ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বছরে অন্তত দুই শ’ বিচারক নিয়োগ এক্ষুনি প্রয়োজন ॥ আইন কমিশন চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৮ জুন ২০১৫

বছরে অন্তত দুই শ’ বিচারক নিয়োগ এক্ষুনি প্রয়োজন ॥ আইন কমিশন চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মামলা জট নিরসনে বিচার বিভাগে জরুরীভিত্তিতে প্রতিবছর অন্তত ২০০ বিচারক নিয়োগ প্রয়োজন। একই সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক নতুন বিচারক নিয়োগ এবং আইন কমিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৬ জুন ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, প্রায় ত্রিশ লাখ মামলা ও মোকদ্দমার ভারে বিচার বিচার বিভাগ ন্যুব্জ। ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। মাত্র ১৬-১৭শ’ বিচারকের পক্ষে এতসংখ্যক মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করা কখনই সম্ভব নয়। সর্বশেষ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও রিভিশনাল জরিপসংক্রান্ত ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল করার ফলে অতি অল্প সময়ে লাখ লাখ মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আরবিট্রেশন মোকদ্দমার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতেও বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। এছাড়া বিচারক স্বল্পতা, এজলাস সঙ্কট, ভৌত কাঠামো ও লজিস্টিক বিষয়াদির অপ্রতুলতাসহ নানাবিধ জর্জরিত বিচার বিভাগ। জনগণের ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা ও মানবাধিকার রক্ষায় বলিষ্ঠ, দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা পালনে পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে জনগণের আস্থা ও ভরসার জায়গায় হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে, যা রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভারসাম্য দুর্বল করে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মামলা জট নিরসনে বাজেটের কার্যকর কোন পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও নাগরিকদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগ মনোযোগের দাবি রাখে। প্রতিবছর মামলা মোকদ্দমা বিপুল সংখ্যায় বেড়ে যাচ্ছে; কিন্তু বিচার বিভাগে নতুন পদ সৃজন করা হচ্ছে না। নিয়োগপর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে পরিপূর্ণ একজন বিচারক হিসেবে আদালতে কাজ আরম্ভ করতে তিন বছর সময় প্রয়োজন হয়। ইতোমধ্যে নতুন মামলা দায়ের থেমে থাকবে না। বরং ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ এ সমস্যার প্রধান সমাধান। এ লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর অন্তত দুই শ’ নতুন বিচারক নিয়োগ দেয়া জনস্বার্থে জরুরী। ফলে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে নতুন বিচারকরা দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারবেন। এতে মামলা জটের ক্রমবৃদ্ধি কিছুটা হলেও হ্রাস প্রক্রিয়ার সূচনা করবে। অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে বিচার কর্মবিভাগ থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের মধ্য থেকে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ও সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। নতুবা মামলা মোকদ্দমায় জট বৃদ্ধির প্রবণতা কোনভাবেই নিম্নগামী করা যাবে না। উল্লেখ্য, বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি আইনী কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির এক দশক কাল অতিবাহিত হওয়ার পরও কেবল পারিবারিক আদালত ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে তেমন কোন সফলতা পরিলক্ষিত হয় না। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান চিঠিতে আরও বলেছেন, আইন কমিশন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এর একটি নিজস্ব ঠিকানা ও স্থাপনা প্রয়োজন। বর্তমানে ১৫ কলেজ রোডের বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের তিনটি তলায় বিক্ষিপ্ত অবস্থানে মাত্র সাতটি কক্ষে আইন কমিশনের কাজ চলছে। আইন কমিশনের আবাসন সমস্য স্থায়ীভাবে সমাধানের লক্ষ্যে বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের ১০ ও ১১ তলা উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করে যথাযথ পরিসরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কক্ষ নির্মাণের জন্য বাজেট বরাদ্দসহ আনুষঙ্গিক সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় স্বার্থে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল। তা ছাড়া আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির একটি সভায় অপরাপর কমিশনসমূহ আইন কমিশনের ব্যবহারের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এ সকল বিষয়ে কোন প্রতিফলন নেই। বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হলে একটি আস্থাশীল, কার্যকর ও গতিসম্পন্ন বিচার বিভাগ দেশের টেকসই ও স্থিতিশীল উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষ প্রয়োজন মর্মে উল্লেখ করে বাজেটে আইনের শাসন, মামলার জট ক্রমান্বয়ে লাঘবের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিচার বিভাগ সংক্রান্ত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির প্রতি দৃষ্টিপাত অতীব প্রয়োজন বলে আইন কমিশন মনে করে। কেন এই চিঠি দিলেন এই প্রশ্নের উত্তরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকে এই চিঠি লিখেছি। তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ হাজারে একজন বিচারক। ভারতে ৬৭ হাজারে একজন বিচারক। যদিও ওদের লক্ষ্য ২০ হাজারে একজন বিচারক। আমাদের দেশে ৯৫ হাজারের জন্য রয়েছেন একজন বিচারক।
×