ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিরেই জুবায়েরের জবাব

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৩ জুন ২০১৫

ফিরেই জুবায়েরের জবাব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্যারিয়ারের শুরুতেই দলে থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক। তরুণ লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন তিন টেস্ট খেলেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লা টেস্টে নামার আগে। শুরুটা ভাল হয়েছিল এবং দলের প্রথম স্বীকৃত লেগস্পিনার হওয়ার পরেও তাঁকে উপেক্ষা করেছেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের প্যানেল। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অভিজ্ঞতার অভাব এবং অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের গতিময় উইকেট ও পরিবেশ বিবেচনায় তাঁকে নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছিলেন ফারুক। তবে দুই ওয়ানডে খেলে প্রতিভার ছাপ দেখানো জুবায়েরকে গত এপ্রিল-মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজেও সুযোগ দেয়া হয়নি। টেস্ট দলে থাকার পরেও খেলানো হয়নি। যদিও বরাবর দলের প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম তাঁকে দলে চেয়েছেন। দেশের অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞও বাংলাদেশের হয়ে জুবায়েরকে খেলতে দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু জুবায়ের উপেক্ষিত হয়েছেন। তবে হাল না ছেড়ে খেলার সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে অনুশীলন করেছেন জুবায়ের। অবশেষে ভারতের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টে মোক্ষম জবাব দিয়েছেন। শিকার করেছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহাকে সরাসরি বোল্ড করেছেন। ফতুল্লা টেস্টে অন্য বাংলাদেশী বোলারদের মতো জুবায়েরেরও খুব বাজে কেটেছে। অনেক মার হজম করতে হয়েছে শিখর ধাওয়ান ও মুরালি বিজয়ের কাছে। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর শুক্রবার তৃতীয় দিনে অবশ্য ঠিকই জ্বলে উঠেছেন স্পিনাররা। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছেন ২০ বছর বয়সী জুবায়ের। ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগুতে থাকা ধাওয়ানের পর রোহিত শর্মাকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে শুরু করেছিলেন সাকিবই। এরপর তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিলেন জুবায়ের। দেখালেন তাঁর গুগলি ছোঁড়ার ক্ষমতা। সবচেয়ে দামী উইকেটটাই দখল করলেন। ভারতীয় অধিনায়ক কোহলিকে উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি দারুণ এক গুগলিতে বিভ্রান্ত করে বোল্ড করে দিয়ে। এরপর টেস্ট থেকে অবসর নেয়া মহেন্দ্র সিং ধোনির উপযুক্ত উত্তরসূরি উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমানকেও বেশিদূর এগোতে দিলেন না। মিডলঅর্ডারের দুই স্তম্ভই ভেঙ্গে দিলেন জুবায়ের। ঋদ্ধিমানকেও গুগলি বলের ইন্দ্রজালে বোল্ড করে দিয়েছেন। রানটা একটু বেশিই খরচ করেছেন জুবায়ের। কিন্তু দারুণ দুটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে অনুপ্রেরণা তৈরি করেছেন। সব মিলিয়ে ১৯ ওভার বোলিং করে ১১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট। জুবায়েরের প্রত্যাবর্তনটা এখন পর্যন্ত ভালই হয়েছে বলা যায়। নেটে বোলিংয়ের সময়ও এক ওভারে ৩/৪ টি বাজে বল ছোড়েন জুবায়ের। তাছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটটা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে এখানে কোন লেগস্পিনারের মূল্যায়ন নেই। যুগে যুগে এদেশে বাঁহাতি স্পিনারদেরই দেখা গেছে। সে কারণে প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় লীগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগেও নিয়মিত খেলতে পারেননি জুবায়ের। এ কারণে প্রধান নির্বাচক ফারুকও তাঁকে দলে নিতে গররাজি ছিলেন সবসময়। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে অভিষেকেই দুই উইকেট এবং তৃতীয় টেস্টে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। আবার ফিরেই জবাবটা দিয়ে দিলেন। জুবায়ের নিয়মিত খেলার সুযোগ না পেলে দেশের ক্ষতি হবে বলে মনে করেন সাকিব। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল ও আরও উইকেট পাবে, কারণ দারুণ বোলিং করছিল। জুবায়েরের জন্য কাজটা কঠিন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে খেলার পর সে তেমন সুযোগ পায়নি। একজন লেগস্পিনারকে অনবরত ঠিক জায়গায় বল ফেলতে হয়। কিন্তু প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় লীগ কোথাও নিয়মিত খেলেনি সে। নিয়মিত খেলার সুযোগ না পাওয়াতে আমার মনে হয় তাঁর নিজের ক্ষতি যেমন হচ্ছে তেমনি দলের এবং দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। নেটে একজন খেলোয়াড় এমনভাবে ব্যাটিং করে যে শচীনের মতো মনে হয়, আবার খুব ভাল ব্যাটসম্যানকে রুবেল হোসেন মনে হয়। আসল বিবেচনা ম্যাচে।’
×