ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের বিরুদ্ধে রেকর্ড রান টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৯ জুন ২০১৫

ভারতের বিরুদ্ধে রেকর্ড  রান টাইগারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েই চলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। টেস্ট (৩০৫৫) ও ওয়ানডেতে (৪৪৯৭) বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান, টেস্ট (৭ শতক) ও ওয়ানডেতে (৬ শতক) সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড গড়েছেন তামিম। আগেই ওয়ানডেতে ২৯ অর্ধশতক করে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্ধশতক করেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আরেকটি অর্ধশতক করলেন। এ রেকর্ড আরও মজবুত করছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান (৪৮৬) করার রেকর্ডও এখন তামিমের। তবে শুরু থেকে যেভাবে রানের ফোয়ারা দেখা গিয়েছে বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, তামিম ৬০ রানে আউট হতেই খানিক সময় তা উধাও হয়ে যায়। এরপর আবার সাকিব (৫২), সাব্বির (৪১), নাসির (৩৪), মাশরাফির (২১) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ ৩০৭ রান যুক্ত করে। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ৩০০ রান করার রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। শুরুতেই তামিম-সৌম্য মিলে ঝড় তুললেন। এমনই অবস্থা হয়েছে, মনে হয়েছে ৩০০ রান করা বাংলাদেশের কাছে কিছুই না। মাঝপথে গিয়ে একটু থমকে দাঁড়াল বাংলাদেশের স্কোর। তবে আবার দ্রুতগতিতে রান উঠল। বৃষ্টিতে টেস্ট ড্র হয়েছে। তবে বোঝা গেছে, বৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ হারতেও পারত। সেই দলটিই ওয়ানডেতে খেলতে নেমে কী দুর্বার ব্যাটিং করতে শুরু করে দিল! বাংলাদেশ টস জিতে আগে ব্যাট করল। তামিম-সৌম্য মিলে এমন ধুন্ধুমার ব্যাটিং করা শুরু করলেন ১৪ ওভার চলতেই ১০০ রান বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে গেল। দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন দুই ওপেনার। ৩৮ বলে গিয়ে মোহিত শর্মার বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অর্ধশতকও করেন সৌম্য। অঘটনটি ঘটল ১০২ রান হতেই। সৌম্যের তখন ৫৪ রান। তামিম-সৌম্যের ভুলবোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে গেলেন সৌম্য। মোহিতের ইয়র্কার বলটি তামিম ঠেকান। বল যায় শর্টে। তামিম রান নিতে একটু এগিয়ে যান। সৌম্য যখন রান নিতে দৌড়ে আসতে থাকেন তামিম আবার ফিরে যান। রায়না বলটি হাতের কাছে পেয়ে সরাসরি উইকেটে মারেন। লেগেও যায়। রান আউট হয়ে যান সৌম্য। তবে আউট হওয়ার আগে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ জুটিই গড়ে যান সৌম্য। ভারতও যেন এ উইকেটটি নিতে পেরে অনেক সন্তুষ্ট হয়। কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি নামে। যে বৃষ্টি নিয়ে ভয় ছিল, সেটিই হলো। বাংলাদেশ যখন ১ উইকেটে ১১৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছে, তখনই বৃষ্টি নামে। এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। ৪টা বেজে ৬ মিনিটে বৃষ্টি শুরু হয়। তখন খেলাও বন্ধ হয়ে যায়। আবার ৫টা বেজে ১০ মিনিটেই খেলা শুরু হয়। ততক্ষণে তামিমও অর্ধশতক করে ফেলেন। ১০ রানে যাদবের বলে প্রথম সিøপে আউট থেকে বাঁচেন তামিম। সেই সুযোগ পেয়ে যাদবের এক ওভারে তিন চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়ে ১৮ রান নেন। অর্ধশতকও করেন। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরই বিপত্তি শুরু হয়। বৃষ্টি হওয়ার আগে তামিমের স্কোরবোর্ডে ৫৭ রান জমা থাকে। খেলা আবার শুরু হওয়ার পর আর ৩ রান যোগ করতেই আউট হয়ে যান তামিম। বৃষ্টির আগে এক তামিমকে দেখা গেছে। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ায় যেন মনোযোগেও ব্যাঘাত ঘটে। তাতে আরেক তামিমকেই মিলেছে। রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলটি লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই রোহিত শর্মার তালুবন্দী হন তামিম। বাংলাদেশের ছন্নছাড়া ব্যাটিংও যেন শুরু হয়ে যায়। যে দলটি ১০২ রানের আগে কোন উইকেটই হারায়নি। সেই দলটিই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। ১২৩ রানে তামিম আউটের পর ১২৯ রানে অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা লিটন কুমার দাস (৮), ১৪৬ রানে মুশফিকুর রহীমও (১৪) আউট হয়ে যান। অশ্বিন ৩ উইকেট নিয়ে ফেলেন! দল তখন ২৫০ রান করতে পারবে কি না সেই প্রশ্নও উঠে যায়। কিন্তু সাকিব-সাব্বির মিলে বড় জুটি গড়তে থাকেন। দলও ৩৪.১ ওভারে ২০০ রান করে ফেলে। পঞ্চম উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন সাকিব-সাব্বির। সেখানেই দল ২২৯ রানে পৌঁছে যায়। এমন সময় সাব্বির (৪১) আউট হয়ে যান। সাকিবও ক্যারিয়ারের ২৯তম ওয়ানডে অর্ধশতক তুলে নেন। সাব্বির আউটের পর সাকিব-নাসির মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। ৪১ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশ ২৫০ রানও করে ফেলে। বাংলাদেশ যখন ২৬৭ রানে তখন সাকিবও আউট হয়ে যান। তবে আউটের আগে ৫২ রান করে যান। যা বিপদগ্রস্ত দলকে অনেক ভাল অবস্থানে নিয়ে যায়। এরপর নাসির দুর্দান্ত ব্যাটিং উপহার দেন। ২৮২ রানে আউট হওয়ার আগে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। রুবেল ব্যাট হাতে নেমে একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েই আউট হয়ে যান। দল তখন ৩০০ রান করা থেকে ১৪ রান দূরে থাকে। ৮ উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের। মাশরাফি একটি বাউন্ডারি হাঁকান। আর ৭ রান হলেই ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করবে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ২৯৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। যা ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ছিল। ১ রান নেন মাশরাফি। তাসকিনও ১ রান নেন। আর ৫ রানের অপেক্ষা থাকে। ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডেই যেন সবার আগে মনোযোগ থাকে। মাশরাফি ২ রান নেন। লাগে আর ৩ রান। ২ ওভার থাকে। এমন সময় মাশরাফি ২ রান নেন। লাগে আর ১ রান। উইকেটের পেছনে হয়ে যায় এক রান। ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। তখন সবার নজর ৩০০ রানের দিকে থাকে। তাসকিন ২ রান করতেই আউট হয়ে যান। তখন আর ২ রানের অপেক্ষা থাকে। উইকেট থাকে ১টি। বল থাকে ৭টি। ওভারও শেষ হয়। শেষ ওভারে মাশরাফি দ্বিতীয় বলেই মোহিতকে বাউন্ডারি হাঁকান। প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে ৩০০ রানও করে ফেলে বাংলাদেশ। শেষপর্যন্ত ৪৯.৪ ওভারে ২১ রান করা মাশরাফি আউট হতেই ভারতের সামনে ৩০৮ রানের টার্গেট দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
×