ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিযোগ অস্বীকার করলেন স্বামী আমিনুল

প্রেমের বিয়েও টিকছে না পরীবানুর, স্বামী পরনারীতে আসক্ত!

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৯ জুন ২০১৫

প্রেমের বিয়েও টিকছে না পরীবানুর, স্বামী পরনারীতে আসক্ত!

শর্মী চক্রবর্তী ॥ প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন কমলাপুরের কবি জসিমউদদীন রোডের পরীবানু (২৫)। কিন্তু সংসার করা হয়নি। স্বামী আমিনুল অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পরীবানুকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করছেন। এমনকি মেরে ফেলারও চেষ্টা করছে। স্ত্রীর ভরণ-পোষণ কিছুই দেয় না স্বামী। তাই পরীবানু রাজধানীর ইস্কাটনের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পরীবানু শুনানিতে হাজিরা দিতে এসেছেন। শুনানি কর্মকর্তার কাছে তিনি আকুতি করে বলেন, আমি তার কাছ থেকে মুক্তি চাই। আপা আমি জানি এই স্বামীর সংসার আমি করতে পারব না। কারণ সে পর নারীতে আসক্ত। আমি তার সঙ্গে ঘর করলেও সে অন্য নারীর কাছে যাবে। তাই আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চাই না আমি তার শাস্তি চাই। একই সঙ্গে ওই মেয়েটারও শাস্তি হোক আমি চাই। তাদের এই শাস্তি দেখে আর কোন মেয়ে যেন অন্য মেয়ের সংসার না ভাঙ্গে। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরীবানু। পরীবানু বলেন, সাড়ে পাঁচ বছর আগে তার পরিচয় হয় আমিনুলের সঙ্গে। তখন সে ঠিকাদার ছিল। সেইসময় জসিমউদ্দীন রোডের একটি সাইডে সে কাজ করত। আমিও সেই সাইডে শ্রমিকদের জন্য রান্নাবান্না করতাম। এই সুবাদে দু’জনের পরিচয়। পরিচয় থেকেই দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক। প্রায় ৪ বছরের সম্পর্ক। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। তখন থেকেই দু’জনে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতে শুরু করি। কিন্তু বিয়ের কথা বললেই সে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দেখায়। এক পর্যায়ে আমি সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ি। তখন বিয়ের জন্য চাপ দিলে কয়েকদিন করব করব বলে সে ওই জায়গা থেকে চলে যায়। অন্য জায়গায় গিয়ে মোবাইলের সিম বন্ধ করে দেয়। আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে আবার কাজ নেয়। সেখানে গিয়ে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আমিনুল। তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় আমার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার আগে সে বিয়ে করেছিল সেই ঘরে তার একটা ছেলে ছিল। এছাড়া ঢাকায় আরেকটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাকেও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। কিন্তু বিয়ে করেনি। মেয়েটি বিয়ের কথা বললে তার ওপর নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে সেই মেয়েটি মারা যায়। তার সঙ্গে পরিচয়ের আগে এ সব আমি কিছু জানতাম না। এখন সবকিছু জানতে পারছি। আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার পর আমি পাগলের মতো তাকে খুঁজতে থাকি। সে ছাড়া তখন আমার জীবনে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। কারণ আমার পেটে তখন তার সন্তান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কমলাপুরেই তাকে খুঁজে পেলাম। সেই সময় রূপসা নামে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমে মত্ত আমিনুল। আমি তার কাছে তখন জানতে চাইলাম কেন সে আমাকে ফেলে রেখে এসেছে। সে উত্তরে আমাকে বলল আমার সঙ্গে তার কোন প্রয়োজন নেই। তাই চলে এসেছি। তখন আমি বিয়ে করার কথা বললে সে না বলে দেয়। তখন আমি তাকে জানালাম যে আমার পেটে তার সন্তান। এরপরও তার আমাকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছে ছিল না। আমাকে বলল বাচ্চা নষ্ট করে ফেলার জন্য। এই কথায় আমি রাজি না হওয়ায়, সে আমাকে বললো বাচ্চা নষ্ট করে ফেললে সে আমাকে বিয়ে করবে। তার কথা বিশ্বাস করে আমিও সন্তান নষ্ট করে ফেলি। কিন্তু এরপরই তার ভিন্ন রূপ দেখতে পেলাম সে আবার বিয়ে না করার কথা বলে। তখন আর কোন উপায় না পেয়ে আমি থানায় গিয়ে আমিনুলের নামে জিডি করি। এক পর্যায়ে পুলিশের ভয়ে দেড় বছর আগে কোর্টে গিয়ে সে আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের কাবিনামায় দেনমোহর ২ লাখ টাকা দেখার পর সে বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করে। বিয়ের পর একটা দিনও আমি তার সঙ্গে সংসার করতে পারিনি। সে যথারীতি রূপসা নামে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যায়। তারপরও তার সঙ্গে আমি ঘর করার চেষ্টা চালিয়ে যাই। পরীবানু বলেন, গত কোরবানী ঈদে আমি তার গ্রামের বাড়ি রংপুর ভবেরগঞ্জে যাই। সেখানে শুরু হয় আর এক ধরনের নির্যাতন। মা আর ছেলে দু’জনে মিলে আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এছাড়া আমিনুল তার বন্ধুদের দিয়েও আমার ওপর নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করে। এমনকি আমাকে মেরে ফেলার জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে মা আর ছেলে। এসব সইতে না পেরে তার বাড়ি থেকে আমি পালিয়ে ঢাকা চলে আসি। এরপর সে আমার কোন খবর নেয়নি। ছয়মাস আগে আর কোন উপায় না পেয়ে আমি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে আমিনুলের নামে মামলা করি। এ বিষয়ে পরীবানুর স্বামী আমিনুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী যা অভিযোগ করেছে তা সবই মিথ্যে। বিয়ের পর আমি তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম সেখানে আমার পরিবারের কোন সদস্যদের সঙ্গে তার বনিবনা হয়নি। তাই সে ওখান থেকে পালিয়ে আসে। এজন্য আমি রাগে তার সঙ্গে ২ মাস যোগাযোগ করিনি। এরপরই সে আমার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যে কথা বলতে থাকে। এমনকি আমার চরিত্র নিয়েও কথা বলে যা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমি তাকে নিয়ে ভালভাবে সংসার করতে চাই কিন্তু পরীবানু তা চায় না এজন্য সে আমার সঙ্গে সব সময় খারাপ ব্যবহার করে। পরীবানু বলেন, এই মামলা হওয়ার পর থেকেই আমিনুল আবার আমার সঙ্গে সংসার করবে বলে আমাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে। এর কারণ হলো আমি যেন মামলা তুলে নেই। যে ব্যক্তি আমাকে একদিনও ফোন দিত না সে দিনে কয়েকবার ফোন করে আমার খবর নেয়। তবে আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চাই না। কারণ আমি জানি সে আমার সঙ্গে সংসার করার জন্য নয় মামলা তুলে নেয়ার জন্য এ অভিনয় করছে। কাবিনে যে টাকা উল্লেখ আছে সে টাকা আমাকে দিয়ে দিক। এই নির্যাতন সেলের যে আপারা আছেন তাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া তারা যেন আমিনুলকে কঠোর শাস্তি দেয়। আমার মতো একটা অসহায় মেয়েকে সে এমন বিপদে ফেলেছে এজন্য আল্লাহ যেন তার বিচার করে। বর্তমানে পরীবানু মানুষের বাসায় কাজ করে নিজের খরচ চালান। ছোটবেলায় মা মারা গেছেন। বাবা থেকেও নেই। একটা ছোট বোন তার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তার পাশে কেউ নেই একা জীবনের সঙ্গে লড়াই করছে পরীবানু। বুকে একটাই আশা নিয়ে সে ন্যায্য বিচার পাবে।
×