ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি বিঘিœত প্রথম দিনে ধাওয়ান ধামাকা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১১ জুন ২০১৫

বৃষ্টি বিঘিœত প্রথম দিনে ধাওয়ান ধামাকা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মূলত তিনি প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপ ধসিয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত। ব্যাটিংয়ের মনোভাবটা ধারালো। সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেল বাংলাদেশের বোলাররা। একমাত্র পেসার নিয়ে খেলা বাংলাদেশ দলের বোলিং বিভাগকে দুমড়ে-মুচড়ে দিলেন ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে। ফতুল্লার দর্শকরা একমাত্র টেস্টের প্রথমদিনেই দেখলো শিখর ধাওয়ান ধামাকা। শুরু থেকেই ব্যাটিং তা-ব চালিয়ে তিনি দিনশেষে অপরাজিত ১৫৮ বলে ২১ চারে ১৫০ রানে। বাংলাদেশ সফরের আগেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন। সেটা পূর্ণ হলো তার। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি আদায় করলেন। আরেক ওপেনার মুরালি বিজয়ের সঙ্গে তিনি উদ্বোধনী জুটিতে গড়েছেন ২৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। যা ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেরা। ধাওয়ান ধামাকার উল্টো চিত্র ছিল বিজয়ের ব্যাটে। বেশ ধৈর্য নিয়ে খেলে তিনি সঙ্গ দিয়েছেন তাকে। শেষ পর্যন্ত প্রথম দিন শেষে তিনি অপরাজিত আছেন ১৭৮ বলে ৮৯ রানে। অপেক্ষায় আছেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির। সেখান থেকে মাত্র ১১ রান দূরে তিনি। ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সফরের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেছিল ভারত। সেটি ছিল বিজয়ের ক্যারিয়ারে তৃতীয় টেস্ট এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম। প্রথম ইনিংসে ৩০ রান করেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন বিজয়। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি ভারতকে। সাড়ে ৫ বছর আগের ওই ম্যাচটির পর আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কখনও টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়নি ভারতীয় দল। তখনও ধাওয়ান ভারতীয় দলের সদস্য হননি। ২০১৩ সালের মার্চে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিল তার। ফলে অভিষেক হওয়ার পর দলকে কখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে দেখেননি তিনি। এবারই প্রথম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে টেস্ট খেলতে নামেন। অসিদের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই ১৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে শুরু করা ধাওয়ান অবশ্য গত বছরটা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। একটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বছরের গোড়ার দিকে, তবে বাকি ম্যাচগুলো ছিল ব্যর্থতায় ভরা। সে কারণে এবার বাংলাদেশ সফরে আসার সময়ই প্রত্যয় জানিয়েছিলেন শতক হাঁকাতে চান তিনি। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করার জন্য ফতুল্লায় প্রথম দিনেই যেন শুরু থেকে ঝড় তুললেন। চিরাচরিত মনোভাবটা বিন্দুমাত্র পাল্টাননি। শতক পাওয়ার আশা পূর্ণ করতে স্বকীয়তা ভুলে যাননি। তা কখনও করবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। তবে সেটা করতে গিয়ে তিনি হতাশায় পুড়িয়েছেন বাংলাদেশের বোলারদের। গত ১৫ বছরে ৯০ টেস্ট খেলা বাংলাদেশ একজন পেসার নিয়ে খেলেছিল এর আগে মাত্র একবার। সেটাও গত বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এদিনও নেমেছিল শুধু মোহাম্মদ শহীদকে নিয়ে। এছাড়া স্পিন সহায়ক হবে ফতুল্লার উইকেট সেজন্য দুইজন স্পেশালিস্ট স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও জুবায়ের হোসেন লিখন ছাড়াও সাকিব আল হাসানকে নিয়ে স্কোয়াড গড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ধাওয়ানের মারমুখী মনোভাব আক্রমণকেই তছনছ করে দিয়েছে। তাইজুল অবশ্য একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন। ইনিংসের ২৩.২ ওভারের সময় ব্যক্তিগত ৭৩ রানে থাকার সময় ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন, শর্ট মিডউইকেটে দাঁড়ানো শুভাগত হোম সেটা তালুবন্দী করতে পারেননি। এই ব্যর্থতায় যেন আকাশও কেঁদে উঠল। আর একটি বল হয়েছে, এরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগেই ধাওয়ান দারুণ একটি সূচনা দিয়েছেন ভারতকে। তিনি মাত্র ৪৭ বলেই ফিফটি হাঁকান। বৃষ্টি শুরুর সময় ৭১ বলে ৭৪ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন ধাওয়ান। সুযোগ সেই একটাই দিয়েছিলেন। বৃষ্টির পর আরও ৭৬ রান করেন তিনি। তবে আগের তুলনায় কিছুটা ধীর ছিলেন এবার। ১০১ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতরান পূর্ণ করেন। দিনশেষে অপরাজিত ছিলেন ১৫০ রানে। সবমিলিয়ে বৃষ্টির পর ৭৬ রান করতে তিনি খেলেছেন আরও ৮৭ বল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১৫ রানের ইনিংস খেলার পর ধাওয়ান শতক পেলেন ৭ টেস্ট ও ১৪ ইনিংস পর। ধাওয়ান যখন বৃষ্টি বিঘিœত দিনে ধামাকা চালাচ্ছিলেন তখনও বেশ ধীরস্থির ছিলেন বিজয়। দলের মতো তিনিও দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নেমেছেন। ভারতীয় ওপেনার হিসেবে ইতোমধ্যেই নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠা বিজয় টেস্ট মেজাজে সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন নিñিদ্র একটি ইনিংস। ক্যারিয়ারের ১১তম অর্ধশতক হাঁকান ৯৮ বল খেলে। শেষ পর্যন্ত ১৭৮ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত। মাত্র ১১ রান হলেই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন তিনি। উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে অবিচ্ছিন্ন ২৩৯ রানের রেকর্ড গড়েছেন দু’জন। এর আগে ২০০৭ সালের মে মাসে মিরপুরে দিনেশ কার্তিক ও ওয়াসিম জাফর ১৭৫ রানের অপরাজেয় জুটি গড়ে দলকে ১০ উইকেটের জয় এনে দিয়েছিলেন। সেটিই ছিল এতদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটে ভারতের সেরা জুটি।
×