ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ছুটির দিনে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ

প্রায় ১০ লাখ মামলার বিপরীতে বিচারক মাত্র ৪শ’ ২০ জন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ জুন ২০১৫

প্রায় ১০ লাখ মামলার বিপরীতে বিচারক মাত্র ৪শ’ ২০ জন

বিকাশ দত্ত ॥ উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতের মামলা জট নিরসনে সুপ্রীমকোর্ট ও আইনকমিশন বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুপ্রীমকোর্ট দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত সকল পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যদিকে মামলা জট কিভাবে দূর করা যায় তা সমাধানের সন্ধান বের করেছে আইন কমিশন। ১৯৪৭ সাল থেকে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও বিচারকের সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। বর্তমানে দেশে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৯টি মামলার বিপরীতে মাত্র ৪২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। একই সঙ্গে সহকারী জজ হতে আরম্ভ করে জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা পর্যায়ে অন্যান্য আদালতে আরও ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৬টি দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি করতে মাত্র ১১০০ বিচারক রয়েছে। দেশের বিভিন্ন আদালতে ২৬ লাখ মামলা নিষ্পত্তি করতে কমপক্ষে আরও তিন হাজার নতুন বিচারক প্রয়োজন। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে মামলা জট কমাতে বিচারপতি নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে বিচারকের সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। মামলার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ২৮০টি। আর ২০১৫ সালের ১ জানুযারি উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংখ্যা ৯৭ জন। আর মামলার সংখ্যা রয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮টি। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত দেশের উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের ৩০ লাখ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালতে হাইকোট ও আপীল বিভাগে বিচারপতি ও নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ করা প্রয়োজন। এদিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ মামলা জট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তিনি অফিসের সময় পরিবর্তন, বেঞ্চ পুনর্গঠনসহ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন তিনি। গত মাসেও মামলাজট নিরসনে বিচারিক আদালতের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্র্ট। এতে কার্যদিবসের দ্বিতীয়ার্ধে কর্ম ঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের প্রশাসন থেকে দেশের সব জেলা ও মহানগর দায়রা জজ বরাবর সম্প্রতি এ সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আইনকমিশনও কিভাবে মামলা জট দূর করা তা নিয়ে কাজ করছেন। আইনকমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক নিজ উদ্যোগে বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছেন। ৬ জুন আইনকমিশনে এক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, ড. এম শাহ আলম, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক, প্রশাসিনিক আপিলেট ট্রাইব্যুনালের চেয়াম্যান বিচারপতি একেএম ফজলুর রহমান, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোঃ কামরুল হোসেনসহ অন্যদের পরামর্শ নিয়েছেন। ১৬ মে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, বিচার বিভাগ কিছু বললে প্রত্যেকেই বিমাতাসুলভ আচরণ করেন। আমরা অনেক কিছু সহ্য করে যাই। তিনি আরও বলেন, আইনজীবীদের ত্রুটির কারণেই বিচারপ্রার্থীরা সুবিচার থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া আইনজীবীদের উদাসীনতার কারণেই বিচারপ্রার্থীরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মামলায় হেরে যান। একজন আইনজীবী একজন আর্কিটেকচার (কারিগর)। আইনজীবী মামলার স্টেটমেন্ট এমনভাবে তৈরি করবেন যেন বিচারক প্রশ্ন করলেই উত্তর পাওয়া যায়। বিচার বিভাগে মামলা জট নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। উচ্চ আদালত আর নিম্ন আদালতে ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন এই বদনামের ভার থেকে মুক্তি চাই। লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিচারক ও আইনজীবীসহ প্রত্যেকে স্ব-স্ব দায়িত্বপালনের মাধ্যমেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। উচ্চ আদালতে যে ভাবে মামলা জট কমানো যায় ॥ উচ্চ আদালতে কিভাবে মামলা জট কমানো যায় সে প্রসঙ্গে আইনকমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে (১) প্রত্যেকটি মোশান এফিডেভিটের তারিখ ও ক্রমানুসারে নিষ্পত্তি করা প্রয়াজন। এতে বেঞ্চ অফিসারদের দৌরাত্ম্যের হাত থেকে আবেদনকারীরা রেহাই পেতে পারেন। (২) ২৫-৩০ বছর পূর্বে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মোশান শুনানি করা হতো। যদি মোশান সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় আসে ও রুল ধনংড়ষঁঃব হওয়ার আদৌ সম্ভাবনা থাকে শুধুমাত্র সে ক্ষেত্রেই রুল ইস্যু হতো, অন্যথায় সংক্ষিপ্ত আদেশ দিয়ে খারিজ করা হতো। এমন কি হড়ঃ ঢ়ৎবংংবফ করার প্রচলনও ছিল না। বর্তমানেও যথেষ্ট সময় নিয়ে মোশান শুনানি করা প্রয়োজন। ঋৎরাড়ষড়ঁং মোশান সরাসরি খারিজ করা অবশ্য কর্তব্য। অন্যথায় মামলার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। অধিক সংখ্যায় বিচারপতি নিয়োগ দিয়েও সমস্যার সমাধান হবে না। (৩) যদি প্রকৃত আইনগত কোন কারণ ছাড়াই রুল ইস্যু করা হয়েছে বলে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নিকট প্রতীয়মান হয় তা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট মাননীয় বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। (৪) রুল ইস্যু করা ব্যতিরেকে আবেদনকারীর পক্ষে কোন আদেশ প্রদান না করা। (৫) হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রুল জারি করার ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি না হলে উক্ত রুল স্বয়ংক্রিয়ভাবে খারিজ হবার বিধান প্রণয়ন করার বিষয়টি বিবেচনা করা। বিষয়টি মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাঁর চৎধপঃরপব উরৎবপঃরড়হ এর ক্ষমতাবলে নিশ্চিত করতে পারেন। (৬) মামলা নিষ্পত্তির উপর জোর তাগিদ দিতে হবে। যে বেঞ্চ রুল ইস্যু করেন উক্ত বেঞ্চকেই ইস্যুকৃত রুলগুলোর শুনানি অন্তে নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রদান করা যেতে পারে। সে পর্যন্ত ঐ বেঞ্চের মোশন ক্ষমতা স্থগিত থাকবে। (৭) হাইকোর্ট বিভাগের সকল বেঞ্চের নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা মনিটর করা প্রয়োজন। প্রত্যেক বেঞ্চের আগামী ছয় মাসে নিষ্পত্তি তব্য মামলার ক্রমিক নম্বর অনুসারে ৬ (ছয়) মাসের তালিকা প্রস্তুত করা যেতে পারে। উক্ত তালিকা ওয়েবসাইটেও দেয়া যেতে পারে। উক্ত তালিকা অনুসারে কোন রূপ মুলতবি ব্যতিরেকে মামলা নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। (৮) অবকাশকালীন বেঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। (৯) হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের ক্রমাগত বদলিসহ কঠিন হাতে মনিটরিং এর মধ্যে রাখতে হবে। প্রয়োজনে দুদককে অভিযোগ সম্বন্ধে স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে দিতে হবে। কেউ আইনের উর্ধে নয় তা সকলকে উপলব্ধি করতে হবে। (১০) সমগ্র বিশ্বে সকল আদালতে খরচা আরোপের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশেও সকল দেওয়ানী আদালতে বিশেষ করে সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগে কোন তুচ্ছ বিষয়ে মামলা দায়ের হলে খরচা আরোপ করা বিশেষ প্রয়োজন। অন্যথায়, কখনই গবৎরঃষবংং বিষয়ে মোশন বা লিভ আবেদনপত্র বন্ধ হবে না। (১১) সুপ্রীম কোর্টের আদেশের অনুলিপি ও রেকর্ড নি¤œ আদালতে দ্রুত প্রেরণ নিশ্চিত করা। ( ১২) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মামলার নিষ্পত্তি পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি ‘মনিটরিং সেল’ তৈরি করা। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে মামলা ॥ ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০১১ সালে সংশোধনীর পর জানা যায় যে প্রায় ৯ (নয়) লাখ মোকদ্দমা ইতোমধ্যে দায়ের হয়েছে। ২০১৪ সালের উক্ত ধরনের মোকদ্দমার বিবরণীতে দেখা যায় যে, ১ জানুয়ারি ২০১৪ মোকদ্দমার সংখ্যা ছিল ২,৪৬,১০৭টি। নতুন দায়ের হয়েছে ৫৪,৫২৫টি। সর্বমোট ৩,০০,৬৩২টি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ১,৫৫,০৩৬টি এবং বিচারাধীন রয়েছে ১,৩৩,৭০২টি মোকদ্দমা। ১৯৪৭ সাল হতে এভাবে দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও বিচারকের সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। ফলে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাছাড়া এটা অনস্বীকার্য যে, আগের মতো প্রাজ্ঞ ও দক্ষ, উচ্চমানসম্পন্ন বিচারকের সংখ্যা ক্রমশই হ্রাস পেতে থাকে। তার প্রধানতম কারণ, বিচারকদের চাকরির সুযোগ সুবিধা তেমন বৃদ্ধি না হওয়ায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা এ পেশা গ্রহণে আকৃষ্ট হচ্ছে না। যার ফলে বিচার বিভাগ ক্রমান্বয়ে মেধাশূন্য হতে থাকে। তাছাড়া, ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও সামরিক শাসন এবং পুনরায় ১৯৮২ সালের সামরিক শাসনের কারণে স্বাভাবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে চরম অবক্ষয় হয়, তার ধাক্কা অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগেও লাগে। যার ফলে নানান রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। ১৯৮৩ সালে উপজেলা সদরে মুন্সেফ কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপন করা হয়। তদানীন্তন সরকার বিচার বিভাগকে জনগণের দোরগোড়ায় নেবার একটি ভ্রান্ত ধারণা থেকে উপজেলায় বিচার বিভাগকে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এতে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্তই হয়। তাড়াহুড়া করে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বহুসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট, মুন্সেফ সহকারী জজকে কার্যত কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ব্যতিরেকে উপজেলাসমূহে পদায়ন করা হয়। সেইরূপ নিঃসঙ্গ অবস্থায় সবাই না হলেও অনেক বিচারক স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দ্বারা প্রভাবান্বিত হতে বাধ্য হন এবং এরা স্থানীয় নোংরা রাজনীতির কূটচক্রে পড়ে যেতে থাকেন। অনেক বিচারকের পদস্খলনও ঘটতে থাকে। তাছাড়া, হঠাৎ করে বহু সংখ্যক সম্পূর্ণ নতুন আদালতের কাজ পরিচালনায় নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে। দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের জন্য ॥ বর্তমানে ৯,৮৫,৫০৯টি ফৌজদারী মামলার বিপরীতে মাত্র ৪২০ জনের মতো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ব্যতিরেকে সহকারী জজ হতে আরম্ভ করে জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা পর্যায়ের অন্যান্য আদালতে আরও প্রায় ১৬,৪৫,৯৬৬টি দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে মাত্র ১১০০ জন্য বিচারক রয়েছেন। দেশের নি¤œ আদালতের বিচারাধীন প্রায় ২৬ লাখ মামলাসহ নতুন দায়েরকৃত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিতকরণে কমপক্ষে আরও ৩০০০ নতুন বিচারক নিয়োগ করা অতি অবশ্যক। অনেক জেলাতেই একটি এজলাসে দুই বা ততোধিক বিচারকগণ বিচার কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাই দেশের আদালতসমূহে পর্যাপ্ত সংখ্যক এজলাস স্থাপন করা আবশ্যক। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় বিচারকগণের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, সার্ভে সেটেলমেন্ট ট্রেনিং, ইচঅঞঈ সহ যাবতীয় সকল ট্রেনিং এবং বীঃবহংরাব রহ-ংবৎারপব ঃৎধরহরহম সহ অন্তত দেড় বছর প্রশিক্ষণ দেয়ার পূর্বে আদালতে সরাসরি বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত করা ঠিক নয়, কিন্তু বর্তমানে অতি অল্প মেয়াদে সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়েই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সহকারী জজ আদালতে বিচারকগণ বিচার কার্যে নিয়োজিত হচ্ছেন। এর ফলে তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে যেমন দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে তেমনি ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাবার সম্ভাবনা বাড়ছে। ফলে আপীল ও রিভিশনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আদালতসমূহে বিরাজমান স্টেনো-টাইপিস্ট এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহায়ক কর্মচারীর অপ্রতুলতার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা আবশ্যক। আদালতসমূহে বিরজমান টাইপ মেশিনের পরিবর্তে কম্পিউটার টাইপ চালু করতে হবে এবং কম্পিউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির অভাব দূর করতে হবে। বিচারিক আদালতে সাক্ষীর সাক্ষ্য বিচারককে নিজ হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লিপিবদ্ধ করতে হয়। দিনের পর দিন এরূপ সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে বিচারকের দক্ষতা কমতে বাধ্য। উপরন্তু এক প্রকার অনীহারও সৃষ্টি হয়। এর সমাধান প্রয়োজন। স্টেনো টাইপিস্টের মাধ্যমে কম্পিউটারে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের জন্য বিচারকসহ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের সম্মুখে একটি করে মোট তিনটি মনিটর রাখা একটি সমাধান হতে পারে। সাক্ষ্য গ্রহণে বিলম্ব মামলার দীর্ঘসূত্রতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ফৌজদারী মামলায় পুলিশকে দ্রুত সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। স্পর্শকাতর মামলা প্রমাণে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সূত্র মতে, আরও জানা যায়, সি.আর.ও এর ১২৫-১২৬ বিধিতে এবং সিআর.আর.ও এর ৩৩-৩৪ বিধিতে সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও একটি মোকদ্দমায় ক্রমাগত সাক্ষ্য গ্রহণ না করে দিনের পর দিন শুনানি মুলতবি করা শুনানি প্রলম্বিতকরণ রোধকল্পে সি.আর.ও. এবং সিআর.আর.ও-এর বিধির বিধান অনুসারে মামলা ক্রমাগত শুনানি অন্তে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। প্রতিটি জাজশিপে সি.আর.ও এবং সি.আর.আর.ও-এর বিধান মোতাবেক নিয়মিত জুডিশিয়াল কনফারেন্স আয়োজন নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান সমস্যার আলোচনা ও সমাধান করা। একাধিক মামলা আংশিক শ্রুত অবস্থায় রাখার চেয়ে যতগুলো সম্ভব মামলায় রায় প্রদান করাই অধিক শ্রেয়। যে সকল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত অন্তে যুক্তি-তর্ক শ্রবণ ও রায় প্রদানের জন্য অপেক্ষমাণ, সে সকল মামলায় রায় না দেয়া পর্যন্ত কোন বিচারককে বদলি না করার নীতি থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া, বার্ষিক ছুটি গ্রহণ করার পূর্বে তারা তাদের ঢ়বহফরহম রায় ও আদেশ প্রদান করবেন। বিচারকগণ কর্তৃক রায় প্রদানে অহেতুক বিলম্ব পরিহার করে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে রায় প্রদান করতে হবে। উচ্চ আদালতে মামলা ও বিচারপতির সংখ্যা ॥ মাত্র ১৫ বছরে উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে মামলা সংখ্যা ছিল ১,২০,২৮০টি। আর বিচারপতির সংখ্যা ছিলেন ৫৬ জন। ২০০২ সালে বিচারপতিরসংখ্যা ৫৫ জন, মামলার সংখ্যা ১,৩৫,৮৭৯টি। ২০০৩ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৫৭ জন মামলার সংখ্যা ১,৫৪,১৬৮টি। ২০০৪ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৭২ মামলার সংখ্যা ১,৬৮,৪৪৭। ২০০৫ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৭২ মামলার সংখ্যা ১,৮৪,৮১১টি। ২০০৬ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৬৯ জন মামলার সংখ্যা ২,০৮,৩৮৯টি। ২০০৭ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৬৫ জন আর মামলার সংখ্যা ২,৪০,৪৭৯টি। ২০০৮ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৬৭ জন মামলার সংখ্যা ২,৬২,৩৪৫টি। ২০০৯ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৭৮ জন আর মামলার সংখ্যা ২,৯৩,৯০১টি। ২০১০ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৯৪ জন মামলার সংখ্যা ৩,২৫,৫৭১টি। ২০১১ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৯৫ জন মামলার সংখ্যা ৩,১৩,৭৩৫টি। ২০১২ সালে বিচারপতির সংখ্যা ১০১ জন মামলার সংখ্যা ২,৭৯,৪৩৬টি। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৯৫ জন, মামলার সংখ্যা ২,৯৭,৭৩১টি। ২০১৪ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৯০ জন আর মামলার সংখ্যা ৩,২৩,৪৪৬টি। এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিচারপতির সংখ্যা ৯৭ জন আর মামলার সংখ্যা রয়েছে ৩,৬১,০৩৮টি।
×