ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটের চাষীরা দিশেহারা

দাবদাহে মাছে মড়ক

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১০ জুন ২০১৫

দাবদাহে মাছে মড়ক

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য ঘেরে মড়ক শুরু হয়েছে। প্রচণ্ডর দাবদাহে ঘের ও পুকুরের পানি অস্বাভাবিক গরম হওয়ার কারণে মাছ মরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপর্যয় আরও বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মৎস্য চাষী ও ঘের মালিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। মৎস্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতর জানিয়েছে, প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে এ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুরু না হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলে তারা মনে করছেন। ঘের ও বিল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনাবৃষ্টি আর প্রখর তাপে ছোট-বড় জলাশয়গুলোতে পানি কমে গেছে। অত্যধিক দাবদাহে অল্প পানি দ্রুত খুব বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দিশেহারা চাষীরা তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি ঘেরে তুলছে। কিন্তু এ পানি অস্বাভাবিক লবণাক্ত হওয়ায় মাছ টিকতে-বাঁচতে পারছে না। অনাবৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানিতেও অস্বাভাবিক লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য চাষীরা জানান, বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি গ্রীষ্মে তাপমাত্রা অনেক বেশি। দেখা নেই বৃষ্টিরও। ফলে নদ-নদী দিয়ে ঘের ও জলাশয়ে প্রবেশ করা পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। আর যার প্রভাবে গত প্রায় এক মাস ধরে মাছে মড়ক শুরু হয়েছে। শত চেষ্টা করেও মাছ রক্ষা-বাঁচানো যাচ্ছে না। মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, বাগেরহাট জেলায় ঘেরের সংখ্যা ৭১ হাজারেরও বেশি। এসব ঘের এবং অধিকাংশ পুকুরে চিংড়ি, রুই, কাতলসহ সব ধরনের সাদা মাছের চাষ হয়। অতিরিক্ত তাপে ঘেরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পানি অস্বাভাবিক গরম হয়ে অনেক ঘেরে মাছ মরছে। যে সব ঘেরের গভীরতা বেশি, সেসব ঘেরে মড়কের হার অপেক্ষাকৃত কম বলে মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ ম-ল উল্লেখ করেন। সদর উপজেলার কাড়াপাড়া-মিরজাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, প্রচ- আর পানিতে অস্বাভাবিক লবণাক্ততার কারণে তার পাঁচটি ঘেরের প্রায় সব সাদা মাছসহ চিংড়ি মরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের এক শ’ একর জমির ঘেরের অন্তত বিশ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই এলাকার ঘেরগুলোতে মাছ মরতে শুরু করেছে। প্রায় সব ঘেরেই মাছ মরছে। অত্যধিক গরম এবং বৃষ্টি না হওয়াতে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে এ অঞ্চলের সব মৎস্য ঘেরের একই দশা বলেও জানান তিনি। বরগুনায় অবাধে পোনা নিধন মোস্তফা কাদের, বরগুনা থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিষখালী-বুড়িশ্বর-বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে কারেন্ট জালে অবাধে রেণু পোনা নিধন করা হচ্ছে। শুধু বরগুনা থেকে প্রতি বছর অর্ধশত কোটি টাকার রেণু পোনা অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে বাগদা ও গলদার পোনা ধরা হলেও এ জালে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার রেণু পোনা মারা পড়ছে প্রতিদিন। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ও ব্যাহত হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের বংশ বিস্তার। মৎস্য বিভাগ, প্রশাসন ও সরকারদলীয় নেতা কর্মীদের ম্যানেজ করেই চলেছে এসব অবৈধ রেণু পোনা ব্যবসা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে প্রতিবছর অর্ধশত কোটি টাকার রেণু পোনা অবৈধভাবে পাচার হয় খুলনা। প্রতিদিন বরগুনা ও তালতলী উপজেলার রেণু পোনা বরগুনা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যায় এবং পাথরঘাটা থেকে সংগৃহীত রেণু পোনা পিরোজপুরের ভা-ারিয়া হয়ে খুলনা যায়। বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারটি ট্রাক পোনা নিয়ে খুলনা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার রেণু পোনা থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার রেণু পোনা পাচার হয়। প্রতি বছর শুধু এ মৌসুমে অর্ধশত কোটি টাকার পোনা পাচার হয় বলে জানা গেছে। আর এ রেণু পোনা পাচারের নিরাপদ রুট বরগুনা ও পাথরঘাটা।
×