ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি মাতিয়ে গেলেন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১২ জুন ২০১৫

মোদি মাতিয়ে গেলেন বাংলাদেশ

তিস্তার পানি দিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে সিক্ত করার সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা না দিতে পারলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ দেশে তাঁর প্রথম সফরে অসাধারণ বাগ্মিতার সুনিপুণ শৈলীর পরম পরশে মানুষের মন সিক্ত করে গেলেন। মন জয় করলেন। যুগ যুগ ধরে ঝুলে থাকা দু’টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে ভারতের পার্লামেন্টে সীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে সীমান্ত চুক্তি বিলটি পাস হওয়ার পরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার খবর সে প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে আকাশচুম্বী করেছিল। প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় অনেক মানুষের মনে হতাশার ছায়া দেখা যাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। বিষয়টি অনুধাবন করেই হয়ত ভারতের অত্যন্ত বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পানি রাজনীতির বিষয় হতে পারে না। পানি নিয়ে কোন রাজনীতি নয়। পানি মানবিক মূল্যবোধের বিষয়। এগুলোর আলোচনা মানবিক মূল্যবোধ দিয়েই করতে হবে।’ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে তাঁর এই সুন্দর বক্তব্যই হয়তো সমস্যাটির সমাধানে সময় নিলেও ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। তবে এ কথা ঠিক যে, ঢাকা সফরকালে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে তিনি সবাইকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন। সভা ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শত শত আমন্ত্রিত অতিথি এবং সারাদেশে টেলিভিশনের লাখ লাখ দর্শক তাঁর বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। মোদির কথাবার্তা কারও কাছে মেকি মনে হয়নি। কোন ফাঁকিবাজি ছিল না তাঁর বক্তব্যে। তাঁর কথা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করেছে। মোদির বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কথার মতো ভণিতা বা শঠতার লেশমাত্র ছিল না। ‘স্বাধীনতার পর এ দেশে অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সফর করেছেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যেভাবে আনন্দ-উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল, এমনটা বোধহয় কমই হয়েছে। বিরল রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বে ঈর্ষণীয় পারদর্শিতাসম্পন্ন এবং কথা বলায় অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী এই নেতা তাঁর খোলামেলা বক্তব্যে আসলেই এদেশের মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। ৬ থেকে ৭ জুন দু’দিনের সফরকালে তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই সবাইকে যুক্তিপূর্ণ সুন্দর বক্তব্য দিয়ে বিমুগ্ধ করেছেন। মোহিত করেছেন। সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিলেন। ভারতের পার্লামেন্টকে ঐক্যবদ্ধ করে যেভাবে তিনি স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস করিয়ে ছিটমহল বিনিময়ের পথ সুগম করেছেন, তা শুধু তাঁর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণাতারই প্রমাণ করে না, তাঁর সুমহান নেতৃত্বের দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতা ও সততারও পরিচায়ক। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে থেকে ট্রেনের কামরায় কামরায় ঘুরে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি লেখাপড়া শিখে অনেক দেরিতে ১৯৯৮ সালে রাজনীতিতে এসেও ভারতের মতো বিশাল রাষ্ট্র এবং বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে প্রধানমস্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করছেন। মহান এ ভারতীয় নেতার মেধা, প্রজ্ঞা, প্রতিভা ও অধ্যবসায় সম্পর্কে বলতে বাংলা ভাষার সব বিশেষণের নির্যাস যোগ করলেও মনে হবে অপ্রতুল। জীবনের উচ্চ শিখরে তাঁর উত্থান অচিন্তনীয়। অবিশ্বাস্য। তিনি বলেন, ‘মানবতার শত্রু সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। এদের নির্মূল করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলােেরন্স’ দেখিয়ে শক্ত অবস্থান নেয়ার কথা সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরায় নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। নরেন্দ্র মোদি বলেন, সময় বদলেছে, বিশ্বও বদলেছে। একটা সময় ছিল যখন কেবলই ছিল বিস্তারবাদ। কার কত শক্তি, কে কার কাছে মাথা নত করবে, এটাই প্রাধান্য পেত। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে বিস্তারবাদ বা সাম্রাজ্যবাদকে কোন স্থান দেয়া হয় না। বিস্তারবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ নয়, বিকাশবাদ বা সমৃদ্ধিবাদই হচ্ছে এখন বিশ্বের নীতি। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু দু’চার’ কিলেমিটার জমির আদান-প্রদান নয়। এই চুক্তি দু’দেশের জনগণের মনকে যুক্ত করেছে। বিশ্বের অন্য কোথাও এটি হলে নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা ছুটে বেড়াত। কিন্তু আমরা গরিব দেশ বলে এসব দেখে না কেউ। তিনি বলেন, বিশ্বে যুদ্ধ হয় জমির জন্য। কিন্তু যেখানে বন্ধুত্ব রয়েছে সেখানে কখনও যুদ্ধ হতে পারে না। জমির জন্য বিশ্বের দেশগুলো লড়তে পারে, মরতে পারে, কিন্তু আমরা দু’টি দেশ জমিকে সম্পর্কের সেতু হিসেবে দাঁড় করিয়েছি। গত ৬ জুন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পাদিত হয়। এবার ছিটমহল হস্তান্তরের পালা। এখানে ছিটমহলের ইতিহাস নিয়ে কিছুটা অবতারণা করতে চাই। ১৯৪৭ সালের আগে ব্রিটিশ শাসনামলে কোচবিহারের মহারাজা এবং রংপুরের মহারাজা তাঁদের জমিজমার খাজনা ব্রিটিশদের দেয়া বন্ধ করে দেন। ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ১১১টি জায়গায় কোচবিহারের মহারাজার জমি এবং ভারতের ভেতরে ৫১টি জায়গায় রংপুরের মহারাজার জমি থেকে যায়। মহারাজাদের ব্যক্তিগত জমি হওয়ায় কোন দেশই ঐ সব জমির মালিকানা পায়নি। পরে ঐ জমিগুলোই ছিটমহল হিসেবে চিহ্নিত হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঐসব এলাকার মানুষ বাংলাদেশের ভেতরে থেকেও ভারতের কিংবা ভারতের ভেতরে থেকেও বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যায়। জমিদারি প্রথা বাতিল হওয়ায় প্রজারাই তাদের নিয়ন্ত্রিত জমির মালিক হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় অসাধারণ বাগ্মী মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশের সফর শেষে আমার মনে হচ্ছে নতুন সফর শুরু হলো। আমি আবার আসব। বাংলাদেশ ও ভারত একজোট হয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে চলবে। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাব। একসঙ্গে চলে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। আমরা সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। বাংলাদেশ ও ভারত দুটি দেশের শক্তি একজোট হয়ে কাজ করবে যাতে কোন সঙ্কট না আসে।’ ছত্রিশ ঘণ্টার সফর শেষে গত ৭ জুন রাত ৮-৪০ মিনিটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করে দেশে ফিরে যাওয়ার আগে আবার বাংলাদেশে আসার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তিনি কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার ভাষায় বলেন, ‘আবার আসিব ফিরে, এই ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়।’ ৭ জুন দুপুরে বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভারতের অটল বিহারী বাজপেয়ীকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে দেয়া ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ক্রেস্ট ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধু ও সংগঠনকে সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেয়া হয়। ২০১২ সালের ২৫ জুলাই ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর হাতে প্রদান করা হয় সেই সম্মাননা। এরপর কয়েক পর্বে ৩৩৮ জনকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর শেষে উভয় দেশ ‘নতুন প্রজন্ম নয়া দিশা’ শীর্ষক এক যৌথ ইশতেহারে ৬৫-দফা অঙ্গীকারনামা ঘোষণা প্রকাশ করে। এর মধ্যে মোদির পুরো সফরের সব দিক স্থান পেয়েছে। যৌথ ঘেষণায় বলা হয়েছে : বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন সব নদীর পানি বণ্টনে অঙ্গীকার প্রদান করছে। সেইসঙ্গে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তি করা হবে। একই সঙ্গে ভারত অঙ্গীকার করেছে, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ভারত গ্রহণ করবে না। বর্তমান অবস্থায় তারা টিপাইমুখ জলবিদ্যুত প্রকল্পও বাস্তবায়ন করবে না। যৌথ ঘোষণায় উভয় দেশ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ ক্ষেত্রে কোন দেশ কারও সীমানায় কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রশ্রয় দেবে না বলেও দৃঢ়ভাবে বলেছে। সেইসঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে এক দেশ অপর দেশকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে তথ্য আদান-প্রদানে সম্মত হয়েছে। গত ৭ জুন রবিবার বিকেলে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ৬৫-দফা যৌথ ইশতেহার পাঠ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়সঙ্কর। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও বেগবান করবে। যৌথ ইশতেহারে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বানার্জীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বিল বিনিময় হয়েছে। এছাড়া তিন নেতার উপস্থিতিতে বাস সেবার উদ্বোধনও করা হয়। নরেন্দ্র মোদির সফরের আরেকটি দিক হচ্ছে, বাংলাদশের সঙ্গে সড়কপথে ছয় রুটে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটান। এসব দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়ি বাধাহীনভাবে চলাচল করবে। আগামী ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সংশ্লিষ্ট চার দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। গত ৮ জুন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত ১৫ মিনিটের একান্ত বৈঠকে এ দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে প্রচ- কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। গত ৭ জুন থেকেই বিষয়টি তাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং যে যার মতো করে তা বলে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কেউ কেউ মুখরোচক কথাও বলছেন। তবে খালেদা জিয়ার মুখে মোদিকে এ দেশে গণতন্ত্র নেই বলা কথাটি নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। কারণ পাকিস্তানী বন্ধুদের পরামর্শে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘরে শুয়ে থেকে গণতন্ত্রের কথা বলা বেগম জিয়ার মুখে একেবারেই বেমানান। তাই আগামী দিনগুলোতেও তার আর বেশি কথা না বলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক ঢাকা সফর নিয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা সফরের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছেন। সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তি, প্রটোকল, সমঝোতা স্মারক ও যৌথ ঘোষণা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশ প্রায় সমভাবেই লাভবান হয়েছে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা স্থল সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের লাভই সমান সমান। সবচেয়ে বড় কথা হলো, দুই দেশের মধ্যে যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর থেকে গভীর হবে। বাংলাদেশ তিস্তা ও ফেনী নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির আশ্বাস পেয়েছে। বাংলাদেশকে ক্ষতি করে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ না করা, আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, ২০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা, নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুত আনতে ভারতের সম্মতি, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পে সহায়তা, নৌ-প্রটোকলের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য আনা-নেয়ার সুবিধা, ব্যান্ডউইথ রফতানি ও বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএসটিআই-এর পরীক্ষা ইত্যাদিতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহার, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল ইত্যাদিতে চুক্তি ও সমঝোতায় ভারত লাভবান হবে। যাই হোক, ভারতের নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশের মানুষ ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায় আস্থা রেখে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির জন্য গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকবেন। কারণ বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশের মানুষের জন্য তিস্তার পানির কোন বিকল্প নেই। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ধূর্ত ও সুচতুর মমতা ব্যানার্জীর কোন খেলা বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ন্যায্য পাওনা তিস্তার পানি চায়, পানি। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
×