্বাধীন হবে কি হবে না, তা নিশ্চিত না হলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে কোন তফাৎ ছিল না। যুদ্ধের শেষে পাকিস্তানের ৯০ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। যে পাকিস্তান সবসময় ভারতকে পেরেশান করছে, জঙ্গীবাদ চালাচ্ছে, সেই পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ করা হাজার হাজার সৈন্যের সঙ্গে সামান্য দুর্ব্যবহার পর্যন্ত করা হয়নি। বিশ্বশান্তির জন্য ভারতের অবদান যে কত শক্তিশালী এই ৯০ হাজার সৈন্যকে ফেরত প্রদানের ঘটনাই তার বড় প্রমাণ। বাংলাদেশ সফর তাঁর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই জরুরী। সার্ক সম্মেলনে এ বিষয়ে আমার আহ্বানে অনেকে সাড়া না দিলেও বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান ও নেপাল এই চারটি দেশ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে শুধু সড়ক নয়, রেল, সমুদ্র ও বায়ু সবদিক থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে ভারত থেকে কিছু পাঠাতে হলে সিঙ্গাপুর হয়ে পাঠাতে হতো। এখন বলি, এই পথেই নিয়ে যাও। ত্রিপুরায় বিদ্যুত নির্মাণ সামগ্রী বাংলাদেশ অনুমতি না দিলে কোন সময়ই নিয়ে যেতে পারতাম না। সেখানে বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে, বাংলাদেশও কিছু বিদ্যুত পাবে। আগে বলেছিলাম ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেব, এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভারত বাংলাদেশকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত দেবে। সৌর বিদ্যুত উৎপাদনেও বাংলাদেশ ও ভারত একটি বড় উৎস বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিদায়কালে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশে দুই দিনের সফর শেষে আমার মনে হচ্ছে, নতুন সফর শুরু হলো। আমি আবার আসব। বাংলাদেশ ও ভারত একজোট হয়ে উন্নতির মহাসড়কে চলবে। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। আমাদের কী নেই? দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীতও এক ব্যক্তির লেখা। কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়াও অনেকটা এক। দুদেশের চিন্তা-ভাবনাও এক, তা হলো একসঙ্গে চলে শুধু উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়ন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। আমরা সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। বাংলাদেশ ও ভারত দুটো দেশের শক্তি একজোট হয়ে কাজ করবে যাতে কোন সঙ্কট না আসে। তাই আমি বলতে চাই- আবারও আসিব ফিরে, এই ধানসিঁড়ির নদীর তীরে। এরপর জয় বাংলা ও জয় হিন্দ বলে বক্তব্য শেষ করে ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
×