ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের রায় যে কোন দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ জুন ২০১৫

পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের রায় যে কোন দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রবিবার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। ফোরকানের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ, লুটপাটসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের জবাব দিয়েছেন ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। ২৩ জুন এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। অন্যদিকে যশোরের রাজাকার কমান্ডার সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন তদন্ত সংস্থা। হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ প্াচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। শীঘ্রই তাদের এই রিপোর্ট চীফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করা হবে। পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। রবিবার যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য সিএভি রাখা হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সালাম খান শেষ দিনে যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করেন। এর আগে প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। তিনি ২৮ মে থেকে শুরু করে ১ জুন যুক্তিতর্ক শেষ করেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ ২ জুন থেকে শুরু করে তিন কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। আসামি ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন রায়সহ মোট ১৪ জন সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। ফোরকান মল্লিকের ৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় সকাল ছয়টার দিকে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে আসেন। ওই গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মোঃ কাঞ্চন আলী হাওলাদার ও হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটকের পর আটককৃতদের ওপর নির্যাতন চালান, বাড়ি-ঘর লুটপাট এবং জোর করে অর্থ আদায় করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আষাঢ় মাসের শেষের দিকে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার দেউলি গ্রামে নিয়ে আসেন। পাকিস্তানী সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসার পর ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের ঘর-বাড়িতে লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার সুবিদখালীতে নিয়ে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ বাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডাঃ দেবেন্দ্র নাথ ও তার স্ত্রী বিভা রানীকে আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ থেকে ৮ ভাদ্র সময়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া বাজারে আসেন। এখানে তারা চারজনকে হত্যা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫-৮ ভাদ্র সময়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা মির্জাগঞ্জ থানার দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল হোসেন মৃধাকে আটকের পর নির্যাতন এবং বাড়ি-ঘর লুটপাট করেন। ১২ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছে তদন্ত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। শীঘ্র এই প্রতিবেদন চীফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করা হবে। রবিবার ধানম-ির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার প্রধান এম এ হান্নান খান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান সংবাদ সম্মেলনে ৫ অভিযোগের বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন। এই ১২ জনের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ আকরাম হোসেন ও অজিহার মোড়ল ওরফে ওজিয়ার মোড়ল। বাকি ৮ জন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিগণ হলেন মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান, মোঃ আব্দুল আজিজ সরদার, মোঃ আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মোঃ লুৎফর মোড়ল, মোঃ আব্দুল খালেক মোড়ল এবং মশিয়ার রহমান। আদালত অবমাননা ॥ আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের জবাব দিয়েছেন ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান। ২৩ জুন এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ৪ মে জারি করা রুলে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। রবিবার শিবিরের দুই নেতার পক্ষে রুলের জবাব দাখিল করেন তাদের আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। একই অভিযোগে শো’কজ (কারণ দর্শাও) নোটিস জারি করা হয়েছিল শিবিরের দুই নেতাসহ জামায়াত নেতাদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম এবং তিন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধেও। বিভিন্ন সময়ে ওই ছয়জন এ নোটিসের জবাব দেন। জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে এবং ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তিন জামায়াত নেতাকে গত ৪ মে ক্ষমা করে দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাদের ভবিষ্যতের জন্য এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে দেয়া হয়। ক্ষমাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতারা হচ্ছেন- জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান। তবে দুই শিবির নেতার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয়নি উল্লেখ করে ওইদিন তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা ও বিরূপ মন্তব্য করায় ১২ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে এ শো’কজ নোটিস দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
×