ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১২ জুন ২০১৫

পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ বর্ষণের পানিতে ডিএনডির প্রজেক্টের অভ্যন্তরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বর্ষণসহ আগের বর্ষণের পানিতে ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শিমরাইলের পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি পাম্প দিয়ে দ্রুত ডিএনডির পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না বিধায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ডিএনডি পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিএনডি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে হলে আরও অন্তত ২টি পাম্প হাউজ নির্মাণ করতে হবে। জানা যায়, প্রবল বর্ষণের পানিতে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ৪টি থানার ৮ হাজার ৩শ’ ৪০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি প্রজেক্টের অভ্যন্তরে ব্যাপক জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বর্ষণসহ আগের বর্ষণে ডিএনডির বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিলকারখানা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, নার্সারি, মৎস্য খামার ও সবজি খেতসহ নানাবিধ স্থাপনা কোথাও কোথাও ১ থেকে ৩ ফুট পানিতে ডুবে আছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। প্রবল বর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা ও রাজধানী ঢাকার ডেমরা ও শ্যামপুরসহ ৪টি থানার মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, রসুলবাগ, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, তুষার ধারা, বক্সনগর, হাজীগঞ্জ, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, হাজীনগর, মাতুইয়াল, শহীদনগর, সবুজবাগ, ভূইঘর, দেলপাড়া, ডগাইর, নয়াপাড়া ও ধনকু-াসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, সবজি খেত, নার্সারি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানায়, দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় তাদের উঠানে এখন হাঁটু সমান পানিতে ডুবে আছে। বাসার ভেতরে ১ ফুট পানি। মিজমিজি রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ মতিন জানায়, রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তাটি ডুবে গেছে। স্কুলের মাঠটিও পানিতে ভরে গেছে। নতুন মহল্লার নুরুল ইসলাম জানায়, বৃষ্টির পানিতে ড্রেন ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ফলে ময়লা-আবর্জনা ও নর্দমার পানি একসঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে এ নোংরা পানি দিয়েই আমরা চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিআইখোলা রাস্তাটি হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। তবে মধ্য ডিএনডিতে আরও ভয়াবহ অবস্থা বলে জানা গেছে। জালকুড়ি এলাকার কৃষক দীন ইসলাম জানায়, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের পুইশাক ও কলমি শাকসহ অন্যান্য সবজি এবং ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাদের এলাকার অনেক মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করে জীবন চলে। ডিএনডি কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তাদের সবজি নষ্ট হওয়ায় এখন তাদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে বেলা সাড়ে ১২টায় শিমরাইলের পাম্প হাউজে সরেজমিন গিয়ে কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এ সময় ১২৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি পাম্প চলতে দেখা গেছে। পাম্প অপারেটর মান্নান জানায়, নিষ্কাশন খাল দিয়ে ময়লা-আবর্জনা চলে আসায় ৪টি পাম্প চালানো যাচ্ছে না। তিনি জানান, এখন পাম্প হাউজের মুখে নিষ্কাশন খালে পানির উচ্চতা রয়েছে (পাম্প চালু থাকাবস্থায়) ২.৮৫ মিটার। পাম্প বন্ধ থাকলে ৩.১০ মিটারে চলে আসবে। ২.৭০ মিটার উচ্চতা স্বাভাবিক অবস্থা বলে তিনি জানান। শিমরাইলের পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী এম গোলাম সারওয়ার তার মুঠো ফোনে জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জানায়, ১৯৬৮ সালের পুরনো ৫১২ কিউসেট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি পাম্প দিয়ে ডিএনডি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, আরও ২টি পাম্প হাউজ নির্মাণ করলে ডিএনডিবাসী উপকৃত হবে।
×