ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডেল্টাপ্ল্যানে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৬ জুন ২০১৫

ডেল্টাপ্ল্যানে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পানিসম্পদ নিয়ে ১০০ বছরের পরিকল্পনা (ডেল্টাপ্ল্যান) বাস্তবায়নে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। তাছাড়া পর পর কয়েকবার প্রতনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর অবশেষে সমঝোতা চুক্তি হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নেদারল্যান্ডের ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন মিনিস্টার লিলিয়েন পলিউমেন, বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সালমান জায়দী এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইএসসি ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এ্যান্ডারস ব্যারেনটেল নিজ নিজ দেশ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করবেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা তৈরির বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে এবং এর আনুষঙ্গিক বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। বক্তব্য রাখবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আযম। এ বিষয়ে কাজী শফিকুল আযম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ডেল্টাপ্ল্যান ফর্মুলেশন এবং বাস্তবায়ন দুই ক্ষেত্রেই সহযোগিতা দিচ্ছে। আগে শুধু নেদারল্যান্ড যুক্ত থাকলেও এবার যোগ হলো বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসি। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে দীর্ঘমেয়াদী এ পরিকল্পনায় অংশীদার হচ্ছে বিশ্বব্যাংকও। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে ইআরডির পক্ষ থেকে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি ডেল্টাপ্ল্যানে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে (জিইডি) জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। পরবর্তীতে একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। সর্বশেষ গত ৭ ও ৮ জুন বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের অপর একটি প্রতিনিধি দল ডেল্টাপ্ল্যান নিয়ে ঢাকা সফর করে। এ সময় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে সরকার। জিইডি সূত্র জানায়, তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ডেল্টাপ্ল্যান তৈরি করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। এগুলো হচ্ছে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধার। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টাপ্ল্যান) তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে নেদারল্যান্ড। গত বছরের শুরুর দিকেই পরামর্শক দলটি তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। কাজ শুরুর আগে পরামর্শক দলের কাছে এ তিন বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছিল পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ বিষয়ে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মেকাবেলায় তৈরি হতে যাওয়া ডেল্টাপ্ল্যানে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিদেশী পরামর্শকদের কাছে এ তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ীই কাজ চলছে। এ বিষয়ে ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ডেল্টাপ্ল্যানের মধ্যে অনেক প্রকল্প থাকবে। সেসব বাস্তবায়নে অবশ্যই উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন প্রয়োজন। এ জন্যই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে। তারা কোন কোন ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে চায় সেসব বিষয়ে পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের পানিসম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ শীর্ষক এ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ড। এ জন্য ইতোমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় নেদারল্যান্ড এ পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। সূত্র জানায়, সরকার সাম্প্রতিক কয়েক দশকে পানিসম্পদ, কৃষি, ভূমি ব্যবহার, মৎস্য ও বনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা, নীতি, কর্মসূচী ও প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, হাওর মাস্টার প্ল্যান, এগ্রিক্যালচার মাস্টার প্ল্যান ফরা সাউদার্ন রিজিওন এবং জাতীয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এ পরিকল্পনাগুলো কাক্সিক্ষত হারে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছে না। একক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্বৈততার সৃষ্টি হয়ে সম্পদের অপচয় হচ্ছে। সে কারণেই ৫০ থেকে ১০০ বছর মেয়াদী একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত ইস্যুসমূহ যথাযথভাবে বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী এ পরিকল্পনা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা গেছে, পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণীত হবে। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রশাসন সম্পর্কে একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হবে। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করে করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সরকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও মান উন্নয়ন এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা হবে। পরিকল্পনার ফলে একই কাঠামোর আওতায় সার্বিক সমন্বিত আকারে সকল খাতে এর সুনির্দিষ্ট পলিসি ও প্ল্যান এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটবে। এতে সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় কর্মসূচীসমূহ আরও যৌক্তিক উপায়ে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে।
×