ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপিতে উচ্ছ্বাস নেই কেন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ জুন ২০১৫

মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপিতে উচ্ছ্বাস নেই কেন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতে বিএনপি কী পেল এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। তবে এ সাক্ষাতে বিএনপির যে কোন লাভ হয়নি তা দলের নেতাদের বক্তব্য ও ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এ সাক্ষাতের আগে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এখন উল্টো সুরে কথা বলছেন। বহু দেনদরবার করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত পেলেও কার্যত এতে কোন লাভ হয়নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে মোদি তাঁর কাছ থেকে যা জানতে চেয়েছেন তা নিয়ে বিব্রত হয়েছেন তিনি। তাঁকে বসিয়ে রেখেই জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। এছাড়া মোদি জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার কথা বলায় মনে মনে নাখোশ হয়েছেন খালেদা জিয়া। আর এ খবর পেয়ে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের দিনেই জামায়াত একটি বিবৃতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদির সফরের সমালোচনা করেছে। তবে বিএনপির কোন কোন নেতা নতুন করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথাও বলছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থী শত নাগরিক কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ নরেন্দ্র মোদির সফরে যে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার অধিকাংশই ভারতের স্বার্থে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের আগে জাতীয় সংসদে ও বাইরে এ আলোচনা করা উচিত। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জনগণকে অন্ধকারে রেখে চুপচাপ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। তাই আশা করছি, চুক্তিগুলো সংসদে উত্থাপন করা হবে। এ নিয়ে জাতীয় সংসদ ও সংসদের বাইরে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত, যাতে কোন লুকোচুরি না থাকে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দানবীর হাতেম তাইয়ের মতো ভারতকে সকল প্রকার সুবিধা দিচ্ছে। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেন, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দেয়া হয়েছে। যে চুক্তিটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই তিস্তা চুক্তিই করা হয়নি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে ২২টি চুক্তি হয়েছে তার একটিও আমাদের স্বার্থে হয়নি। কিন্তু মোদির বক্তব্যে আমরা আশান্বিত হয়েছি। তিনি আমাদের একসঙ্গে নিয়ে চলবেন বলেছেন। আমরা অপেক্ষা করব। বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে আমরা পানির অভিন্ন বণ্টন চাই। সংস্কৃতি বিনিময়, সীমান্তে হত্যা বন্ধ চাই। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি না হওয়াকে সরকারের ব্যর্থতা বলে অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। যদিও মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, সাক্ষাতকালে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। এ সাক্ষাত আমাদের জন্য ইতিবাচক। আমরা দেশের গণতন্ত্র অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি। এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে তাঁরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় তুলে ধরেছেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির বিষয়টি। তিনি বলেন, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা। মোদি তাঁদের কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলেছেন কিনা- জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, এ প্রশ্নের জবাব তাঁরাই দেবেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারতকে উপেক্ষা করে রাজনীতি করা সম্ভব নয় এটা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অতীতে ভারতকে এড়িয়ে চলে বিএনপি ভুল করেছে। বিএনপিকে এখন দল গোছাতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলে শুদ্ধি অভিযান না চালানো হবে আত্মহত্যার শামিল। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাক্ষাত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র জল্পনা-কল্পনা চলছেই। সাক্ষাতকালে মোদি খালেদা জিয়াকে স্পর্শকাতর ৩টি বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বিষয়গুলো এমনই স্পর্শকাতর ছিল যে, খালেদা জিয়া এসব প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারছিলেন না। বরং ৩টি বিষয়ের সঙ্গেই বিএনপি জড়িত থাকায় তিনি বিব্রত হন। যেচে মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়ে তিনি নিজেই বেকায়দায় পড়েন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ৬ জুন ঢাকা সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরের দ্বিতীয় দিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে গিয়ে দলের অন্য পাঁচ সিনিয়র নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রায় ৪০ মিনিটব্যাপী এ সাক্ষাত অনুষ্ঠানে ১০ মিনিট মোদি-খালেদা একান্তে কথা বলেন। এ ১০ মিনিট তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে সে বিষয়ে বিএনপি কিংবা ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতকালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ করেছেন খালেদা জিয়া। এছাড়া তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সরকার মামলা-হামলা করে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে তিনি গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিবেশী দেশেও যাতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় সে ব্যাপারে মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে সাক্ষাতকালে খালেদা জিয়ার এ কথার প্রেক্ষিতে মোদি কী বলেছেন তা প্রকাশ না পেলেও মোদি ঢাকা ত্যাগের আগে জনবক্তৃতায় বলে গেছেন, তার দেশ মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেবে না। তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-েরও ভূয়সী প্রসংশা করেন। তবে তার এক ঘণ্টার বক্তব্যে একবারের জন্যও গণতন্ত্র শব্দটি উচ্চারণ করেননি। এতেই বোঝা যায় খালেদা জিয়া দেশে গণতন্ত্র নেই বলে যে অভিযোগ করেছেন তা আমলে নেননি নরেন্দ্র মোদি। জানা যায়, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্তে কথা বলার সময় একটি লিখিত পত্রে খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের যে ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তাতে মোদি বিরক্ত হয়েছেন। তবে খালেদা জিয়ার অভিযোগ শোনার পর তিনিও খালেদা জিয়ার কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চান। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, তিনটি স্পর্শকাতর বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির করা তিন প্রশ্নে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। খালেদা জিয়ার কাছে নরেন্দ্র মোদির প্রথম প্রশ্ন ছিল- ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে তিনি কেন সাক্ষাত করেননি। আর সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী বানচাল করতে কারা সেদিন ঢাকায় হরতাল ডেকেছিল? খালেদা জিয়া উত্তরে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য জোটসঙ্গীরা যৌথভাবে হরতালের ডাক দিয়েছিল। কেন তিনি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাত করেননি তার জবাব দিতে পারেননি। তবে মোদি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। খালেদা জিয়ার কাছে মোদির দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- ২০০৪ সালে চীন থেকে গোপনে দশ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধভাবে খালাস করে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার যে আয়োজন করা হয়েছিল সেটা ঘটেছিল আপনার (খালেদা জিয়ার) প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে। আর সেই গোপন আমদানির সঙ্গে আপনার ক্যাবিনেটের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী (স্বরাষ্ট্র ও শিল্পমন্ত্রী) জড়িত ছিলেন। শোনা যাচ্ছে, আপনি এবং আপনার দল ওই ঘটনার তদন্তে খুব একটা সাহায্য করেননি? খালেদা জিয়া এই প্রশ্ন শুনে এতটাই বিব্রত হন যে, তিনি তার কোন জবাবই দিতে পারেননি। খালেদা জিয়ার কাছে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় প্রশ্ন ছিল বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে। মোদি খালেদা জিয়াকে বলেন, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁর দলের ও জোটসঙ্গী জামায়াতের নেতাদের সম্পৃক্ততার কথা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ তদন্তে উঠে আসছে। বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের ওই সব দোষীকে আড়াল না করে তাদের শাস্তির জন্য তদন্তকারীদের সাহায্য করার আশ্বাস দেয়া তাঁর নৈতিক দায়িত্ব। সূত্রমতে, এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়া কোন জবাব দেননি। বরং মোদির এ প্রশ্নেও তিনি বিড়ম্বনায় পড়েন। সাক্ষাতকালে দেশে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ করতে গিয়ে ‘খাগড়াগড় নিয়ে মোদির প্রশ্নে বিব্রত খালেদা জিয়া’ শিরোনামে ভারতের ‘দেনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সরকারীভাবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য উদ্যোগী হন। ঢাকায় ভারতীয় কূটনীতিকদের কাছে তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দেনদরবার করেন মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। ঢাকার বিরোধী রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা ছিল নরেন্দ্র মোদি খালে জিয়াকে সাক্ষাতের সময় নাও দিতে পারেন। কিন্তু মোদি সে পথে না গিয়ে খালেদা জিয়াকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। খালেদা জিয়াকে যথার্থ মর্যাদা দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁর হোটেল স্যুটে কথা বলেন, যার মধ্যে ১০ মিনিট তাঁরা একান্তে কথা বলেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই সাক্ষাতে তাঁদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হয়েছিল তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে স্টেটসম্যানের খবরে বলা হয়, মোদি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই পুরো হোমওয়ার্ক করে নিজেকে তৈরি করেন। এই বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার দলীয় মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁদের নেত্রী মোদির কাছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ করেছেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণতন্ত্র ও দায়বদ্ধতা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র হুমকির মুখে জানিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের পর এ নিয়ে দু’দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচন চলছে। সেই সঙ্গে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অভিজ্ঞমহলের মতে, ঢাকা সফরে এসে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাস ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করে গেছেন নরেন্দ্র মোদি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে নরেন্দ্র মোদি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার কথা বলেছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সরকারে থাকাবস্থায় জঙ্গীবাদের উত্থান, দশ ট্রাক অস্ত্র, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গীবাদবিরোধী জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ এবং ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ দূর করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করলে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। এর ফলে বিভিন্নভাবে মহাজোট সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত সরকার। এদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে বিএনপিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং। এরই অংশ হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। খালেদা জিয়াকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয় ভারত। সফরকালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী ও বিরোধী দলের বেশ ক’জন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে ভারতের দূরত্ব কমার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে আবার বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী অনুসারে প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাক্ষাত করার কথা থাকলেও খালেদা জিয়া সাক্ষাত করতে সোনারগাঁও হোটেলে যাননি। এতে খালেদা জিয়ার প্রতি চরম ক্ষুব্ধ হয় ভারত। ফলে নতুন করে ভারতের রাজনৈতিক দল ও সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিএনপিকে খেসারতও দিতে হয়। সূত্রমতে, বহু দেনদরবার ও লবিংয়ের পর মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ পান খালেদা জিয়া। কিন্তু সেই সাক্ষাতে বিএনপির যে লাভ হয়নি তা মোদির তিন প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। এসব প্রশ্নের জবাব খালেদা জিয়া এখন কেন কোন দিনই দিতে পারবেন না। কারণ এসব প্রশ্নের উত্তর দিলে তিনি নিজে বা তাঁর দলই ফেঁসে যেতে পারে। তাই মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের পর শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশও মনে করছেন মোদির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কার্যত বিএনপির কোন লাভ হয়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদে দলের কোন প্রতিনিধি না থাকায় সফরে আসা বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে বিএনপি ও এর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কোন গুরুত্ব পান না। তাই এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়ে মোদির প্রশ্নে বিব্রত হয়েছেন। অথচ খালেদা জিয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। এদিকে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে পর্যাপ্ত সময় পাবেন না বুঝে নিজের বক্তব্য একটি কাগজে নোট করে নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু সেগুলির সবক’টি তিনি পড়েও উঠতে পারেননি। তাই একান্তে সাক্ষাতের সময় একটি লিখিত বক্তব্য মোদির কাছে দিয়েছেন। এতে তিনি দেশের বর্তমান সরকারই নয়, ভারতের সাবেক সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ নরেন্দ্র মোদি আমলে নেননি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
×