ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ

সচেতনতা সৃষ্টি করতে বর্ণাঢ্য নৌ র‌্যালি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ জুন ২০১৫

সচেতনতা সৃষ্টি করতে বর্ণাঢ্য নৌ র‌্যালি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটু ভিন্ন আয়োজন। সারি সারি নৌকা। ছুটে চলেছে একই সঙ্গে। রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে পাগলা পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য নৌ র‌্যালি দেখলে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগবে কেন, কিসের এই বর্ণিল শোভা যাত্রা। নৌ-নিরাপত্তা উপলক্ষে সপ্তাহ সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর বিশাল এই নৌ র‌্যালির আয়োজন করে। এতে ২১টি বড় লঞ্চ অংশ নেয়। প্রত্যেকটি লঞ্চকে নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুনে সাজানো হয়। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সকলের মাঝে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহের সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ দেশে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন হচ্ছে তা জানেই না। কিন্তু দেশের সিংহভাগ মানুষ এবং পণ্য পরিবহন হয় নৌপথে। এই পথ যেন মানুষের মৃত্যুফাঁদ না হয়ে ওঠে সে জন্য সকলের সচেতন হওয়া জরুরী। এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। এ সময় দেশে নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শুধু অতিরিক্ত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন থেকে শুধু দূরে থাকাই নয় নৌযানগুলো সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে নির্মাণ করাও জরুরী। সরকারের হিসাব মতে, দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথের পরিমাণ ২৪ হাজার কিলোমিটার। এতে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মিলিয়ে ৬০ হাজার নৌযান চলাচল করে। দেশের ৫৩টি নৌরুট দিয়ে ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল, ৭০ শতাংশ অন্যান্য মালামাল এবং ৩৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা হয়। সারাদেশে নৌযান মালিকদের বিনিয়োগ রয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। বছরে তা আরও ২৫০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে নৌশ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৯৭৬ সাল থেকে দেশে ৫৬৩ নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে মর্মান্তিক সলিলসমাধি হয়েছে চার হাজার ৬১০ জন মানুষের। আয়োজকরা বলছেন, নিরাপদ এই পথে কোনক্রমেই মৃত্যুর মিছিলে আরও মানুষের অংশগ্রহণ মানা যায় না। এজন্য নৌপথ নিরাপদ করে তুলতে পালিত হচ্ছে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ। দেশে সপ্তমবারের মতো এই আয়োজন ২০ জুন পর্যন্ত। নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান রবিবার ঢাকা সদরঘাটে এমভি সুরভী-৯ যাত্রীবাহী লঞ্চে ‘নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ’ এর উদ্বোধন করেন। দুর্ঘটনামুক্ত, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ নৌ চলাচলে সকলের সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ বছরের নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘সচেতন হই এবং নৌ দুর্ঘটনা পরিহার করি।’ ১৪ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ঢাকা সদরঘাটে উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে নৌ সপ্তাহের অনুষ্ঠান। উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছাড়াও নৌ র‌্যালি, দেশের বিভিন্ন নৌ বন্দরে ব্যানার ও পোস্টার প্রদর্শনের মাধ্যমে নৌ সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচী, পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সারাদেশে অরেজিস্ট্রিকৃত নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা। অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রম এমপি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদি, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম জাকিউর রহমান ভূইয়া, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহাবুবউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ খোরশেদ আলম এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার এ কে এম ফখরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রী বলেন, লঞ্চ নির্মাণের ক্ষেত্রে এখন থেকে লঞ্চ নির্মাণের পূর্বেই সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় নৌযান রেজিস্ট্রেশন করা হবে না। তিনি বলেন, নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখতে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। শাজাহান খান বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষায় ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ৫৩টি নৌরুট খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি নৌরুটে খনন কাজ চলছে। তিনি বলেন, নদী খননের জন্য সরকারের গত মেয়াদে ১৪টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বর্তমান মেয়াদে ২০টি ড্রেজার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
×