ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

তরুণ শিল্পীদের জলরঙের চিত্রসম্ভার জলের ধারা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৪ জুন ২০১৫

তরুণ শিল্পীদের জলরঙের চিত্রসম্ভার জলের ধারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাঁরা সবাই তরুণ চিত্রশিল্পী। চারুশিল্পে দীক্ষা নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সঙ্গে চলছে সৃষ্টির তাগিদে সৃজনের ক্রিয়া। এই নবীন শিল্পীরা সম্প্রতি অংশ নিয়েছেন জলরঙের ওপর বেশ কয়েকটি কর্মশালায়। কর্মশালায় যেসব ছবি চিত্রিত হয়েছে সেখান থেকে নির্বাচিত ৫৮টি চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে শুরু হলো জলরঙের ভিন্নধর্মী চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। ৫৮ শিল্পীর নির্বাচিত বহুমাত্রিক বিষয়ের জলরঙের চিত্রসম্ভারের দেখা মিলেছে জলের ধারা শিরোনামের এ আয়োজনে। বাংলাদেশে জলরঙের প্রধানতম শিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশর্তবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিল্পাঙ্গন গ্যালারি এবং শিল্পীদের সংগঠন ‘জলের ধারা’। তিন সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এ প্রদর্শনী শনিবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন করেন সাবেক কূটনীতিবিদ এবং শিল্পসংগ্রাহক ইনাম আহমেদ চৌধুরী। আয়োজক শিল্পাঙ্গনের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবরিনা জামান। শিল্পীদের পক্ষে কথা বলেন শিল্পী বীরেন সোম এবং সোহাগ পারভেজ। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। জলের ধারা শিরোনামের প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে বৈচিত্র্যময় শিল্পসম্ভার। চিত্রকর্মের প্রতিটি কাজই জলরঙে আঁকা এবং বাস্তবধারার। তাতে প্রতীয়মান রমনা পার্ক, কার্জন হল, ধানম-ি লেক, সোয়ারিঘাট, চিড়িয়াখানা, আমিনবাজার, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ঘাট এবং ঐতিহ্যবাহী পানাম নগরীর বিভিন্ন চিত্রপট। কারও চিত্রপটে উদ্ভাসিত হয়েছে বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী মানুষের যাপিত জীবন। আবার কারও ছবিতে উঠে এসেছে সমুদ্র সৈকতের নান্দনিক সৌন্দর্য। আর সেই সৈকতের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে গাঙচিলের ঝাঁক। অন্যদিকে কারও ছবিতে প্রতীয়মান পুরান ঢাকার অলিগলি, প্রাচীন দালানের চিত্রমালা। আছে নদীবর্তী গ্রামের দৃশ্যাবলীসহ শহর ও গ্রামের নানা অনুষঙ্গ। প্রদর্শনীতে শুধু তরুণ নয়, কয়েকজন প্রবীণ শিল্পীর কাজও স্থান পেয়েছে। ‘জলের ধারা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রশিক্ষক ও তরুণ শিক্ষার্থীদের এ এক যৌথ মিলনমেলা। প্রদর্শনীতে প্রবীণদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হামিদুজ্জামান, অলকেশ ঘোষ এবং বীরেন সোম। আছেন পরিচিত পাওয়া শিল্পীরাও। তবে, যেহেতু মূল লক্ষ্য নবীনদের জল রঙে পরিচিত করা, তাই প্রাধান্য পেয়েছে তরুণদের বৈচিত্র্যময় চিত্রাবলী। প্রদর্শনী চলবে ৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রদর্শনী বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। লেখক ও প্রকাশকদের আলোর আড্ডা ॥ বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির আয়োজনে শনিবার সন্ধ্যায় লেখক ও প্রকাশকদের অংশগ্রহণে ‘আলোর আড্ডা’ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিনগরের পিবিএস ভবনের ছাদে অনুষ্ঠিত এ আড্ডায় অংশগ্রহণ করেন দেশের বরেণ্য লেখক-সাহিত্যেকরা। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশকরা। জমজমাট আড্ডা শেষে ছিল আপ্যায়ন। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন ইতোপূর্বেও আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে কনসার্ট ॥ শনিবার সন্ধ্যায় সুরে সুরে মুখরিত হলো ধানম-ির রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার। আর সেই সুরেলা শব্দধ্বনিতে উদ্দীপ্ত হলো সঙ্গীতানুরাগী শ্রোতাকুল। হালে জনপ্রিয় ছয়টি ব্যান্ডদলের পরিবেশনা দিয়ে সাজানো হয় এই কনসার্ট। অংশ নেয় আর্টসেল, ব্ল্যাক, যাত্রী, গাছ, অরন্য, পাওয়ারসার্জ। সঙ্গে মিনারের একক কণ্ঠে সুরমূর্ছনা। এ কনসার্টের আয়োজন করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজ। প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জি-টেকনোলজির রেডিও জি-এর উদ্বোধন এবং রবির সঙ্গে যাত্রা শুরু উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় সঙ্গীতানুষ্ঠানটি। এর আগে দুই প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে পথচলা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মঞ্চস্থ আয়না বিবির পালা ॥ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো ‘আয়না বিবির পালা’। ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নারী জাগরণের উপজীব্য নাটকটি নাট্যধারার ২০তম প্রযোজনা। রবিউল আলম নির্দেশিত নাটকের উপস্থাপিত হয়েছে প্রাচীন নারীদের প্রতি সমাজের অমানবিকতার একটি বাজে দৃষ্টান্ত। অমানবিকতার এই দৃষ্টান্ত আধুনিক নারীদেরও স্থাপন করতে হয় প্রতিদিন। তবুও কিছু নারী হয় ওঠে প্রতিবাদী। সেই শৃঙ্খল ভাঙ্গা প্রতিবাদী এক নারীর গল্প নিয়ে আবর্তিত প্রযোজনাটির প্রেক্ষাপট। সুবর্ণজয়ন্তীতে মঞ্চস্থ ‘কহে বীরাঙ্গনা’ ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো মনিপুরী থিয়েটারের দর্শকনন্দিত নাটক ‘কহে বীরাঙ্গনা’র সুবর্ণজয়ন্তী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির ৫০তম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। নাটকটিতে নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশিস সিনহা। নাটকটি মঞ্চায়নের আগে ছিল নাট্যকর্মীদের শুভেচ্ছা পর্ব। শুভেচ্ছা জানাতে আসেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ প্রমুখ। নাটকটির সুবর্ণজয়ন্তী প্রদর্শনীর ৪টি পর্ব চারজন নারী নাট্যশিল্পীকে সম্মান জানিয়ে মঞ্চস্থ করা হয়। তারা হলেন তমালিকা কর্মকার, রোজী সিদ্দিকী, ত্রপা মজুমদার ও সামিনা লুৎফা নিত্রা। সম্মাননা স্মারক হিসেবে তাদের পরিয়ে দেয়া হয় মনিপুরী উত্তরীয়। মাইকেল মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্যের নাট্যরূপ ‘কহে বীরাঙ্গনা’। পৌরাণিক নারীদের দুঃখগাথা নিয়ে এই কাব্যে রয়েছে প্রিয় পুরুষকে লেখা ১১ জন নারীর পত্র। এই ১১টি পত্র থেকে চারটি পর্বের নাট্যরূপায়ণই ‘কহে বীরাঙ্গনা’। পৌরাণিক কাহিনী হলেও এতে উঠে এসেছে ভারতবর্ষীয় নারীর সর্বকালীন হাহাকার, বিরহবেদনা। নাটকটির মঞ্চসজ্জা, আলোক প্রক্ষেপণ, আবহ সঙ্গীতসহ প্রায় সব দিকই অসাধারণ শিল্পসুষমাম-িত। এ নাটকে মঞ্চস্থ হওয়া চারটি পত্রের মধ্যে প্রথমেই ছিল ‘দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা’। এই পত্রে রাজা দুষ্মন্তের প্রতি প্রতারিত শকুন্তলার হাহাকার ফুটে উঠেছে। দ্বিতীয় পত্র ‘অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী’। অস্ত্রচালনা শিক্ষার নামে প্রবাসে গিয়ে অর্জুন মেতে থাকেন ভোগবিলাসে। এই চিঠিতে উঠে এসেছে স্বামীর প্রতি বঞ্চিতা দ্রৌপদীর তীব্র ক্ষোভ। তৃতীয় চিঠি ‘জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলা’। যুদ্ধে লিপ্ত স্বামীর মৃত্যুভয়ে ভীত দুঃশলা স্বামীকে যুদ্ধ থেকে ফেরাতে এই পত্র লেখেন। আর চতুর্থ চিঠি ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’। স্বামী নীলধ্বজ পুত্রের খুনির সঙ্গে সন্ধি করলে এই পত্রে স্বামীর প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ ও আর্তনাদ প্রকাশ করেন পুত্রহারা জননী জনা। নাটকে বিরহিণী চার নারীর মর্মবেদনা ও কান্নার ভেতর দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে চিরন্তন প্রেমের জয়গান। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, প্রতিহিংসা বা যুদ্ধে নয়, দুর্নিবার আত্মিক প্রেম, ভালবাসা ও হৃদয়ের শক্তিতেই মিলতে পারে মানুষের প্রকৃত মুক্তির সন্ধান। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিয়োজিত বীর সৈনিকদের পতœী যন্ত্রণাদগ্ধ ও ক্রুদ্ধ নারীদের সংলাপের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে সেই সত্যের ইশারা। এক অর্থে ‘কহে বীরাঙ্গনা’ যুদ্ধবিরোধী নাট্যকাব্য। বাংলা ভাষা ও মনিপুরী আঙ্গিকের সমন্বয়ে এক ঘণ্টার এই নাটকে চার চরিত্রে একাই অভিনয় করেছেন জ্যোতি সিনহা। ভাবমুদ্রা রূপায়ণে ছিলেন সুনন্দা সিনহা, শুক্লা সিনহা, মিতালী সিনহা ও ভাগ্যলক্ষ্মী সিনহা। সঙ্গীতে ছিলেন শর্মিলা সিনহা, বাদ্যে বিধান চন্দ্র সিংহ ও লক্ষ্মণ সিংহ।
×