ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দালাল চক্রের ফাঁদে জর্দান যাত্রা

ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে গিয়ে লাশ হলো রেশমা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ জুন ২০১৫

ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে গিয়ে লাশ হলো রেশমা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ দালালদের লোভনীয় ফাঁদে পড়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন খুলনার রূপসা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের গৃহবধূ রেশমা বেগম (৩৫)। তিনি নন্দনপুর গ্রামের দরিদ্র দেলোয়ার হোসেন দিলুর স্ত্রী এবং খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামের মোঃ শাহজাহানের মেয়ে। শনিবার ভোরে রেশমার লাশ ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন রেশমার স্বজনরা। রেশমার স্বামী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দালাল চক্রকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল জর্দানে গিয়েছিল রেশমা। জর্দানে পৌঁছে রেশমা ফোন করেছিল। কি কাজ করতে হবে সে ব্যাপারে তখন কিছু বলেনি। গত ৩ জুন মোবাইল ফোনে সে কান্নাকাটি করে বলে আমি আর পারছি না। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। এর পর ৮ জুন জর্দানের বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে জানানো হয় রেশমা বেগমের লাশ পাওয়া গেছে। লাশের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের ডায়াল কলের লিস্ট চেক করে ফোন করেছে দূতাবাস। শনিবার ভোরে লাশটি দেশে আসবে।’ দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, ৩ জুনের পর রেশমার সঙ্গে আর কোন কথা হয়নি। ওর মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, কিভাবে মারা গেছে তার কিছুই জানা নেই। কাঁদতে কাঁদতে দেলোয়ার হোসেন বলেন, রেশমার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর শিশু সন্তান আবীর (৭) ও আমীর (৪) মায়ের জন্য খুব কান্নাকাটি করছে। আমি তাদের এক হতভাগ্য বাবা। কোন সান্ত¡না দেয়ার ভাষা আমার নেই। তিনি বলেন, রেশমার ব্যাপারে কোথাও কিছু না বলার জন্য দালাল চক্র হুমকি দিয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে তিনি লাশ আনতে যেতে পারছেন না। ‘আপনারা আমারে রেশমার লাশটা এনে দেন। আর যারা তাকে মেরেছে তাদের বিচার করেন।’ রেশমার স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবেশী নন্দনপুর গ্রামের ফজলে হওলাদারের স্ত্রী নাসিমা বেগম প্রায়ই বাড়িতে এসে রেশমাকে বিদেশে যাওয়ার জন্য বলতেন। তার জামাই ফুলতলা উপজেলভর বাসিন্দা মোঃ জাকারিয়া বিদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে। নাসিমা বেগম রেশমা বেগমের বাবা-মাকেও বলেন, মেয়ে বিদেশে গেলে অনেক টাকা বেতন পাবে। এক পর্যায়ে রেশমা বিদেশ যেতে সম্মত হয় এবং ৭০ হাজার টাকা দালালদের দিয়ে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে জর্দানে যাওয়ার ব্যাপারে চুক্তি হয় তাদের। রেশমার পাসপোর্ট ও ভিসা করেন রেশমার বাবা-মা। নিজের স্ত্রীকে বিদেশে না যাওয়ার জন্য অনেক বুঝিয়েও ফল পাননি স্বামী দেলোয়ার হোসেন। চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল দালাল চক্রের সদস্যরা রেশমা বেগমকে নিয়ে বিমানে চড়েন। ওই সময় দেলোয়ার হোসেন ঢাকায় বিমানবন্দরে স্ত্রীকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন।
×