ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি নদ-নদীর পানি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৫ জুন ২০১৫

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি নদ-নদীর পানি বাড়ছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদীগুলোতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট, মানুষের দুর্ভোগ চরমে। পানিবৃদ্ধির ফলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায়। অনেক বাড়িঘর পানির তোড়ে ভেসে গেছে। খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে অনেকেই। বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ঘাঘট, করতোয়া, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। রবিবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার (সেমি) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানিবৃদ্ধির ফলে সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। অনেক পরিবার গরু-ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু এলাকায় সরিয়ে নিচ্ছে। পানিবৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙ্গনও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফুলছড়ির উদাখালী ইউনিয়নের সিংড়িয়া, উড়িয়ার রতনপুর, কালাসোনা, গজারিয়ার কামারপাড়া, জিয়াডাঙ্গা, কঞ্চিপাড়ার রসুলপুর, পূর্ব কঞ্চিপাড়া, জোড়াবাড়ি, সাঁতারকান্দি, ফজলুপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর ও খাটিয়ামারি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৩৪৫ পরিবারের বাড়িঘরসহ গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের হরিপুরসহ ছয় ইউনিয়নের নিজাম খাঁ, খোদ্দারচর, চরচরিতাবাড়ি, কানিচরিতাবাড়ি, রিয়াজ মিয়ারচর, উজান বুড়াইল, ভাটি বুড়াইল, কেরানির চর, কালাইসোতার চর, চরবিরহীম, ভোরের পাখি, কালির খামারচর এলাকায় তিস্তা নদীতে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ফুলছড়ির সিংড়িয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি পয়েন্টে ফাটল দেখা দেয়ায় ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলছে। কুড়িগ্রাম ॥ অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে নদ-নদীগুলোর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নিমজ্জিত হয়েছে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার তীরবর্তী তিন শতাধিক গ্রাম, চর ও দ্বীপচর। এতে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রবিবার দুধকুমার নদীর পানির তোড়ে সোনাহাট ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তের সংযোগ সড়কের ৫০ মিটার এলাকায় ধস দেখা দেয়ায় এ পথে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে দুই সেন্টিমিটার, তিস্তায় ১৪ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারে পাঁচ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরের ৪২ ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সকল গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় নৌকা ছাড়া যোগাযোগের উপায় নেই এসব এলাকায়। বন্ধ হয়ে গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। টানা পাঁচ দিন পানিবন্দী থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। দেখা দিয়েছে জ্বালানি ও খাদ্য সঙ্কট। পাশাপাশি গোখাদ্যেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮৫ মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কন্ট্রোলরুম খুলে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। নীলফামারী ॥ তিস্তার পানিবৃদ্ধি পেয়ে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তাপারের চর ও নিম্নাঞ্চলের ৩৫ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের অধিকাংশ ঘরবাড়ি কোমর থেকে হাঁটুপানিতে তলিয়ে রয়েছে। তিস্তাপারের ছোটখাতা, পূর্ব খড়িবাড়ী, দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রবিবার সকাল ছয়টা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তাপারের কিসামত ছাতনাইচরের রমজান আলী (৫৫) বললেন, ‘আইজ দুই দিন হইলো রাইতত ঘুমবার পারি না। উজানের বৃষ্টির পানির লগে ঢল নামিছে। দিনত খুব একটা পানি বাড়ে না। রাইত হইলেই হু-হু করি পানি আইতে থাকে। চরের ঘরবাড়ির ভেতর দিয়া তিস্তা নদীর পানি বৈইয়া যায়। জান বাঁচিবার লগে কলার ভেলা হামার এ্যালা (এখন) একমাত্র ভরসা হইছে। বানের পানিত নিমজ্জিত হইছে ক্ষেতের ফসল। চরের ঘরবাড়িগুলোন ঝুঁকিপূর্ণ হয়া পড়ছে। হামরা দুর্ভোগে আছি বাহে।’ ডিমলা ও জলঢাকার ১৮ হাজার পরিবার নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গ্রাম ও চরের পথঘাট সব বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় মানুষজন কলার ভেলা বা ডিঙ্গি নৌকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিস্তাপারের বন্যার্তদের খাদ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে ছোটখাতা, পূর্ব খড়িবাড়ী ও দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামে। রংপুর ॥ রংপুরে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদীভাঙ্গন। গত চারদিনে উপজেলার অর্ধশত পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে মূল বাঁধ, বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও কয়েক হাজার বসতভিটা। ইতোমধ্যেই উপজেলার প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সিলেট ॥ টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের সর্বত্র পানিবৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়াইঘাটের সবকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে, অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে গেছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে জমে থাকা পানির কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তিন উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেক উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানের পানিতে জাফলং চা-বাগানে শ্রমিকদের বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জামালপুর ॥ যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানিবৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্র্রবাহিত হয়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সাত উপজেলার ১১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাট, আখ, বীজতলাসহ সবজি বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে।
×