ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাড় ॥ যেন মরণফাঁদ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১২ জুন ২০১৫

বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাড় ॥ যেন মরণফাঁদ

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব বয়ে আনলেও সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম সংযোগ সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহনের যাত্রীদের অনেকের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে। এই মহাসড়কে প্রায়ই বড় আকারের দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১১ মাসে এ মহাসড়কে ৭০টি দুর্ঘটনায় ১০২জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে তিন শতাধিক শিশু নারী পুরুষ। কিন্তু আহতদের সুষ্ঠুভাবে সেবা দানের জন্য সিরাজগঞ্জের একমাত্র সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আড়াই শ’ শয্যা বিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কোন ইউনিট নেই। যে কোন সময় বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা তাৎক্ষণিক মোকাবেলার জন্য কোন ইউনিট গঠন করা হয়নি। তবে সুখের বিষয় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের পাচিলায় যাত্রীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপরের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্ধ ধরে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। জুলাই মাসের শেষভাগে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর চালু হবার পর দেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হিসেবে পরিচিত এই সংযোগ সড়কটি। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ২৪ মে পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ১০২জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন শতাধিক শিশু-নারী- পুরুষ। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে নলকা মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটারেই ঘটেছে ১৯টি দুর্ঘটনা। এতে নিহতের সংখ্যা ৪৩, আহত ৯৮। এছাড়াও জেলার চারটি মহাসড়কে চলতি মে মাসে আটটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৩ জন। আহত হয়েছে ৫৩ জন। ২২ থেকে ২৪ মে এই তিন দিনে তিনটি বড় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭ জন। এ সময় আহত হয়েছে প্রায় ৮০ জন। গত ৫ জুন হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল এলাকায় মাইক্রোবাস ও নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও অন্তত ৫ জন যাত্রী আহত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের কোনাবাড়ি, সীমান্তবাজার ও হাটিকুমরুল এলাকায় মাত্র কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই এ চারটি দুর্ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কোন ইউনিট নেই। যে কোন সময় বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা তাৎক্ষণিক মোকাবেলার জন্য কোন ইউনিট গঠন করা হয়নি। শুধু তাই নয়- সিরাজগঞ্জে বেসরকারী পর্যায়ের শতকরা ৯০ ভাগ হাসপাতালের নিজস্ব কোন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়ী রেলক্রসিং, ঝাঐল ওভারব্রিজ, কোনাবাড়ি মফিজ মোড়, সীমান্তবাজার, পাঁচিলিয়া ও নলকা সেনগাঁতী, হোড়গাঁতী, হাটিকুমরলি-বনপাড়া মহাসড়কের গোজাব্রিজ, দবিরগঞ্জ, মহিষলুটী, মান্নাননগর, হামকুড়িয়া এবং বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের সাহেবগঞ্জ, ঘুড়কা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতি, ষোলমাইল, চান্দাইকোনা, বোয়ালিয়া, পূর্বদেলুয়া, শ্রীকোলা মোড়, তালগাছী ও শাহজাদপুর দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে এর মধ্যে কোনাবাড়ি মফিজ মোড়, সীমান্ত বাজার ও পাঁচলিয়া বাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ সুপার এস এম এমরান হোসেন জানান, বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় গাড়িগুলো বিকল হওয়ার কারণেই ঘটে। আমাদের কিছু সাইনবোর্ড দেয়া আছে। আরও কিছু সাইনবোর্ড দেয়া হবে যেগুলো রাতে জ্বলজ্বল করবে। তবে এ মহাসড়কটি ফোর লেন করা খুবই জরুরী বলে জানান তিনি। সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, মহাসড়কের চারটি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করে সেখানে সাইনবোর্ডসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
×