ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসকদের নগরমুখিতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৪ জুন ২০১৫

চিকিৎসকদের নগরমুখিতা

প্রকৃত নগরবাসীর তুলনায় গ্রাম থেকে এসে স্থায়ী হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই শহরে বেশি। ধাপে ধাপে অবকাঠামোগত উন্নতির ফলে দেশের বহু গ্রাম আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা প্রায় শহরই হয়ে উঠেছে। নাগরিক সুবিধা এখন গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার কারণে গ্রাম আর শহরকে খুব মোটা দাগে আলাদাও করা যায় না। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতির ফলে একটি জেলার প্রধান শহরের সঙ্গে ওই জেলায় অবস্থিত দূরবর্তী গ্রামের যাতায়াত সময়ও অনেক কমে এসেছে। জেলা শহরে অবস্থান করে ওই জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের কর্মস্থলে গিয়ে দিনের অফিস শেষে আবার আবাসস্থলে ফিরে আসাও এখন সহজ হয়ে উঠছে। তবে এসব হিসাবের বাইরে রাখতে হবে রাজধানী ঢাকাকে। এই মহানগরীর সুযোগ-সুবিধা অন্য যে কোন শহরের তুলনায় বেশি। একই সঙ্গে বিড়ম্বনার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে ঢাকা মহানগর। যানজটের কারণে ঢাকার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাওয়ার বিষয়টি বর্তমানে অন্য জেলা শহর থেকে সেই জেলার দূরতম গ্রামে যাতায়াতের সমতুল্য হয়ে উঠেছে সময়ের হিসেবে। তবু ঢাকা নিয়ে মানুষের মোহ কাটছে না। পক্ষান্তরে গ্রামে অবস্থান না করার পক্ষের লোক যেন বেড়েই চলেছে। অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক এলাকায় বাসের প্রবণতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু গ্রামে যারা থাকেন তাদের তো অসুখবিসুখ হয়। ফলে চিকিৎসকেরও দরকার পড়ে। ডাক্তারদের ভেতর গ্রামে না থাকার মানসিকতা গড়ে উঠলে গ্রামের রোগীদের অবস্থা কী হবে? তাই সরকারী ডাক্তারদের দু’বছর গ্রামে থাকার বিধি চালু করা হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন যে, গ্রামে ডাক্তারদের বাধ্যতামূলকভাবে থাকার সময় আরও এক বছর বাড়িয়ে তিন বছর করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এটি নিশ্চয়ই সমর্থনযোগ্য। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি না যে, গ্রামে নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তারদের সময়মতো কর্মস্থলে না পাওয়ার একটি বাজে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। চাকরি রক্ষার্থে ন্যূনতম যে সময়টুকু অবস্থান না করলেই নয়, সেটুকুই তারা করেন। ডাক্তারদের ভেতর অনেকেরই মানসিকতা হচ্ছে গ্রামের হাসপাতালে খুবই কম সময় দিয়ে শহরে চলে আসা। শহরে প্রাইভেট চেম্বারে সময় দিলেই বেশি লাভ। তবে এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। গ্রামের কর্মস্থলে ডাক্তারদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত একাধিকবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তাতে কাজের কাজ কতটুকু হয়েছে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই ভাল বলতে পারবে। চিকিৎসা পেশাকে এখনও সমাজ উচ্চ মর্যাদা দিয়ে থাকে। চিকিৎসকরা বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভরসার পাত্র। কিন্তু চিকিৎসা সেবা এক মহান পেশা হিসেবে ধরে রাখার সংস্কৃতি সমাজে আজ কতটুকু বিদ্যমান? কোন কোন চিকিৎসকের কাছে বর্তমানে মানবসেবার তুলনায় অর্থবিত্ত উপার্জনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। একজন চিকিৎসক তৈরি করতে রাষ্ট্রেরও বিনিয়োগ থাকে। তাই দেশের প্রতি ডাক্তারদেরও দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবনের মাত্র তিনটি বছর গ্রামে অবস্থান করে সরকারী চিকিৎসকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
×