ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এসো হে এসো সজল ঘন বাদল বরিষণে এসো হে...

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৪ জুন ২০১৫

এসো হে এসো সজল ঘন বাদল বরিষণে এসো হে...

মোরসালিন মিজান এসো হে এসো সজল ঘন বাদল বরিষণে-/ বিপুল তব শ্যামল স্নেহে এসো হে এ জীবনে।/ এসো হে গিরিশিখর চুমি ছায়ায় ঘিরি কাননভূমি,/ গগন ছেয়ে এসো হে তুমি গভীর গরজনে...। মেঘের এই গর্জন এখন শোনা যাচ্ছে বৈকি! বৃষ্টিও নেহায়েত কম হচ্ছে না। তবে শুধু বৃষ্টিতে কি আর বর্ষা হয়? এ জন্য অষাঢ়ের আসাটা জরুরী। হ্যাঁ, সোমবার সেই কাক্সিক্ষত দিন। এদিন ১ আষাঢ়, ১৪২২ বঙ্গাব্দ। পঞ্জিকার হিসেব অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বর্ষা। বাঙালীর জীবনে বহুমুখী প্রভাব বিস্তার করা ঋতু বরণে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানী ঢাকায় বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হবে বর্ষাকে। বিশেষ করে প্রথম দিনটি যারপরনাই বর্ণাঢ্য হয়। এবারও হবে। বর্ষার জন্য যারা ব্যাকুল, অপেক্ষা করে আছেন তাঁরা। সকলের উপস্থিতিতে জমে ওঠবে বাদল দিনের উৎসব। রাজধানীতে অনেক আগে থেকেই চলে বর্ষা বরণের প্রস্তুতি। সে অনুযায়ী এরই মাঝে সব চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব সকালেই শুরু হয়ে যাবে বর্ষা বন্দনা। বরাবরের মতোই সকালে বর্ষা উৎসবের আয়োজন করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বিগত দিনগুলোতে চারুকলার বকুলতলায় এ উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবার স্থানান্তরিত হয়েছে বাংলা একাডেমিতে। আয়োজক সূত্র জানায়, নজরুল মঞ্চে সোমবার সকাল ৭টায় শুরু হবে উৎসব। ময়মনসিংহের শিল্পী শাহাবুদ্দির আহমেদের বাঁশির সুরে শুরু হবে অনুষ্ঠানমালা। এর পর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বর্ষা বন্দনা। গাইবেন প্রিয়াঙ্কা গোপ। বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সম্মেলক গানে বর্ণনা করবেন বর্ষার রং রূপ। দলগুলোর মধ্যে থাকছেÑ বহ্নিশিখা, স্বভূমি, পঞ্চভাস্কর, ওস্তাদ মমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমি। একক সঙ্গীতে বর্ষার কথা তুলে ধরবেন সালমা আকবর, সাজেদ আকবর, মাহমুদ সেলিম, ছায়া কর্মকার, বুলবুল মহলানবীশ, আজিজুর রহমান তুহিন, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সোহানা আহমেদ প্রমুখ। কবিতার ভাষায়ও হবে বর্ষা। পছন্দের কবিতা থেকে আবৃত্তি করবেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, আহকামউল্লাহ, বেলায়েত হোসেন, কাজী মদিনা এবং ঝর্ণা সরকার। আর নাচের কথা তো বলাই বাহুল্য, শিল্পীদের নাচের মুদ্রায় আকর্ষণীয় রূপে তুলে ধরা হবে বর্ষাকে। নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যনন্দন, নটরাজ ও স্পন্দন। বর্ষা উৎসবে বিশেষ গীতিআলেখ্য পরিবেশন করবেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। মহানগর সংসদের আয়োজনে বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে অংশ নেবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, কাফরুল ও সাভার শাখার শিল্পীরা। গান নাচ ছাড়াও কিছু কথা হবে বর্ষার। বর্ষাকথনে অংশ নেবেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানী, উদ্ভিদবিদ দ্বীজেন শর্মা, কৃষিবিদ রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান প্রমুখ। বর্ষার ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন ইকবালুল হক খান ইকবাল। দুপুরর আগেই শেষ হবে আয়োজনটি। যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে সরব থাকে চারুকলার বকুলতলা। এখানে দিনভর বর্ষা বন্দনা করবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আয়োজক সূত্র জানায়, প্রথম পর্বের শুরু হবে সকাল ৭টায়। টানা ৯টা পর্যন্ত চলবে। মাঝখানে বিরতি দিয়ে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের উৎসব। বিকেল ৫টায় শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের বর্ষা বন্দনা। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। তার আগে, সকালে দোতরা ও বাঁশির সুরে স্বাগত জানানো হবে প্রিয় ঋতুকে। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমি, সুরসপ্তক, পঞ্চভাস্বর ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে নটরাজ, স্পন্দন, নৃত্যাক্ষ ও নৃত্যম। মহাদেব ঘোষ,সালমা আকবর, আবু বকর সিদ্দিক, অনিমা রায়, ইফফাত আরা নার্গিস ও তানভীর সজীব গানে গানে বর্ণনা করবেন বর্ষার প্রকৃতি। মনের অবস্থা। এ আয়োজনেও থাকবে কবিতা। প্রিয় কবিতায় বর্ষা বন্দনা করবেন রফিকুল ইসলাম ও লায়লা আফরোজ। বিকেলে উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। দৃষ্টি, ধ্রুব শিশু-কিশোর সংগঠন, কল্পরেখা, বাশুরিয়া, উদয়ন স্কুল ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্বাধীনতা একাডেমি ও নৃত্যজন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, সরদার রহমত উল্লাহ, জান্নাতুল ফেরদৌস লাকী, তানজিলা তমা, আনজুমান ফেরদৌসী কাকলি, নারায়ণ চন্দ্র শীল, সঞ্জয় কবিরাজ, এসএম মেজবাহ, রতন সরকার, শ্রাবণী গুহ রায়, শহিদুল ইসলাম সৌরভ, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, আরিফ রহমান, সমর বড়ুয়া, খগেন্দ্রনাথ সরকার। নির্বাচিত কবিতা থেকে বর্ষাকে ব্যাখ্যা করবেন আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা, মাসকুর-এ- সাত্তার কল্লোল, মজুমদার জুয়েল, রেজীনা ওয়ালী লীনা, নায়লা তারাননুম চৌধুরী, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুদ ও আজিজুল বাশার মাসুম। বর্ষাকথন পর্বে অংশ নেবেন ড. হায়াৎ মামুদ, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, হাসান আরিফ প্রমুখ। বর্ষা শুরুর পরও কিছু উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জুলাই মাসে বর্ষা উৎসবের আয়োজন করবে ছায়ানট। ধানম-ির নিজস্ব ভবনে ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বর্ষা উৎসবে থাকবে সঙ্গীত ও নৃত্যসহ অন্যান্য আয়োজন। সব মিলিয়ে উৎসবের রং ছড়াবে বর্ষা। বর্ষা নিয়ে এই যে আবেগ উৎসব অনুষ্ঠান, কেন? এমন প্রশ্নে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ও লেখক ড. হায়ৎ মামুদ বলেন, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা সত্যি খুব ব্যতিক্রম। এর আগমনে দারুণ বদলে যায় প্রকৃতি। রুক্ষ শুষ্করা প্রাণ ফিরে পায়। সবুজ সতেজ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। বনে যেমন পরিবর্তন, মানুষের মনেও। এসব কারণেই রবীন্দ্রনাথ বর্ষার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। আমরা কেউ এই অনুভূতির বাইরে নই। এ কারণেই নগরে বর্ষা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবারের উৎসব অনুষ্ঠানগুলোতেও নগরবাসী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×