ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কবে নাগাদ স্মার্টকার্ড দেয়া শুরু হবে তা অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৩ জুন ২০১৫

কবে নাগাদ স্মার্টকার্ড দেয়া শুরু হবে তা অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বারবার উদ্যোগ নেয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোন নাগরিকের হাতেই পৌঁছেনি স্মার্ট কার্ড। দীর্ঘদিন ধরেই ইসির পক্ষ থেকে নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিবর্তে স্মার্ট কার্ড দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ নিয়ে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গত ২৬ মার্চ থেকেই স্মার্ট কার্ড কার্যক্রমের উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু কোন নাগারিকের হাতেই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড। কবে নাগাদ এ স্মার্ট কার্ড দেয়া শুরু হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। অথচ চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর জুনের মধ্যে সব ভোটারের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রদান সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে লেমিনেটিং কার্ডের পরিবর্তে স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য গত ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের একটি চুক্তি হয়। এর আওতায় ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। চুক্তির সময় বলা হয় ২৬ মার্চ স্মার্ট কার্ড প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব ভোটারদের হাতে আগামী বছর জুনের মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু ২৬ মার্চের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রদানে ব্যর্থ হয় ইসি। এরপর ১ লা বৈশাখের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সে উদ্যোগও ভেস্তে যায় সিটি নির্বাচনের কারণে। ফলে কোন নাগরিক এখন পর্যন্ত তাদের কাক্সিক্ষত স্মার্ট কার্ড এখন পর্যন্ত হাতে পায়নি। এখন আবার আগামী আগস্টের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রদানের কথা ভাবা হচ্ছে। জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন অগাস্টে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হবে। তবে তিনি জানান, স্মার্ট কার্ড প্রদানে সবকিছু ইসির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এটা বলতে পারি এ বছরের মধ্যে স্মার্ট কার্ড নাগরিকরা হাতে পেতে শুরু করবেন। আমরা চাই আগামী জুনের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে যাক। ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন স্মার্ট কার্ড প্রদানে আর বিলম্ব হবে না। কার্ড দেয়ার প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। শীঘ্রই কার্ড প্রস্তুত শুরু হবে। উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ হওয়ার পরই গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে। জানা গেছে, বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হলেও এখন পর্যন্ত ইসির পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি কবে নাগাদ এ কার্ড প্রদান শুরু হবে। তবে জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পক্ষ থেকে আগস্টের মধ্যেই স্মার্ট কার্ড দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। আগস্টের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রদানের কথা বলা হলেও জানা গেছে, ইসির পক্ষ থেকে স্মার্ট কার্ড কার্যক্রম উদ্বোধনের জন্য কোন জাতীয় দিবসের কথা ভাবা হচ্ছে। জাতীয় কোন দিবসে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে স্মার্ট কার্ড প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন শুরু হবে। এরপর পর্যায় ক্রমে দেশের নিবন্ধিত সব নাগরিকদের হাতে তুলে দেয়া হবে উন্নতমানের এ কার্ড। দেশে বর্তমান সব ভোটারের হাতে লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয় পত্র রয়েছে। লেমিনেটেড সাদা রঙের জাতীয় পরিচয় পত্রে পুরুষ ভোটারের পিতা-মাতা, অবিবাহিতদের পিতা-মাতা এবং বিবাহিত নারীদের পরিচয় পত্রে স্বামী ও মাতার নাম রয়েছে। লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয় পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো রয়েছে কার্ডের বামপাশে ওপরে। মাঝখানে শাপলা চিহ্নের জলছাপ রয়েছে। কার্ডের বাম পাশে স্বাক্ষরসহ ছবি এবং ডানপাশে বাংলা-ইংরেজিতে নাম, পিতা-মাতা, জন্মতারিখ ও পরিচিতি নম্বর। অন্য পৃষ্ঠায় ওপরে ঠিকানা ও নিচে বারকোড। কিন্তু স্মার্ট কার্ডে একজন ভোটারের সব তথ্যই সংরক্ষিত থাকবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের সব তথ্য সংরক্ষণে মাইক্রোচিপ থাকবে স্মার্ট কার্ডে সামনের অংশে। জন্ম তারিখ ও পরিচিতি নম্বর থাকবে তার পাশে। অন্য পৃষ্ঠায় ওপরের অংশে বারকোড রাখা হবে। কার্ডের ওপর নাগরিকের নাম, বাবা ও মায়ের নাম থাকলেও স্বামী বা স্ত্রীর নাম রাখা হবে না। তবে কার্ডের ইন্টারনাল মেমোরি মাইক্রোচিপে ভোটারের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্মার্ট কার্ড এমন প্রযুক্তিতে তৈরি করা যার মধ্যে একজন ভোটারের প্রয়োজনীয় সব তথ্যই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত কার্ড আকৃতির এমন একটি কার্ড যার মধ্যে সমন্বিত বর্তনী বা ইনট্রিগেট্রেড সার্কিট রয়েছে। স্মার্ট কার্ডের মধ্যে মূলত নিরাপত্তাসূচক বর্তনী যুক্ত মেমোরি বা স্মৃতি ভা-ার দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও এর মধ্যে এক ধরনের মাইক্রোপ্রসেসর কার্ড রয়েছে যার মধ্যে মেমোরি ছাড়াও মাইক্রোপ্রসেসর থাকে। ভোটারদের মধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিবর্তে স্মার্ট কার্ড প্রদানের পাশাপাশি ১৮ বছরের কম বয়সীদের নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি।
×