ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাসায়নিকের গুজব ॥ রাজশাহীতে ক্রেতাশূন্য আমবাজার

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৬ জুন ২০১৫

রাসায়নিকের গুজব ॥ রাজশাহীতে ক্রেতাশূন্য আমবাজার

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর আম নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ীরা। বাইরের পাইকার না আসায় এবং কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় বিপাকে দুই জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি দেশব্যাপী রাজশাহী ও চাঁপাইনববাগঞ্জের আমের সুখ্যাতি বিনষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ফলে নিরাপদ ও কেমিক্যালমুক্ত আম বাজারে এলেও ক্রেতাদের অনুপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার দুই জেলায় আম ব্যবসায়ীরা কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে এমনিতেই এবার ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে আম বাজারজাত করতে না পেরে ক্ষতির মুখে রয়েছেন। এবার বাজারে বিষমুক্ত আম থাকলেও এক শ্রেণীর পাইকারদের ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাগিং পদ্ধতিতে নিরাপদ আম উৎপাদন করেও এবার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তারা। কেমিক্যাল রয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে রাজশাহীর আমের সুনাম ক্ষুণœ করা হচ্ছে। জানা যায়, এবার বিষমুক্ত আম বাজারজাত করতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে চাষীরা ২৯ মের আগে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করতে পারেননি। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে একসঙ্গে অধিকাংশ আম পেকে যাওয়ায় বাজারজাত করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দূরদূরান্তের জেলাগুলোতে নিয়ে বিক্রি করার আগে আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাইকাররা এজন্য কিনতে উৎসাহী না হওয়ায় প্রচুর আম অবিক্রীত রয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন জাতের আমে মণপ্রতি চার থেকে ছয় শ’ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আড়তদার শহিদুল জানান, গত বছর ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ দরে ক্ষিরসাপাত আম বিক্রি হলেও এবার তা ১৩০০-১৫০০ টাকা মণে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে প্রচুর আম থাকলেও ক্রেতা তেমন নেই বলে আক্ষেপ করেন অনেক ব্যবসায়ী। রায়পাড়া আম বাগানের ইজারাদার হাসান জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জায়গা থেকে গত বছরগুলোতে পাইকার এলেও এবার তাদের দেখা নেই। বানেশ্বরের আম ব্যবসায়ী মঞ্জুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিগত বছরগুলোতে আম কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় তাতে ‘ফর্মালিন মেশাত’ অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু এবার প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় ফর্মালিন মেশানো যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। মূলত এ কারণেই এবার দূর থেকে আমের পাইকার আসছে না। ইজারাদার হাসান জানান, গত বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামে আম নিয়ে যাওয়ার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ফর্মালিন পরীক্ষা করে প্রচুর আম করে। এবারও ব্যবসায়ীরা পুলিশি অভিযানের ভয়ে আম কিনতে আসছেন না। এছাড়া ভারত থেকে প্রচুর আম আরও কম দামে আমদানি করায় রাজশাহীর আমের চাহিদায় ধস নেমেছে। শনিবার জেলার গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে গিয়ে দেখা গেছে আমের স্তূপ থাকলেও ক্রেতা নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্ষুদ্র আম ব্যসবায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান কামাল জানান, এবার আম নিয়ে চিন্তিত তারা। পাইকাররা না আশায় এবং রাজশাহী ও চাঁপাইয়ের আমে কেমিক্যালের গুজব ছড়িয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমের সুনাম রক্ষা করার জন্যই অপরিপক্ব আম যেন না পাঠায় এবং মেডিসিন যেন না দেয়। এছাড়া আম সংরক্ষণের জন্য কী করা যায় তা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি বলেন, আমের গুণগত মান রক্ষা করতে এবার প্রথম থেকেই সজাগ ছিল রাজশাহী প্রশাসন। অপরিপক্ব আম যাতে ওষুধ দিয়ে পাকিয়ে বাজারে ছাড়া না হয় সেজন্য আম পাড়ার সময়সূচী বেঁধে দেয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আর ফর্মালিন মিশিয়ে যেন আম বাইরে না পাঠায় সে দিকেও নজর রাখছে প্রশাসন।
×