ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানবপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ জুন ২০১৫

মানবপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার

শংকর কুমার দে ॥ মানবপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা পালনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা অনুযায়ী মানবপাচার রোধে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নিয়মিত টহল, সতর্ক নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিজিবি, র‌্যাব, এসবি, ডিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মানবপাচারকারীদের হোতা, গডফাদার, পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে তালিকা প্রণয়ন, বিচারের জন্য তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত মাসে পুলিশ সদর দফতর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এ নির্দেশনা জারির পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মানবপাচার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশনায় উল্লেখ করা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারে মানবপাচারের শিকার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশীরা। মানবপাচার সম্পর্কে নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করে মানবপাচার সম্পর্কে পরিণতির বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার বিষয়েও নির্দেশনায় স্থান পায়। এই বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মানবপাচার রোধকল্পে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়। সূত্র জানায়, গত ৩ বছর ধরে রাজধানীর ঢাকার ফকিরাপুল, পল্টন, নয়াপল্টন, মতিঝিল গুলশানসহ বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠেছে মানবপাচারকারীদের সিন্ডিকেট। এতদিন মানবপাচারের বিষয়টি গোপন থাকলেও সম্প্রতি মানবপাচারের শিকারে পরিণত হওয়াদের গণকবর আবিষ্কার ও নির্যাতনের চিত্র প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, এই সিন্ডিকেটের থাবার বিস্তার চলে গেছে শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্থানে মানবপাচার হয়ে অনেক মানুষ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই বিষয়ে দালালদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় জিডিও হচ্ছে। সূত্র জানান, দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানা গেছে, কক্সবাজার, টেকনাফ, মহেশখালী, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ, ভোলা, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুর রাজশাহী খুলনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার মানবপাচার হয়েছে বেশি। মানবপাচার চক্রের ভয়ে নিখোঁজ স্বজনদের পরিবারগুলো এতদিন পুলিশের কাছে যেতে সাহস না পেলেও মানবপাচার রোধকল্পে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হচ্ছেন অনেকেই। মানবপাচার ইস্যুটি সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে যাওয়ার প্রেক্ষপটে স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ ও পৃথক অভিযানের ফলে মানবপাচারকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে এবং গ্রেফতার এড়িয়ে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে সাগরপথে বিদেশে যাওয়ার সময় গত ৩ বছরে কক্সবাজার জেলায় ২ হাজার ৯৪৫ জনকে উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এ সময়ে মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে ৩০৬টি এবং এ সব মামলায় আসামি করা হয়েছে এক হাজার ৫৩১ জনকে। এদের মধ্যে আটক হয়েছে ৪৭৭ জন। গত মাসে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারীর চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মানবপাচারকারী দলের হাতে পাচার হওয়ার শিকার স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ডিবির টিম মানবপাচারকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মানবপাচার রোধে গোয়েন্দা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদেন দেয়া হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মানবপাচারের জন্য কক্সবাজার, টেকনাফ, মহেশখালী, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ, ভোলা, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুর রাজশাহী খুলনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার জেলা ও থানার বিভিন্নস্থান এক সময়ে পরিণত হয়েছিল সোনার খনিতে। মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের গণকবর, বন্দীশিবির ও নির্যাতিতদের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর মানবপাচার রোধে কঠোর নির্দেশ দেয় সরকার। সরকারের কঠোর নির্দেশের ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মুখে মানবপাচার এলাকাগুলো এখন মানবপাচার বন্ধ হয়ে খাঁ-খাঁ করছে।
×