বিভাষ বাড়ৈ ॥ একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক সাড়া মিলেছে। তিন দিনে আবেদন করেছে দুই লাখ শিক্ষার্থী। এদিকে প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার কারণে ব্যাপক সাড়া পড়লেও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বোর্ডে আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে ভোগান্তি ও হয়রানির মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। জালিয়াতি চক্রের কারণে সঙ্কটে পড়েছেন তারা। বোর্ডগুলোতে একের পর এক অভিযোগ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, আবেদন করতে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে তারা দেখছেন, তাদের রোল নম্বর ব্যবহার করে ইচ্ছামতো ৫টি কলেজের নাম দিয়ে কে বা কারা আবেদন করে ফেলেছেন। এছাড়া অনলাইন আবেদনের (স্মার্ট এ্যাডমিশন সিস্টেম) প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণেও ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা।
এদিকে দুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক অভিযোগ আসলেও সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগীরা। তবে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক বলেছেন, সঙ্কট সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা অনলাইনে গিয়ে দেখেছেন তাদের আবেদন আগেই কেউ করে ফেলেছে তারা বিষয়টি উল্লেখ করে পছন্দ অনুসারে ৫টি কলেজের নামসহ স্ব স্ব বোর্ডকে জানাবেন। ছবিসহ আবেদন করতে হবে ঘটনা বর্ণনা করে। লিখিত আবেদন পেলেই আগে করা ভুয়া আবেদনটি বাতিল করে দেবে বোর্ড। শিক্ষার্থীদের লিখিত আবেদনপত্র গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে সকল বোর্ড কর্তৃপক্ষকে। সার্ভারের প্রক্রিয়াগত ত্রুটিও সমাধানে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে বলেন, যারা বা যেই এসব জালিয়াতির আশ্রয় নিক না কেন এটি কখনই কাম্য নয়। চেয়ারম্যান জানান, কিছু সমস্যা থাকলেও ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে অনলাইন ও এসএমএস আবেদন প্রক্রিয়ায়। শনিবার থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত (সোমবার সন্ধ্যা) আবেদন পড়েছে দুই লাখ। এ প্রক্রিয়ায় আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত আবেদন/এসএমএস করা যাবে।
এদিকে অনলাইনে আবেদন নিয়ে ভোগান্তি ও হয়রানির জালিয়াতির ঘটনায় পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কেবল একটি রোল নম্বর হলেই আবেদন করার সুযোগ থাকায় অপরাধীরা হয়রানির সুযোগ নিচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের স্কুল শাখা থেকে পাস করা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিজ কলেজে ধরে রাখতে এই জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য অনেক শিক্ষকও বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষ বশির আহম্মেদ ভূঁইয়া বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বললেন, খোদ ঢাকার অনেক নামীদামী কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের স্কুল শাখা থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এরা শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে আবেদন করছে, যেখানে পছন্দের কলেজ হিসেবে নিজেদের কলেজের নাম রাখছে এক নম্বরে। অথচ শিক্ষার্থী হয়ত সেখানে ভর্তি হতে চাচ্ছে না। বিষয়টি গোপনে হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী যখন আবেদন করতে যাচ্ছে তখন মেসেজ আসছে অলরেডি আবেদন করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে দেখছেন তার আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেছে। কেউ হয়ত আবেদন করার পর টেলিটক থেকে টাকা জমা দিতে পারছেন না, কেউ আবার আইডি-পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করতে পারছেন না। আবার অনেকে আবেদনের কোন ভুল পুনরায় সংশোধন করতে পারছেন না। এমন অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকার ডেমরা থেকে এক শিক্ষার্থীরা রাফি জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে অভিযোগ করে বলছিল, আমার অনলাইন আবেদন করতে গেলে আবেদন করা হয়ে গেছে দেখাচ্ছে।
মাসুদুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমার অনলাইন আবেদন শেষ হয়েছে। কিন্তু টেলিটক থেকে টাকা নিচ্ছে না। টেলিটক থেকে এসএমএস পাঠালে তথ্য সঠিক নয় বলে ফিরতি এসএমএস আসছে।
জানা গেছে, রবিবার ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রভাতি ও দিবা শাখা থেকে এসএসসি পাস করা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করতে গেলে এ জালিয়াতির বিষয়টি প্রথমে ধরা পড়ে। ঢাকা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের মেধাবী ১৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। তারা অনলাইনে ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে জানতে পারেন, কে বা কারা তাদের ভর্তির আবেদন করে ফেলেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে। ঘটনা ধরা পড়েছে চট্টগ্রামেও। অভিভাবকরা শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেছেন, যে ভর্তি আবেদন হয়েছে তা বাতিল করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত চিন্তা করে সঠিক ও শিক্ষার্থীদের পছন্দ মতো কলেজে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা নেবেন। যারা এই কারচুপি করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা। অনলাইনের জন্য (www.xiclassadmission.gov.bd) এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনের করতে হবে। তবে অনলাইন ও এসএমএসের বাইরে থাকা বাকি কলেজ ও ইনস্টিটিউটটে সাধারণ নিয়মেই ভর্তির আবেদন করার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা।