ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার প্রসিকিউটর তুরিনকে হুমকি, থানায় জিডি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জুন ২০১৫

এবার প্রসিকিউটর তুরিনকে হুমকি, থানায় জিডি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার হুমকির কারণে বনানী থানায় জিডি করলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। জিডি নম্বর ৫০২। ফাতেমা নামে এক মহিলা ১২ মে তুরিন আফরোজের নামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠিটি পাঠায়। ১০ জুন দুপুরে ট্রাইব্যুনাল থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি এ চিঠি পান। চিঠিতে হুমকি ও অকথ্য ভায়ায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, চিঠির ভায়ায় এটা স্পষ্ট আনু মুহাম্মদ ও ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনুসারীদেরই কাজ। এদিকে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভূঁইয়া মাহবুব খান জিডি নেয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জিডি করেছেন তুরিন আফরোজ। তবে জিডিতে কী লেখা হয়েছে তা তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেছেন, জিডি করেছি। এখন তদন্তে সবকিছু বের হয়ে আসবে কে এই কাজাটি করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক। সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন সেটি আমার ও পরিবারের অশালীন, আক্রমণাত্মক, অশোভন, যৌন হয়রানিমূলক ও মানহানিকর। অন্যদিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছেন, আদালত অবমাননার রায় ঘোষণার পর যখন ডাঃ জাফরুল্লাহ এক ঘণ্টার সাজা ভোগ করছিলেন ট্রাইব্যুনালের ডকে তখন এজলাসের বাইরে কেউ গান ও নানা রকম অঙ্গভক্তি করছিলেন। এটা কখনও শোভনীয় কাজ হতে পারে না। এটাও আদালত অবমাননার শামিল। এছাড়া প্রসিকিউটরকে হুমকি প্রদান করাটাও এক ধরনের অপরাধ। ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেয়ায় ট্রাইব্যুনাল-২ এর দ-প্রাপ্ত ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ২২ নাগরিকের কেউ এ চিঠি পাঠিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, চিঠির বিষয়বস্তুতে এটি উল্লেখ থাকায় তাঁর এ ধারণা হচ্ছে।বুধবার এ চিঠি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালেই প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চিঠির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালকেও অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টিলিজেন্স), ডিজিএফআইসহ (ডিরেক্টরেট অব জেনারেল ইন্টিলিজেন্স) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠির বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, পেশাদারিত্বের চেয়েও একজন নারী হিসেবে আমাকে এ চিঠিতে আক্রমণ করা হয়েছে বেশি। চিঠিটির আপত্তিকর অংশ ব্যতীত সামান্য কিছু অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো- তুরিন আফরোজ, ১২ মে ২০১৫ “গতকাল আনু মুহাম্মদ প্রভৃতির বিরুদ্ধে তুমি ২নং ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক করেছ। যাঁদের তুমি আদালত অবমাননার শাস্তি দেয়ার জন্য এত কসরত করেছ তুমি তো তাদের একটা মরা... যোগ্যও নও। যাঁদের ‘শাস্তি’ দেয়ার জন্য এত চেষ্টা তাঁরা কারা? এঁদের মধ্যে যাঁরা আছেন তাঁরা দেশের সম্পদ। আনু বা জাফরুল্লাহর পায়ের ধুলার যোগ্যও তুমি না, তাই না? তুমি- এঁরা যে সমাজে থাকে, ঘোরাফেরা করে তার আশপাশ দিয়ে যাওয়ার যোগ্যতাটুকুও রাখো না। তুমি যে ‘মহান’ ট্রাইব্যুনাল এবং ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা বলছ তা এক আস্ত... ছাড়া কেউ বলে না। ট্রাইব্যুনালের তথাকথিত ‘জজ’রা তো পাড়ার গলির বিবাদ মীমাংসার যোগ্যতাও রাখে না। তুমি এক বস্তা পঁচা... তোমার চেহারা ও শরীর আয়নায় দেখো না? ফ্যাস ফ্যাস করে কথা বলো, দাঁতের মূল বের হয়ে কি কুৎসিৎই না দেখা যায়। তোমার...।” (চিঠির বাকি অংশটুকু এতটাই অশ্লীল ও অকথ্য যা প্রকাশ করার যোগ্য নয় )। উল্লেখ্য, বুধবার ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের দ- ও জরিমানার রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী আদালত অবমাননার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টার দ- ভোগ করেন। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে উক্ত টাকা রেজিস্ট্রারের বরাবর পরিশোধ করতে হবে। অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস কারাদ- ভোগ করতে হবে। একই আদেশে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অপর ২২ জনকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আদেশের পর ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাদে বাকি ২২ জনকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দিয়েছে টাইব্যুনাল। পরবর্তীতে তাঁদের কোনো মন্তব্য ও বিবৃতির কারণে ট্রাইব্যুনালের যেন মর্যাদা ক্ষুণœ না হয়। ক্ষমা পাওয়া ২২ জন হলেন- মাসুদ খান, আফসান চৌধুরী, হানা শামস আহমেদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আনুশেহ আনাদিল, লুবনা মারিয়াম, মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, এ্যাডভোকেট এ এ জিয়াউর রহমান, শিরিন হক, ড. সি আর আবরার, ফরিদা আক্তার, ড. বিনা ডি কস্টা, রেহনুমা আহমেদ, ড. শহীদুল আলম, লিসা গাজী, ড. জরিনা নাহার কবির, তিবরা আলী, শবনম নাদিয়া, মাহমুদ রহমান, দেলোয়ার হোসেন, আলী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিন ও নাসরিন সিরাজ এ্যানি।
×