ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফতুল্লায় অশ্বিন-ভাজ্জি ঘূর্ণি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৫ জুন ২০১৫

ফতুল্লায় অশ্বিন-ভাজ্জি ঘূর্ণি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফতুল্লা টেস্টের প্রথম দিন কোন বোলারই পাত্তা পায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে উইকেট দেখে মনে হয়েছিল এখানে স্পিনাররা সুবিধা পাবেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা বোলারদের আচ্ছামতো পিটিয়েছেন। তবে তৃতীয় দিন থেকে বাংলাদেশের স্পিনাররা চেপে বসেছিলেন। স্পিনাররা বলে দারুণ টার্ন পেতে শুরু করেন। সাকিব আল হাসান ও জুবায়ের হোসেন যুগপৎভাবে তুলে নেন ভারতের ৬ উইকেট। তখনই শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হলে হামলে পড়বেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও অভিজ্ঞ হরভজন সিং। সেটাই বাস্তব হয়েছে। স্পিনাররাই ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস এবং ৮ উইকেট দখল করে ফলোঅনে পড়তে বাধ্য করেছেন। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ভাজ্জি তিন উইকেট নিয়েছেন। তবে নিজের ঘূর্ণি বল দিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন অশ্বিন। ক্যারিয়ারে দশমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেও এটাই ছিল তার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা। আর প্রথম সে সাক্ষাতেই তিনি বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য হন্তারক হিসেবে উপস্থিত হলেন। আর দুই বছর তিন মাস পর দলে ফিরে আসাটা ভালই হয়েছে ৩৫ ছুঁতে চলা হরভজনের। তিনিও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। এবার বাংলাদেশ সফরে একমাত্র টেস্ট দলে হরভজন সুযোগ পাওয়ার পর সবারই নজর ছিল তার দিকে। কারণ দুই বছরের বেশি সময় তিনি দলের বাইরে ছিলেন। ভাজ্জির জন্য যেমন অগ্নিপরীক্ষা ছিল তেমনি দলের তরুণরা তাকে সবার জন্য অনুপ্রেরণা বলে মনে করছিলেন। বাংলাদেশ সফরে আসা দলটির মধ্যে সবার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হরভজন। কণিষ্ঠদের সঙ্গে মিলে ভাল নৈপুণ্য দেখানোটা কঠিন ছিল দীর্ঘদিন পর ফিরে। তবে দারুণ কার্যকরী অবদান রেখেছেন তিনি। ১০১ টেস্টে ৪১৩ উইকেটের মালিক ভাজ্জি শুরু থেকেই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছেন। তবে অব্যাহত বাজে নৈপুণ্যের কারণে বাদ পড়েন। ২০১৩ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। ফতুল্লায় বৃষ্টির আক্রমণে ম্যাচের অনেক সময়ই ভেসে গেছে। তবে চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শুরু হওয়ার পর হরভজন-অশ্বিন জুটি চেপে বসেন বাংলাদেশের ওপর। আর শেষদিন তাদের জোড়া আঘাতেই হিমশিম খেয়েছে বাংলাদেশ দল। হরভজন ফিরিয়ে দিয়েছেন সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে চলা ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক এবং মোহাম্মদ শহীদকে। ১৭.৫ ওভার বোলিং করে তিনি ৬৪ রান খরচে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তার বোলিংয়ের প্রশংসা করলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। তিনি বলেন, ‘হরভজন অনেক অভিজ্ঞতায় পূর্ণ এবং অনেক টেস্ট ম্যাচ খেলে দলকে অনেকবার জিতিয়েছেন। টেস্টে ৪শ’র বেশি উইকেট নিয়েছেন। এই টেস্টেও তিনি অনেক ভাল বোলিং করেছেন। দীর্ঘদিন পর ফিরে অনেক ভাল নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।’ বর্তমান সময়ে ভারতের অন্যতম ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন অশ্বিন। অভিজ্ঞ হরভজনের সঙ্গে জুটি বেঁধে সেই ধারাবাহিকতা রাখতে তেমন সমস্যা হয়নি তার। দারুণ বোলিং করেছেন শুরু থেকেই। এবারই প্রথম তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু স্বাভাবিক নৈপুণ্যে সে কারণে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ ইনিংস প্রথম আঘাতটা তিনিই হেনেছিলেন ওপেনার তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দিয়ে। একে একে তিনি তুলে নেন সাকিব আল হাসান, অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, অভিষিক্ত লিটন দাস ও শুভাগত হোমকে। অশ্বিনের ঘূর্ণিজালে আটকেই বাংলাদেশের মিডলঅর্ডারে ধস নামে। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে দশমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করলেন এ ডানহাতি স্পিনার। তিনি ২৫ ওভার বোলিং করে ৮৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। মাত্র ২৫ টেস্ট খেলা অশ্বিনের ক্যারিয়ার শিকার সংখ্যা এখন ১২৪। জহির খান, ইরফান পাঠান ও সুনীল জোশির পর চতুর্থ ভারতীয় বোলার হিসেবে অশ্বিন ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। জহির দুই, পাঠান তিন ও জোশি একবার করে ইনিংসে উইকেট শিকার করেছেন। অশ্বিনের বোলিংয়ে অধিনায়ক কোহলিও দারুণ সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘অশ্বিন আমাদের খুবই কার্যকরী বোলার। তিনি দলের জন্য ভাল কিছু উপহার দেবেন এটা আমরা সবসময়ই প্রত্যাশা করি। সেটা তিনি এ ম্যাচেও করেছেন। দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলেছেন।’
×