ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার শীর্ষ মোবাইল অপারেটর ট্যাক্স মওকুফ জটিলতায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৫ জুন ২০১৫

চার শীর্ষ মোবাইল অপারেটর ট্যাক্স মওকুফ জটিলতায়

ফিরোজ মান্না ॥ দীর্ঘ তিন বছর ধরে ঝুলে থাকা দেশের চার শীর্ষ মোবাইল অপারেটরের তিন হাজার কোটি টাকার সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স মওকুফ জটিলতা দূর হচ্ছে না। এর আগে তারা অর্থমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েও জটিলতার কোন সুরাহা করতে পারেনি। এবার তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দ্বারস্থ হয়েছে। এ মাসের গোড়ার দিকে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রতিমন্ত্রী পলকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অপারেটররা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান। যদি এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে এই সেক্টরে তারা বড় ধরনের বিনিয়োগে যাবে না। সূত্র জানিয়েছে, সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স হিসেবে এনবিআর চারটি অপারেটরের কাছে মোট তিন হাজার দশ কোটি টাকা পাওনা দাবি করেছে। গ্রামীণফোনের কাছে এক হাজার ৫৬২ কোটি, বাংলালিংকের কাছে ৭৬২ কোটি, রবির কাছে ৬৪৭ কোটি ও এয়ারটেলের কাছে ৩৯ কোটি টাকা এনবিআর পাওনা হিসাবে দাবি করে আসছে। কিন্তু এই টাকা অপারেটররা দিতে রাজি না। তারা বলছে, সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স তারা দিয়েই গ্রাহকদের সিম দিচ্ছে। এখানে নতুন করে আবার ট্যাক্স দিতে হলে একই সিমের জন্য দুই দফা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হলেও বিষয়টির কোন সমাধান হয়নি। এখন অপারেটরদের দাবি জটিলতা দূর না হওয়া পর্যন্ত টু জি (দ্বিতীয় প্রজন্মের ফোন) ও থ্রি জি (তৃতীয় প্রজন্মের ফোন) স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ নিলামে তারা অংশ নেবেন না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে এই চার অপারেটরের মূল কোম্পানিগুলোও জানিয়েছে, কয়েক বছরের পুরনো এ সমস্যার সমাধান না হলে তারা আর বড় ধরনের বিনিয়োগে যাবে না। নতুন করে মোবাইল সেক্টরে যন্ত্রপাতি বসাবে না। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন না করলে এই সেক্টরে গ্রাহক সেবার মান অনেক কমে যাবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বারবার চিঠিও দিয়েছে। গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনর, বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিম্পেলকম, রবির মূল কোম্পানি আজিয়াটা এবং এয়ারটেলের মূল কোম্পানি ভারতীয় এয়ারটেল যৌথভাবে এই চিঠি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও কোন ফল হয়নি। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা তথ্য যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনেছেন। তিনি অপারেটরদের আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি অর্থমন্ত্রীসহ আরও উপর মহলে তুলে ধরবেন। প্রতিমন্ত্রী সমস্যার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে একটি সারসংক্ষেপ চেয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা প্রতিমন্ত্রীকে একটি প্রেজেন্টেশন দেবেন। অপারেটরদের সমস্যা জিইয়ে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন। অন্যদিকে এনবিআর বলছে, মোবাইল অপারেটরদের বদলে দেয়া সিমের ৭৯ শতাংশই সঠিকভাবে নিবন্ধিত হয় না। একজনের সিম আরেকজনকে দেয়া হচ্ছে। আর এজন্য প্রতিটি সিমের ওপর তারা ছয়শ’ টাকা হারে ট্যাক্স দাবি করেছেন। বর্তমানে সিম প্রতি ট্যাক্স তিনশ’ টাকা। মোবাইল অপারেটররা এনবিআরের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলছে, ২০১০ সালের আগে সিম নিবন্ধনের জন্য সরকারের দিক থেকে কোনও নির্দেশনাই ছিল না। ফলে সঠিক নিবন্ধন না হওয়া বা অন্য কোনও কারণে একজনের সিম অন্যজনের কাছে গিয়ে থাকলে তার দায় তাদের হতে পারে না। এই সমস্যার কারণে গত তিন বছরে তাদের কম করে হলেও তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে গেছে। এই বিনিয়োগ করতে পারলে গ্রাহক সেবার মান আরও বাড়ত। সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স মওকুফসহ এই সেক্টরে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো দূর না হলে মোবাইল সেক্টরে বড় ধরনের ধস নামতে পারে। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন যে হারে বেড়েছে-একই হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপারেটররা জানিয়েছে, এই সেক্টরে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করতে হয়। কারণ প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে পারলে গ্রাহক সেবার মান কমবেই। এই বিষয়টি মাথায় রেখে মোবাইল অপারেটরদের সমস্যার সমাধান করা জরুরী বলে তারা মনে করছেন।
×