ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানসম্মত শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১২ জুন ২০১৫

মানসম্মত শিক্ষা

পরিমাণ নয়, মানই গুরুত্বপূর্ণ। ভূরি ভূরি পাসের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের ভাল লাগার কারণ হয় বটে, কিন্তু কে না জানে শিক্ষায় মানটাই আসল কথা। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে আমরা স্বস্তি বোধ করি। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে দেশের হাল ধরবে। সেই ভবিষ্যত বিনির্মাণ গভীর সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়াই কাক্সিক্ষত। শিক্ষণীয় বিষয় এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি দুটোই শিক্ষার্থীর জন্য কেমন হবে, কী হবে তার ওপরই নির্ভর করে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার বিষয়টি। শিক্ষার মান বাড়াতে বিগত ছয় বছরে এ খাতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রণীত শিক্ষানীতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া গণিত, ভাষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাও সংযুক্ত হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে, যা সত্যিই বিস্ময় জাগানোর মতো। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি আরও একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার যা সচেতন মানুষকে আশ্বস্ত করবে। সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে দেশের প্রায় ২৮ হাজারের বেশি সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। অনলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন সম্পন্ন হবে এই নজরদারি। এ জন্য যাবতীয় ডিজিটাল উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম পরিদর্শনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য এটি বড় সুসংবাদ এতে কোন সংশয় নেই। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় যুক্ত। শিক্ষণ ও শেখার পদ্ধতির উন্নয়নের কথা সবার আগে বলতে হবে। শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে প্রয়োজনীয় ও মানসম্পন্ন পাঠদান সম্ভব হলে কোচিংয়ের মতো সময় ও অর্থনাশকারী প্রক্রিয়ার মধ্যে যাওয়ার যে দরকার পড়ে না তা বলাই বাহুল্য। সর্বোপরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে আমরা আশা করতে পারি। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে যুক্ত হবে। ফলে ক্লাস শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে সারাদেশের ক্লাসে শিক্ষকদের উপস্থিতির তথ্য ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। একইভাবে প্রতিদিন যুক্ত হবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, শ্রেণীকক্ষের পাঠদান কার্যক্রম, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের তথ্য, যার মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম পরিস্থিতি শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরাও কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘উপযোগী’ ওয়েবসাইট তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এই নজরদারি তখনই অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে যখন কার্যকর জবাবদিহির আওতায় চলে আসবে পুরো কর্মতৎপরতা। এ সঙ্গে আরও একটি প্রসঙ্গের উত্থাপন জরুরী। সেটি হলো উপযোগী শিক্ষা। আমরা বরাবরই বলে আসছি শিশুদের সাক্ষর করানোই মূল লক্ষ্য নয়, বরং তাদের বাস্তবোচিত জ্ঞান বিতরণ এবং কর্মমুখী পাঠদানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে যথাযথ কারিকুলাম বা পাঠ্যসূচী তৈরি করা সবচেয়ে বড় বিবেচনার বিষয়। শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে, সুর করে পড়া শিখছেÑ এটি সুন্দরতম দৃশ্য কোন সংশয় নেই। তবে এ দৃশ্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে তখনি যখন শিশুরা প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করবে। মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।
×