ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সপ্তম পাঁচসালা পরিকল্পনা চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ জুন ২০১৫

সপ্তম পাঁচসালা পরিকল্পনা চূড়ান্ত

এম শাহজাহান ॥ ছয়টি বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে-কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন, বিদ্যুত, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ, আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষাসংক্রান্ত সেবা, রফতানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন এবং রফতানির গতিশীলতা আনতে পণ্যের বৈচিত্রায়ণ। আগামী ১ জুলাই থেকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘাটতিসমূহ এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। শুধু তাই নয়, আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিকল্পনার শেষ অর্থবছর ২০২০ সালে তা ৮ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিদারিদ্র্য দূরীকরণের বাস্তবসম্মত উপায় গ্রহণ, দীর্ঘ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ওপর জোর দেয়া, দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিতে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ শস্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় জানিয়েছেন, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে সরকারের কৌশলগত দলিল প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ চলতি অর্থবছরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই ইতোমধ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, কারিগরি ও প্রযুুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানব গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, সরকারী আয় ও ব্যয়, ঘাটতি অর্থায়ন, বৈদেশিক সহায়তা, সরকারী-বেসরকারী খাতের ভূমিকা, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও সংস্কারের ধরন বিষয়েও নতুন পরিকল্পনা দলিলে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়িত করা। রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চায় বর্তমান সরকার। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মক্ষম সব বেকার ও প্রচ্ছন্ন বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে সামাজিক খাতের সাফল্য ধরে রাখতে গণমুখী কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ বছরে দেশে যত লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে তার প্রায় ৪৫ শতাংশ ঘটেছে গত পাঁচ বছরে। এই সময়ে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ দশমিক ৩ বছর হয়েছে। এছাড়া লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমান শীর্ষে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর লক্ষ্যভিত্তিক সম্প্রসারণ দারিদ্র্য হ্রাসে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হলে দারিদ্র্যের হার দ্রুত হ্রাস পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×