ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ বকেয়া বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের;###;বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই লাভের মুখ দেখছে না

রাষ্ট্রায়ত্ত ১১২টি প্রতিষ্ঠানের ডিএসএল বকেয়া সোয়া তিন কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৩ জুন ২০১৫

রাষ্ট্রায়ত্ত ১১২টি প্রতিষ্ঠানের ডিএসএল বকেয়া সোয়া তিন কোটি

রহিম শেখ ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত ১১২টি প্রতিষ্ঠানের ডিএসএল (ডেবিট সার্ভিস লায়াবিলিটি) বকেয়ার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এখনও লাভের মুখ দেখেনি। আর দিন দিন এ সব ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ডিএসএলের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ ২২৫ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের একই সময় পর্যন্ত এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৬ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের উন্নয়ন প্রকল্প ও অনুন্নয়নমূলক কাজে অর্থায়ন করে থাকে। ডিএসএল হলো সরকারের সেই পাওনা অর্থ। উন্নয়ন প্রকল্প ও অনুন্নয়নমূলক কাজের অর্থের উৎস দুইটিÑ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে থেকে প্রাপ্ত প্রকল্প সহায়তা। উভয় ক্ষেত্রেই সরকার চুক্তির মাধ্যমে ঋণস্বরূপ এ অর্থ ওই সংস্থাগুলোকে প্রদান করে থাকে। ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির শর্তানুসারে পরিশোধসূচী অনুযায়ী কিস্তিভিত্তিক সুদসহ অথবা সুদ ব্যতীত এ অর্থ সরকারকে ফেরত প্রদান করতে হয়। কিন্তু শর্ত পালন না করার কারণে এবং পাওনা পরিশোধ না করায় এ দায়ের পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সব সংস্থা, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকার সংস্থার কাছে সরকারের বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সঙ্কটের কারণে সরকার এ সব ঋণ বিভিন্নভাবে প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যায়, গেল বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১২টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে সরকারের পাওনা তিন কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৯.২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া পাওনা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। পিডিবির কাছে পাওনা দুই কোটি ১৩ হাজার ৯০৫.২০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এক বছরেই বেড়েছে এক কোটি ৪০ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ঋণ বকেয়া পড়েছে বিদ্যুত বিভাগের নয় প্রতিষ্ঠানের এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ছয় প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে বিদ্যুত বিভাগের ৯টি প্রতিষ্ঠানের ডিএসএলের বকেয়ার পরিমাণ ২৪,৯৫২,৬৭৬ দশমিক ৬১ কোটি টাকা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৪,৪৬২,৮৬ কোটি টাকা। বিদ্যুত বিভাগের বিপিডিবির কাছে বকেয়া ২০,০১৩,৯০৫ দশমিক ২০ কোটি টাকা, আরইবির কাছে ১,৪৬১,০৩৭ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা, ডিপিডিসি (পুরাতন ডেসা) ৩৩৬,৬৫৩, দশমিক ৭১ কোটি টাকা, আরপিসিএলর কাছে ১০,২৪৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা, পিজিসিবির কাছে বকেয়া ১,৯০৬,০০৫ দশমিক ২৫ কোটি টাকা, ডেসকোর কাছে ৪৭,৭৮৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা, ইজিসিবির কাছে ১১৩,০১৮ দশমিক ২৯ কোটি টাকা, আশুগঞ্জ পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির কাছে ৩৫৫,৬৮০ কোটি টাকা এবং নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ৭০৮,৩৬৪ দশমিক ০৫ কোটি টাকা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পেট্রো বাংলার কাছে ৯৮৫,৮৮৭ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা, বিপিসির কাছে ২,২২৮,৪২৩ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে ৪,১৩৮ দশমিক ২০ কোটি টাকা, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির কাছে ৩০,৭৬০ দশমিক ০৮ কোটি টাকা, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির কাছে ১১৫,৪৫৩ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির কাছে ৮১,৬২২ দশমিক ৩২ কোটি টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে ৮৮৯,১৯৫ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিসিআইসির ৬৮৬,২১৯ দশমিক ০৯ কোটি টাকা, বিএসইসির ১৬১,৬৭৮ দশমিক ৩১ কোটি টাকা। বিএসসিআইসির কাছে ২,৯৮৫ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা এবং বিএসএফআইসির কাছে ৩৮,৩১২ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা। অর্থবিভাগের ১০ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫৭৭,৭১৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ১৬,৯৩৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, বিডিবিএলের কাছে ১,৯৮২ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা, বিকেবির কাছে ৭,২৫৪ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা, আইসিবির কাছে ৯৭৪ দশমিক ০৩ কোটি টাকা, বিএইচবিএফসির কাছে ৪০,১১১ দশমিক ২৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৪০,১১১ দশমিক ২৫ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের কাছে ১৫,১৯০ দশমিক ১৩ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের কাছে ১৫,৯১৩ দশমিক ০৩ কোটি টাকা, আইডিসিওএলের কাছে ৪০৯,৯৮৯ দশমিক ৯০ কোটি টাকা এবং বিএমডিএফের কাছে ২৯,২৫২ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের ৫২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১,২১৮,৬০০ দশমিক ০৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা ওয়াসাসহ দেশের বিভিন্ন পৌরসভা রয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট ২৬৭,০১৯ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪৭৩,২৫২ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের ৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৮৭,৯৬৪ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা, মৎস্য মন্ত্রণালয়ের বিএফডিসির কাছে ৪২০,৬২ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ৫টি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৫৪,৯৭০ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ৩০,৭৯৯ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা। তথ্যমন্ত্রণালয়ের বিএফডিসির বকেয়া ৫,৭৯১ দশমিক ০৩ কোটি টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিএফএফডব্লিউয়ের কাছে ৯,৩৬৮ দশমিক ২৬ কোটি টাকা।
×